E-Paper

মধ্যবিত্তের সুরাহাই কেজরীর ভোট-তাস

গত দশ বছরে মোদী সরকারের নীতিতে সব থেকে বেশি বঞ্চনার শিকার হয়েছে মধ্যবিত্ত সমাজ, এই দাবি তুলে সম্প্রতি সরব বিরোধীরা। দিল্লি ভোটের আগে সেটিকেই তুরুপের তাস করেছেন কেজরীওয়াল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৮
অরবিন্দ কেজরীওয়াল।

অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।

দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে সাত দফা দাবি রূপায়ণ করার সুপারিশ করলেন আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরীওয়াল। সামগ্রিক ভাবে দেশের কথা ভেবে ওই সুপারিশ করার কথা বললেও, রাজনীতিকরা বলছেন, বাস্তবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতি মধ্যবিত্ত সমাজের বঞ্চনাজনিত যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়েছে, তা দিল্লি ভোটের আগে উস্কে দিতে চেয়েছেন কেজরীওয়াল। মধ্যবিত্ত সমাজ যে বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ, তা বিলক্ষণ জানেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই স্পর্শকতার বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে মুখ খুলতে চাননি কোনও নেতাই।

গত দশ বছরে মোদী সরকারের নীতিতে সব থেকে বেশি বঞ্চনার শিকার হয়েছে মধ্যবিত্ত সমাজ, এই দাবি তুলে সম্প্রতি সরব বিরোধীরা। দিল্লি ভোটের আগে সেটিকেই তুরুপের তাস করেছেন কেজরীওয়াল। আজ কেজরী বলেন, ‘‘মোদী সরকারের নীতিতে নোটব্যাঙ্ক (শিল্পপতি) আর ভোটব্যাঙ্ক (পিছিয়ে থাকা সমাজ) সব থেকে উপকৃত হয়েছেন। বঞ্চনার শিকার হয়েছেন মধ্যবিত্তরা। উল্টে সরকারকে কর দেওয়ার এটিএমে পরিণত হয়েছে মধ্যবিত্ত সমাজ।’’ মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী সমাজের একটি বড় উদ্বেগের জায়গা হল আয়কর। যাতে উল্লেখজনক কোনও ছাড় না দেওয়ায় মোদী সরকারের আমলে করকাঠামো নিয়ে সরব মধ্যবিত্ত সমাজ। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছেন কেজরীওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘কর ছাড় সাত লক্ষ থেকে বাড়িয়ে দশ লক্ষ করা হোক। যাতে মধ্যবিত্ত সমাজের সুরাহা হয়। তাঁদের হাতে নগদ টাকা উদ্বৃত্ত হয়।’’

কেজরীওয়ালের দাবি, ভারতের কর কাঠামো এতটাই কঠোর যে, গত আর্থিক বছরে কেবল কর বাঁচাতে দু’লক্ষের বেশি ভারতবাসী বিদেশে চলে গিয়েছে। আগামী দিনে ওই সংখ্যাটি আরও বাড়বে, সে বিষয়ে নিশ্চত শাসক শিবির। বিজেপিও খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে, আজ কেজরী যে দাবি তুলেছেন, তা যুক্তিপূর্ণ। আমজনতা দীর্ঘ দিন ধরেই ওই দাবি জানিয়ে আসছে। দিল্লি ভোটের চার দিন আগে বাজেট। এখন বিজেপির কাছে সমস্যা হল, বাজেটে কর ছাড়ে সুরাহা না দিলে মধ্যবিত্তদের প্রতি সরকারের বৈষম্যমূলক মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন কেজরীওয়াল-সহ বিরোধীরা। আবার সরকার যদি কর ছাড়ের আওতা বাড়ায়, সে ক্ষেত্রে সেই কৃতিত্ব দাবি করবেন কেজরীওয়াল। কর কাঠামোয় পরিবর্তনের পাশাপাশি আজ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে পণ্য পরিষেবা কর ছাড়ের দাবিও করেছেন কেজরীওয়াল। আপের মতে, এতে অন্তত কিছুটা হলেও দ্রব্যমূল্য কমবে। ফায়দা হবে আমজনতার।

মধ্যবিত্ত ও আমজনতার কথা মাথায় রেখে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের ১০ শতাংশ অর্থ খরচ করার দাবি তুলেছেন কেজরীওয়াল। ওই দাবিও যুক্তিযুক্ত বলে মত উভয় ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, ভারতের মতো দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের ৪ শতাংশ করে, মোট ৮ শতাংশ খরচ হওয়া উচিত। তবেই অন্য বিকশিত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে ভারত। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের পড়ার খরচ খতিয়ে দেখার জন্য কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছেন কেজরীওয়াল। করোনা কালে প্রবীণ নাগরিকদের ট্রেনের টিকিটে ছাড় তুলে দিয়েছিল কমিশন। রেলের টিকিটে সেই ছাড়ও ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন কেজরীওয়াল। বর্ষীয়ান নাগরিকেরা যাতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, সে জন্য সুনির্দিষ্ট প্রকল্প, বর্ষীয়ান নাগরিকদের পেনশন প্রকল্প চালু করার দাবি করেছেন তিনি। যাতে শেষ জীবনে আর্থিক সমস্যায় ভুগতে না হয় প্রবীণদের।

কেজরী বলেন, ‘‘মোদী সরকার না জানলেও, আমরা জানি, মধ্যবিত্ত সমাজের সমস্যা কী। আসন্ন বাজেট অধিবেশনে তাই সংসদে মধ্যবিত্তদের সমস্যা নিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপ নেতৃত্ব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Arvind Kejriwal Delhi Assembly Election 2025 PM Narendra Modi BJP Aam Aadmi Party AAP Middle Class

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy