E-Paper

জনাদেশ আনতে কী ভাবে কাজ, হেঁশেলে সেই শাহ

রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক জেলাগুলিকে কিছু ‘ডিভিশনে’ ভেঙে নিয়ে কর্মিসভা করে করে ১৬০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৮
অমিত শাহ।

অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবের তখন ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ চলছে। সাড়া মিলছে ভাল, প্রচারও জুটছে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব সেই সময়ে তাঁর কাছে গিয়ে বলেছিলেন, শাসক শিবিরের তরফে এমন কিছু বড় কর্মসূচি নিতে হবে। কিন্তু তাঁর পরামর্শ ছিল, রাস্তায় ‘শো’ করার চেয়ে বুথে নজর দেওয়া বেশি জরুরি। সংগঠনের হেঁশেল সামলানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন। বিহারে এনডিএ-র বিরাট জয়ের নেপথ্যে কারিগর হয়ে থেকে গেলেন সেই অমিত শাহই।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাজের ফিরিস্তি নিয়ে জনতার দরবারে ঘুরছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আর তারই মধ্যে রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক জেলাগুলিকে কিছু ‘ডিভিশনে’ ভেঙে নিয়ে কর্মিসভা করে করে ১৬০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সংগঠনে কোথায় নজর দিতে হবে, প্রচারে কোন বিষয়ে জোর দিতে হবে, সে সব উপদেশও দিয়ে রেখেছিলেন দফায় দফায়। বিহারে সাফল্যের পরে শাহ কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাঁর দলের সৈনিক ও সেনাপতিদেরই।

শুধু বিজেপি নয়, এনডিএ-র নামে কর্মিসভা করার ব্যবস্থা এ বার হয়েছিল বিহারে। জোটকে শক্তিশালী করার জন্য এই পথে যাওয়ার কথা দলের নেতাদের বলেছিলেন শাহ। বিজেপি-জেডিইউ’এর মধ্যে আসন ভাগের ফয়সালা, চিরাগ পাসোয়ান বা জিতন রাম মাঞ্ঝিদের দাবি-দাওয়া সামাল দেওয়ার নেপথ্যেও তিনি। দিল্লির সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের জেরে বিরোধীদের তোপের মুখে থাকলেও বিজেপি শিবিরে উপর থেকে নীচের তলা পর্যন্ত ভোট-যন্ত্রের ব্যবস্থাপনায় শাহ যে অদ্বিতীয়, বিহারের পরে তা নিয়ে ফের একমত সব মহলই। বিজেপি সূত্রের ইঙ্গিত, বিহারের পরে এ বার পশ্চিমবঙ্গে নজর ঘোরাবেন শাহ। বিজেপি শিবির তা-ই নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহিতও। এই রাজ্যে অতীতের ভোটে শাহের ভবিষ্যদ্বাণী যে কাজ করেনি, তার দায় তাঁদের নিজেদের বলে মেনে নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘স্বাধীন ভারতের সব চেয়ে বড় ভোট-কুশলী’র নাম শাহ! তাঁর নির্দেশমাফিক যা যা করার, সবই হবে।

বিহারের পরিশ্রমের জন্য শুক্রবার দলের রাজ্য নেতা থেকে শুরু করে বুথ স্তরের কর্মীদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন শাহ। ‘বিকশিত বিহার’ গড়ার লক্ষ্যের পাশাপাশি মা-বোনেদের ‘আস্থার মর্যাদা’ রাখার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গেই তাঁর মত, ‘‘জঙ্গলরাজ ও তোষণের রাজনীতি করার লোকজন যে বেশ ধরেই আসুন, তাঁদের আর লুটের সুযোগ মিলবে না! এখন কেবল ‘পলিটিক্স অফ পারফরম্যান্স’-এর ভিত্তিতে জনাদেশ হয়।’’

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিতর্ক এবং রাহুলদের তোলা ‘ভোট চুরি’র অভিযোগের আবহে এনডিএ-কে বিহারের নির্বাচনে বিরোধীদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রাখতে চেয়ে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধেছিলেন শাহ। গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে থাকা এলাকায় দলের নেতাদের ৫ থেকে ১০% (অঞ্চল ভিত্তিতে) ভোট বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। লক্ষ্য অর্জনের পরে বিহার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জায়সওয়াল বলছেন, ‘‘এটাই আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষত্ব। তিনি কৌশল ঠিক করে দিয়েছেন। তখনই বলেছিলেন, কর্মীরাই বিজেপির ‘মালিক’, তাঁরাই নির্বাচনে জয় আনেন। নেতা-কর্মীরা সেই মতোই প্রাণপাত করেছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

NDA BJP Amit Shah Bihar Assembly Election 2025 Bihar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy