Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বুরুডিহতে উদ্ধার মমতা-বিরোধী মাওবাদী পোস্টার

কোনও পোস্টারে বাংলায় লেখা—‘মা, মাটি, মানুষের স্লোগানের আড়ালে মমতার ফ্যাসিবাদী শাসনে বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলুন।’ কোনও পোস্টারে আবার লেখা: ‘লালগড়ের মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতোর অনুগামীদের শাস্তির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন।’ কোনও পেস্টারে আবার ২১ সেপ্টেম্বর সিপিআই-মাওবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করার ডাক।

ঘাটশিলার মাওবাদী শিবির থেকে উদ্ধার হওয়া পোস্টার। শুক্রবার জামশেদপুরে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

ঘাটশিলার মাওবাদী শিবির থেকে উদ্ধার হওয়া পোস্টার। শুক্রবার জামশেদপুরে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১৮
Share: Save:

কোনও পোস্টারে বাংলায় লেখা—‘মা, মাটি, মানুষের স্লোগানের আড়ালে মমতার ফ্যাসিবাদী শাসনে বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলুন।’ কোনও পোস্টারে আবার লেখা: ‘লালগড়ের মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতোর অনুগামীদের শাস্তির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন।’ কোনও পেস্টারে আবার ২১ সেপ্টেম্বর সিপিআই-মাওবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করার ডাক।

ঘাটশিলার বুরুডিহ লেকের কাছে চিকরি গ্রাম লাগোয়া পাহাড়ে মাওবাদীদের ডেরা থেকে এ রকম বেশ কিছু পোস্টার উদ্ধার করেছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ। গত কাল বিকেল থেকে মাওবাদীদের সঙ্গে পুলিশ ও সিআরপিএফ জওয়ানদের যৌথ বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ হয়। অনেকক্ষণ ধরে চলে গুলির লড়াই। জঙ্গিরা সবাই পালিয়ে গেলেও তাদের শিবির থেকে এই ধরনের বিভিন্ন পোস্টার, রাইফেল, পিস্তল, প্রচুর বিস্ফোরক, জিলেটিন স্টিক, এমনকী দৈনন্দিন ব্যবহারের নানা জিনিস, যেমন—থালা, বাটি, কড়াই, জুতো, ডায়েরি, জামাকাপড়ও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পূর্ব সিংভুম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নকশাল অভিযান) শৈলেন্দ্র বর্নওয়াল বলেন, ‘‘এর মধ্যে যে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উদ্ধার হয়েছে সেটা পুলিশের চুরি যাওয়া রাইফেল। রাইফেলটি শিলদার পুলিশ ক্যাম্প থেকে চুরি যাওয়া রাইফেল বলেই আমাদের অনুমান। মাওবাদী নেতা রঞ্জিত পাল ওরফে রাহুলের দলের লোকেরাই ওই জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।’’

চিকরি গ্রামের ওই পাহাড় থেকে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমা মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। ঘটনাস্থল থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ির কাকরাঝোড়ের দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের জুগিডিও চিকরি থেকে ন’কিলোমিটার দূরে। রাহুলের নেতৃত্বে এই দলটি প্রায়শই ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যাতায়াত করে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পশ্চিমবঙ্গ বা ঝাড়খণ্ডের কোথাও বড়সড় হামলা ঘটানোর পরিকল্পনায় এই দলটি এখানে ঘাটি গেড়েছিল কিনা তা জানতে উদ্ধার হওয়া ডায়েরি খুটিয়ে পড়া শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিরোধী প্রচারকে জোরদার করতে পোস্টার লেখার কাজ চলছিল। লক্ষ্য ছিল সরকার বিরোধী পোস্টার লাগিয়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায় করা। মাওবাদী নেতা আকাশ চিকরিতে রাকেশজি নামে গোটা প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত। তাঁর নেতৃত্বেই চিকরিতে গড়ে উঠেছিল মাওবাদীদের অস্থায়ী আস্তানা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামে মাওবাদীদের আনাগোনা রয়েছে। যদিও যৌথ বাহিনীর নজরদারি এড়াতে মাওবাদীরা রাতে ফের ঝাড়খণ্ডে ফিরে যাচ্ছে বলে খবর। গত কাল বিকেলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে চিকরি গ্রাম লাগোয়া পাহাড় ও জঙ্গল চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে যৌথ বাহিনী। পালাবার পথ নেই দেখে মাওবাদীরাও গুলি চালাতে শুরু করে। শুরু হয় গুলির লড়াই। চিকরির বাসিন্দাদের কথায়, কয়েক ঘন্টা তারা টানা গুলির আওয়াজ শুনেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ১০ থেকে ১২ জন মাওবাদী জঙ্গি পুলিশকে লক্ষ করে কমপক্ষে ২০০ রাউন্ডের উপর গুলি চালায়। ওই দলের মধ্যে দুই মহিলা ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। একজন মহিলার গায়ে গুলি লাগলেও আহত অবস্থাতেই সে পালিয়ে যায় বলে পুলিশের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE