এক সময়ে তিনি ছিলেন অরবিন্দ কেজরীওয়ালের ডান হাত। ক্ষমতায় আসার আগে বা পরে কার্যত সর্বত্র একসঙ্গে দেখা যেত দু’জনকে। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলতেন, জেলেও তো গিয়েছিলেন দু’জনে একসঙ্গে! সেই মণীশ সিসৌদিয়া এ বারের দিল্লি বিধানসভার ভোট-প্রচারে কার্যত নিখোঁজ।
গোটা প্রচার-পর্বে সেই অর্থে কেজরীওয়ালের সঙ্গে মণীশকে দেখা যায়নি বললেই চলে। মণীশের বিরুদ্ধে আবগারি দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি শিক্ষাজগতের কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা ধার করে ছেলেকে কানাডায় পড়তে পাঠানোর অভিযোগও ওঠে। তা ভাল ভাবে নেননি কেজরীওয়াল। সূত্রের মতে, ভোট-প্রচারে মণীশ সঙ্গী হলে অস্বস্তিকর প্রশ্ন ওঠা, দলের ভাবমূর্তিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার মতো আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারেননি তিনি। সেই কারণে মণীশের পরিবর্তে এ যাত্রায় কেজরীওয়ালের দু’পাশে ছায়ার মতো দেখা যাচ্ছে দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অতিশী এবং দলের রাজ্যসভার সাংসদ
সঞ্জয় সিংহকে।
শুধু তা-ই নয়, মণীশের দু’বারের জেতা বিধানসভা কেন্দ্রও পাল্টে ফেলা হয়েছে। পূর্ব দিল্লির পটপরগঞ্জ থেকে সরিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির জঙ্গপুরা কেন্দ্রে। কিন্তু ওই কেন্দ্রে ত্রিমুখী লড়াইয়ে মণীশ আদৌ জিতবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে রাজনীতিকদের। কেজরীওয়াল অন্যান্য কেন্দ্রে প্রচারে গেলেও এখনও মণীশের কেন্দ্রে সে ভাবে প্রচারে যেতে দেখা যায়নি তাঁকে। সূত্রের মতে, মণীশের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ পটপরগঞ্জের মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল। বিশেষত, দেড় কোটি টাকা খরচ করে ছেলেকে কোনও দলীয় নেতার বিদেশে পড়তে পাঠানো যে আম আদমি পার্টির মতো দলের নীতির সঙ্গে মেলে না, এমন পর্যবেক্ষণও সমীক্ষায় উঠে আসে। এর পরেই মণীশকে পটপরগঞ্জ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপির আইটি শাখার নেতা অমিত মালবীয়ের প্রশ্ন, ‘‘কেন কোনও প্রতিষ্ঠানের বদলে ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ধার নিলেন সিসৌদিয়া?’’ বিজেপির বিস্ফোরক অভিযোগ, মণীশ যাঁদের কাছ থেকে টাকা ধার করেছিলেন, তাঁরাই পরে পঞ্জাবের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। বিরোধীদের আরও প্রশ্ন, কেজরীওয়াল তো দিল্লির শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যিনি সেই ব্যবস্থার কারিগর, তাঁরই ছেলে
দিল্লিতে না-পড়ে কেন কানাডায় পড়তে গেলেন?
দিল্লির রাজ্যপাট দখলের পর থেকেই বার বার পাল্টে গিয়েছে কেজরীওয়ালের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত। এক সময়ে কুমার বিশ্বাস, যোগেন্দ্র যাদবেরা কেজরীওয়ালের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকলেও মনোমালিন্যের কারণে তাঁরা একে একে ছিটকে গিয়েছেন। থেকে গিয়েছিলেন একমাত্র মণীশ, যাঁর হাতে থাকা শিক্ষা দফতরের সাফল্যকে হাতিয়ার করে দেশে-বিদেশে প্রচার চালিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। অথচ ভোটের কথা মাথায় রেখে আপাতত সেই মণীশের থেকেই দূরত্ব রচনার কৌশল নিয়েছেন তিনি। যদিও বিজেপি মনে করছে, এই ব্যবধান সাময়িক। মণীশের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে বলেই আপাতত তাঁকে দূরে সরিয়ে
রাখা হয়েছে। ভোট হয়ে গেলেই ফের কেজরীওয়ালের পাশে দেখা যাবে মণীশকে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)