দিল্লির সেই চাট। পিটিআই
‘আদিম রাতের চাঁদিম হিম’ মেশানো চাট খেয়েছেন? যদি না খেয়ে থাকেন, বাক্স-প্যাঁটরা বেঁধে উঠে পড়ুন ‘রাজধানী’তে। শীত চলে যাওয়ার আগে ঘুরে আসুন দিল্লির চাঁদনি চক থেকে। চেখে আসুন সেখানকার বিখ্যাত ‘দৌলত কি চাট’। তবে যখন-তখন নয়, কেবল শীতকাল জুড়েই পুরনো দিল্লির হাতে গোনা আনাচে-কানাচে মেলে সেই দৌলত।
যে সব কুয়াশা-মোড়া রাতে পারদ নামবে তরতরিয়ে। রেশমি চাঁদের আলোয় ভরে উঠবে আশপাশ। দিল্লির এক দল রাঁধুনি এক কড়াই কাঁচা দুধ নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন। চাঁদনি আলোয় রেখে সেটাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নাড়তে হবে। সারা রাত ধরে ঝরে পড়া শিশিরের ফোঁটায় ফেনায়িত হয়ে উঠবে দুধ। সেই দুধকেই লালচে ঘন করে তাতে মেশাতে হবে গুঁড়ো চিনি, ড্রাই ফ্রুটস, এলাচের গুঁড়ো আর কেশর। সঙ্গে কিছুটা কল্পনা আর কিংবদন্তি— সমান মাপে মেশালেই তৈরি আপনার ‘দৌলত কি চাট’।
শীতের দিনে পুরনো দিল্লির আনাচে-কানাচে ঝাঁকা নিয়ে বিক্রি হয় সেই চাট। ব্যস্ত শহরে ভিড় উপচে পড়ে চাট চাখতে। কানপুরে এর নাম ‘মালাই-মাখন’, বারাণসীতে ‘মালাইয়ু’, লখনউয়ে ‘নিমিশ’।
দিল্লির পরাঠেওয়ালি গলিতে দাঁড়িয়ে বিগত ৪০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় ‘দৌলত কি চাট’ চাখিয়ে আসছেন আদেশ কুমারের পরিবার। আদেশই জানালেন রেসিপি।
কোনও এক হিমেল শীতের রাতে চাঁদের আলোয় শুরু হয়েছিল পরম্পরা। তার পর থেকে তা চলে আসছে দশকের পর দশক ধরে। আদেশ জানালেন, শুনতে সহজ লাগলেও মোটেই ততটা সহজ নয় বানানো। ‘দৌলত’-কাল চলাকালীন প্রতি রাতে চার ঘণ্টাও ঘুমোতে পারেন না রাঁধুনিরা। ৩০ বছর ধরে নিজের হাতে চাট বানিয়ে আসছেন আদেশের বাবা ক্ষেমচাঁদ।
দু’ঝাঁকা ‘দৌলত কি চাট’ বানাতে প্রতিদিন ৪০ কেজি মতো দুধ লাগে। ছোটো এক বাটি চাটের দাম ৫০ টাকা।
তবে এত যে পরিশ্রম, যথাযথ দাম কি মেলে?
আদেশের কথায়, ‘‘দৌলত কি চাট বানিয়েই পাঁচ সন্তানকে বড় করেছি। পড়াশোনা শিখিয়েছি। ফলে বলতেই পারেন, বেঁচে থাকার জন্য এই উপার্জন যথেষ্ট। তবে নিজেদের একটা চাটের স্থায়ী দোকান যে করব, তেমন আয় দৌলত বেচে হয় না।’’
সেই চিন্তাতেই রোজ রাত গড়ায়। ‘দৌলত’-এর ফাঁকা বাটিতে জমতে থাকে শীতল শূন্যতা। কাজ শেষ হয় না আদেশদের। বিক্রিবাটা সেরেই আবার দৌড়ন সারা রাত ধরে হিমেল চাঁদের ‘দৌলত’ বানাবেন বলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy