Advertisement
E-Paper

খুদেদের স্কুলে ফেরাতে কাশ্মীরে সেনার ‘স্কুল চলো’ অভিযান

চার মাস হয়ে গেল। কাশ্মীরের খুদেরা সেই বাড়ি-বন্দি। একের পর এক স্কুল বিক্ষোভের আঁচে পু়ড়ছে। পড়াশোনা শিকেয়। কবে স্কুল খুলবে, ফের কবে সেখানে পড়াশোনা শুরু হবে, কেউ জানে না।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১১
অবন্তিপোরার এক অস্থায়ী স্কুল। রবিবার। ছবি: পিটিআই

অবন্তিপোরার এক অস্থায়ী স্কুল। রবিবার। ছবি: পিটিআই

চার মাস হয়ে গেল। কাশ্মীরের খুদেরা সেই বাড়ি-বন্দি। একের পর এক স্কুল বিক্ষোভের আঁচে পু়ড়ছে। পড়াশোনা শিকেয়। কবে স্কুল খুলবে, ফের কবে সেখানে পড়াশোনা শুরু হবে, কেউ জানে না। নিরাপত্তার আশঙ্কায় মা-বাবারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। অথচ ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের চিন্তারও শেষ নেই।

এই অবস্থায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। ‘স্কুল চলো’ অভিযান শুরু করে ফের বইয়ের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে ভূস্বর্গের কচিকাঁচাদের।

জুলাইয়ের গোড়ায় সেই যে অশান্তি শুরু হয়েছিল, তার জেরে দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তামাম কাশ্মীর উপত্যকা। হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে গত ক’মাসে স্থানীয় যুবকেরা নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। ছররার ঘায়ে জখম বহু কাশ্মীরি যুবক এখনও হাসপাতালে ভর্তি। কারও দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে এসেছে। কেউ গোটা চোখটাই হারিয়েছে।

পাথর ছোড়া রুখতে নিরাপত্তাবাহিনীর ছররা ব্যবহার নিয়ে বিতর্কে যখন তুঙ্গে, ঠিক সেই সময়, গত অগস্টে ‘কাম ডাউন’ অভিযান শুরু করেছিল সেনা। উদ্দেশ্য— যতটা সম্ভব কম বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমন। তাতে কিছু সাফল্যও মিলেছে। আর তার অনুপ্রেরণাই ভিত গেড়েছে ‘স্কুল চলো’ অভিযানের। যার মাধ্যমে ফৌজিরা কোমর বেঁধেছেন শিশুদের পড়াশোনা ফের চালু করার জন্য। যখন বিক্ষোভকারীদের হাতে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে একের পর এক স্কুল, এর পরিণতি যে ভয়ঙ্কর, সেনার তরফে কাশ্মীরবাসীকে তা বোঝানোর চেষ্টা চলছে পুরোদমে। উপত্যকা এখন ছেয়ে গিয়েছে ভারতীয় সেনার পোস্টারে। যাতে শিশুদের ভাষ্যে স্থানীয় ভাষায় লেখা— ‘টাকা আর খ্যাতি চাই না। চাই বই আর স্কুল।’

অবন্তিপোরা এলাকার ভিক্টর ফোর্সের কম্যান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল অশোক নারুলা জানিয়েছেন, স্কুলের বাইরে অন্য কোথাও জায়গা করে শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খরচ করতে হবে না এক পয়সাও। শেখানো হবে আঁকা, নাচ-গান ইত্যাদি। পরিকল্পনা রূপায়ণের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকার খোঁজও চলছে বলে জানিয়েছেন মেজর।

সেনা-কর্তৃপক্ষের দাবি, ফৌজি উদ্যোগকে দু’হাত তুলে স্বাগত জানাচ্ছেন অভিভাবকেরা। নারুলা বলেন, ‘‘বাড়ির ছেলে-মেয়েরা স্কুল না-গিয়েও পড়াশোনার জগতে ফিরতে পারছে, এটাই মা-বাবার কাছে বড় ভরসার জায়গা।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দাও বললেন, ‘‘এ তো খুব ভাল কাজ হচ্ছে। আমরা নিশ্চিন্ত হব।’’ প্রসঙ্গত সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, গত এক মাসে ৩১টিরও বেশি স্কুল পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

কয়েক মাস ধরে চলা অস্থিরতায় সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ান, পুলওয়ামা, অনন্তনাগ, কুলগামের মতো এলাকা। সীমান্তের ও-পার থেকে সংঘর্ষ-বিরতি লঙ্ঘনের পরে সীমান্ত-লাগোয়া কিছু এলাকাতেও বন্ধ স্কুল। এই অবস্থায় অনেক বিতর্কের পরে মাত্র ক’দিন বাদেই শুরু হতে চলেছে দশম আর দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা। কিন্তু বড়রা পরীক্ষা দিতে পারলেও খুদেরা কবে স্কুলে ফিরতে পারবে, প্রশাসন এত দিন সে নিশ্চয়তা দিতে পারছিল না। ‘স্কুল চলো’ অভিযানে সেই অনিশ্চয়তা খানিকটা কাটানো গিয়েছে বলে দাবি করেছেন সেনা-কর্তৃপক্ষ।

‘‘আমিও দুই সন্তানের বাবা। ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার থাকলে কতটা অসহায় লাগে, বিলক্ষণ বুঝি। এক জন বাবা হিসেবেই চাইছি, পাথরের বদলে খুদেরা হাতে ফের বই-খাতা তুলে নিক,’’— বলছেন মেজর নারুলা।

Army school for children
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy