Advertisement
E-Paper

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জারির শপথ

নোট নাকচের ধাক্কায় জখম আমজনতার মন ফিরে পেতে মলমের ব্যবস্থা করতে হল ঠিকই। কিন্তু তা বলে কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাঠ ছাড়ার যে প্রশ্ন নেই, বাজেটে সে কথা স্পষ্ট করে দিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০৭
সংসদে বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ছবি: সংগৃহীত।

সংসদে বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ছবি: সংগৃহীত।

নোট নাকচের ধাক্কায় জখম আমজনতার মন ফিরে পেতে মলমের ব্যবস্থা করতে হল ঠিকই। কিন্তু তা বলে কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাঠ ছাড়ার যে প্রশ্ন নেই, বাজেটে সে কথা স্পষ্ট করে দিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

এই যুদ্ধে জিততে মোদী সরকার কতটা একবগ্গা, তা বোঝানোর জন্য বাজেটজুড়ে বিভিন্ন ঘোষণা রইল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। যেমন বলা হল, ৩ লক্ষ টাকার বেশি নগদ লেনদেন আর করাই যাবে না। হাত দেওয়া হল রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার পদ্ধতি সংস্কারে। নগদ আদান-প্রদান কমাতে বাড়তি সুবিধার গাজর ঝোলানো হল কিছু ডিজিটাল লেনদেনে। রীতিমতো পরিসংখ্যান তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আভাস দেওয়ার চেষ্টা করলেন যে, এ দেশে আসলে কর ফাঁকি দেন কত মানুষ।

জেটলির দাবি, নোট বাতিলের ‘সাহসী’ সিদ্ধান্তের দৌলতেই এখন ঋণে সুদ কমাতে পারছে ব্যাঙ্কগুলি। প্রায় ৩৫% বেড়েছে আয়কর আদায়। আগামী দিনেও ওই পদক্ষেপের কারণে দুর্নীতি কমবে। করের আওতায় আসবেন অনেক বেশি মানুষ। কারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তার হদিস পাওয়া সহজ হবে। বাড়বে ডিজিটাল লেনদেন। এমনকী বছরে আড়াই থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে করের হার ১০% থেকে কমিয়ে ৫% করা যে সম্ভব হল, তার ‘কৃতিত্ব’ও সেই নোট নাকচকে দিয়েছেন তিনি। অর্থমন্ত্রীর মতে, কারা কর দেন না, এত দিনে তার হদিস মিলছে। সেই কারণেই বোঝা কমানো যাচ্ছে ‘সৎ’ করদাতাদের কাঁধ থেকে।

বাস্তবে এই সমস্ত দাবির সারবত্তা কতটা, বিরোধীরা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তবে কেন্দ্র যে দুর্নীতি কিংবা কালো টাকার সঙ্গে আপোস করবে না, উত্তরপ্রদেশ সমেত পাঁচ রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভোটের মুখে সেই মোক্ষম রাজনৈতিক বার্তাটি দিতে এ দিন জেটলি সফল হয়েছেন বলে মনে করছেন বিজেপির অনেকে। তাঁর বাজেট পেশের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছেন, ‘‘সরকার যে দুর্নীতি ও কালো টাকার সমস্যা নির্মূল করতে দায়বদ্ধ, সেই বিষয়টি বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে।’’ তাঁর মতে, দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে স্বচ্ছ করবে ৮ নভেম্বরের নোট নাকচ ও এই বাজেটের যুগলবন্দি।

চূড়ান্ত হিসেব এখনও আসেনি।

দশে দশ। বাজেট শুনে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে বললেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মেয়ে সোনালি এবং স্ত্রী সঙ্গীতা। ছবি: প্রেম সিংহ।

কিন্তু নোট বাতিলের পরে অন্তত ৩-৪ লক্ষ কোটি কালো টাকা ব্যাঙ্কে আর ফিরবে না বলে কেন্দ্রের যে আশা ছিল, তা মেটার সম্ভাবনা কম। ধোপে টেকেনি জাল নোট আটকানো কিংবা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াইয়ের তত্ত্ব। মুখ বাঁচাতে সরকার প্রথমে বিনা নগদের (ক্যাশলেস) ও পরে কম নগদের (লেস ক্যাশ) অর্থনীতির কথা বলেছে। কিন্তু আর্থিক সমীক্ষাতেই অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করার অন্যতম দাওয়াই হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে নোটের জোগান দ্রুত স্বাভাবিক করার কথা!

অনেকে বলছেন, এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও আসলে রাজনৈতিক ফায়দার গন্ধ পেয়েছে কেন্দ্র। বিস্তর অসুবিধা সয়েও খালি এটিএম আর ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে আমজনতা যে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছেন, তার অন্যতম কারণ নোট বাতিলের দৌলতে কালো টাকা নির্মূল হবে বলে তাঁদের আশা। পাড়ার যে অসৎ প্রোমোটার কিংবা ডাক্তার ঠিকমতো কর দেন না, এ বার তাঁদের অন্তত হেস্তনেস্ত হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন সাধারণ মানুষ।

২০১৪ সালে দিল্লির মসনদ দখলের জন্য মোদীর অন্যতম স্লোগান ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাঁচ রাজ্যের ভোট তো বটেই, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই জেহাদকেই প্রধান হাতিয়ার করতে চাইছেন মোদী।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’, ‘স্কিল ইন্ডিয়া’র মতো একের পর এক প্রকল্প ঘোষণার পরেও বিনিয়োগ সে ভাবে আসেনি। নতুন কর্মসংস্থানের সংখ্যা সরকারি প্রতিশ্রুতির ধারেকাছে নয়। বাজারে চাহিদা যেটুকু মুখ তুলতে শুরু করেছিল, নোটবন্দির গুঁতোয় তা-ও এখন তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে মোদী-জেটলি জুটি বিলক্ষণ বুঝছেন যে, এই চোট সহজে সারবে না। অর্থনীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে ভোগাবে। আর তাই আগামী ভোটের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হিসেবে এখন থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাছোড় লড়াইকে তাঁরা তুলে ধরতে চাইছেন, এমনটাই ধারণা ওই পর্যবেক্ষকদের।

এই প্রেক্ষিতেই অরুণ জেটলি বলেছেন, আরও বেশি মানুষকে করের জালে আনতে চান তিনি। সরকারি বেঞ্চের বিপুল টেবিল চাপড়ানির মধ্যে এ দিন ‘কর ফাঁকির পরিসংখ্যান’ তুলে ধরেছেন জেটলি। বলেছেন, দেশে ব্যক্তিগত ভাবে যে ৭৬ লক্ষ করদাতা বছরে পাঁচ লক্ষের বেশি টাকা রোজগার হিসেবে দেখান, তাঁদের মধ্যে ৫৬ লক্ষই বেতনভুক্‌। সুতরাং তার বাইরের সংখ্যাটা নেহাতই কম। বছরে রোজগার ৫০ লক্ষের বেশি, রিটার্নে এমন কথা কবুল করেছেন মাত্র ১ লক্ষ ৭২ হাজার জন। অথচ সেখানে গত পাঁচ বছরে দেশে গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ২৫ লক্ষ! ২০১৫ সালে কাজের সূত্রে বা বেড়াতে বিদেশে গিয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা দু’কোটি! এই পরিসংখ্যানগুলি দিতে গিয়ে জেটলি এ দিন সাফ বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে লোকে কর দিতে চায় না।’’ এই কথাটা স্মরণকালের মধ্যে কোনও অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় এতটা পরিষ্কার ভাবে বলেননি।

Union Budget Arun Jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy