নাগরিকপঞ্জির প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি: এপি
কার্গিল যুদ্ধে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন অসমের কাছাড় জেলার জারইলতলা গ্রামের চিন্ময় ভৌমিক। তাঁর মৃত্যুর খবরে সমবেদনা জানাতে বাড়িতে নেতা-মন্ত্রীদের ঢল নামে। বছর তিনেক আগেও বিএসএফের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে সেনাবাহিনীর প্রয়াত গ্রেনেডিয়ারের পরিবারকে সম্মান জানানো হয়। আর এখন সেই পরিবারের নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)। প্রথম তো নয়ই, ৩০ জুলাই যে দ্বিতীয় তথা চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হয়েছে, তাতেও বাদ পড়ল কার্গিলের শহিদ চিন্ময়ের ভাইপো পিনাক ভৌমিক।
সেনাবাহিনীতে শুধু কি আর চিন্ময়! তাঁর দাদা সন্তোষকুমার ভৌমিকও অবসরপ্রাপ্ত আর্মি মেডিক্যাল ইন্সপেক্টর। ছোট ভাই সজল ভৌমিক এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। পিনাক তাঁরই ছেলে। সেন্ট্রাল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। ভৌমিক পরিবারের নতুন প্রজন্মের একমাত্র প্রতিনিধি। তারই নাম কি না বাদ! বিস্ময়কর ঠেকছে এলাকাবাসীর কাছেও।
জেঠু সন্তোষবাবুর কথায়, কী কী নথি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বড় কথা নয়। প্রশ্ন, সেনাবাহিনীতে কি নাগরিকত্বের পরীক্ষা ছাড়া কাউকে নিযুক্ত করা হয়? নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় থাকলে কোনও পরিবারের তিন ভাই কি সেনাবাহিনীতে চাকরি পায়? তিনি জানেন, কারও কাছে এই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে না। তাই নাবালক পিনাকের প্রশ্নের মুখেও তিনি নীরব।
এখন কী হবে? আগেও তো দ্বিতীয় দফায় ডেকে বাড়ির দলিল, ঠাকুর্দার লিগ্যাসি কোড ইত্যাদি দেখল, এর পরেও উঠল না। এ বার সমস্ত কিছু দেখেও যদি চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকে? আমার এমনটা হবে না তো?— দু’দিন ধরে কত কী জিজ্ঞাসা পিনাকের মনে। জেঠু ছাড়া কাকেই বা জিজ্ঞেস করবে সে। মা অসুস্থ। বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা চলছে। নাম না-ওঠার ব্যাপারটা তাঁকে ঠিকঠাক জানানোও যাচ্ছে না। সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘কী করে বলি তাঁকে? বাড়ির সকলের নাম উঠেছে, বাদ পড়ে গেল শুধু ছেলেটা!’ তবে তিনি বিশ্বাস করেন, দাবি-আপত্তি পর্বে তাঁর নামও এনআরসি-ভুক্ত হবে। এই বিশ্বাসের পরেও গোপন করতে পারেন না
মনের সংশয়, আতঙ্ক। পিনাকের মতোই নিজেকে প্রশ্ন করেন, এর পরেও যদি না ওঠে!
রাজ্যের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, চূড়ান্ত
পর্বে কোনও প্রকৃত ভারতীয়র
নাম বাদ পড়বে না। বাবা-জেঠুর নাম যখন উঠেছে, তখন নাবালক বাদ থাকতে পারে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy