তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি।— নিজস্ব চিত্র।
বাধা দেওয়া হবে, সে আভাস ছিলই। হলও তাই। শিলচর বিমানবন্দরের বাইরেই বেরোতে দেওয়া হল না তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উড়ান থেকে নামার পরে বিমানবন্দরের ভিতরেই সুখেন্দুশেখর রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ফিরহাদ হাকিমদের পথ আটকাল অসমের পুলিশ। বাধা সরিয়ে জোর করে বিমানবন্দরের প্রস্থান পথের দিকে দৌড়নোর চেষ্টা করলেন কয়েকজন। তাতে পুলিশের সঙ্গে জোরদার ধস্তাধস্তি হল সাংসদ-বিধায়কদের। অসমের পুলিশ শিলচর বিমানবন্দরে বাংলা থেকে যাওয়া প্রতিনিধি দলকে মেরেছে বলেও অভিযোগ তৃণমূলের। তবে সুখেন্দু-কাকলিরা এখনও হাল ছাড়েননি। শিলচর বিমানবন্দরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন তাঁরা। প্রয়োজনে সারা রাত বিমানবন্দরেই বসে থাকবেন, এমনও জানিয়েছেন বারাসতের সাংসদ।
তৃণমূলের প্রতিনিধি দল পৌঁছনোর আগে থেকেই শিলচরে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। তৃণমূলের সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে প্রশাসনের আলাপ আলোচনা চলছে। তবে, এখনও স্পষ্ট নয় তাঁদের শিলচর থেকেই ফিরে আসতে হবে না কি, অসমে ঢোকার অনুমতি তাঁরা পাবেন।সাংসদ ও বিধায়ক মিলিয়ে এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আট জন।
তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার অভিযোগ করেন, ‘‘এখানে সম্পূর্ণ অবৈধ কার্যকলাপ চলছে। আমরা সবাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কেউ সাংসদ, কেউ মন্ত্রী, কেউ বিধায়ক। কিন্তু আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের অনেকের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে আমাদের আটকানো হচ্ছে। কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সারা রাত এখানেই আটকে থাকব কি না জানি না। এখানে এসে মনে হচ্ছে দেশে জরুরি অবস্থা চলছে।’’ অপর তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষের অভিযোগ, ‘‘আমাদের আটকে দেওয়ার বিষয়ে কোনও সরকারি নির্দেশিকা পুলিশ দেখাতে পারেনি। আমাদের যে আটক করা হয়েছে, সে কথাও পুলিশ বলছে না। আবার বিমানবন্দর থেকে বাইরে যেতেও দিচ্ছে না। পুরোপুরি বেআইনি ভাবে আমাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে।’’
দেখুন ভিডিয়ো
বিমানবন্দরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের যে আটকে দেওয়া হতে পারে এমন ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল।অসমের বিজেপি সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল তৃণমূল প্রতিনিধিদের অসম সফরে কোনও আপত্তি নেই তাদের। কিন্তু, রাজনৈতিক স্বার্থে এ রাজ্যের পরিস্থিতি অশান্ত করার কোনও রকম চেষ্টা করলে সরকার পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে। বুধবার এ কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন অসম সরকারের মুখপাত্র তথা শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি। তার পরই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করতে চলেছে পুলিশ-প্রশাসন। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সুখেন্দুশেখর রায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের প্রতিনিধি দলটিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
অসমের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পরই বিষয়টি নিয়ে তীব্র ভাষায় শাসক বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪০ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়লে তা থেকে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বইতে পারে রক্তগঙ্গা। এই ভাষাতেই বিজেপিকে সতর্ক করেন মমতা। এমনকি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বিজেপির নেতৃত্বে এই কর্মকাণ্ড চলছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বক্তব্যের পরই তাঁর সমালোচনায় আসরে নেমেছিলেন অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ আনেন বিজেপি সভাপতি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আসরে নামে অসম বিজেপি। অসমের ডিব্রুগড়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিজেপির যুবদলের কর্মী ও সমর্থকেরা। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় ঘৃণা ও উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগও।
তবে এর পরও নিজেদের অবস্থান বদলায়নি তৃণমূল। উল্টে বৃহস্পতিবার অসম যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয় দলের তরফে। জানানো হয়েছিল, প্রথমে শিলচরে যাবে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলটি। শুক্রবার যাবেন গুয়াহাটি। দলে রয়েছেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, অর্পিতা ঘোষ, মমতা ঠাকুর, রত্না দে নাগ, নাদিমূল হকের পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কর্মসূচির কথা জানিয়ে বুধবার তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলেছিলেন, শিলচরে তাঁরা স্থানীয় সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলবেন। তৃণমূল প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত-বিনিময়ের জন্য শিলচরের নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চের তরফে রাজীব ভবনে বিকেলে এক সভার আয়োজন করার কথাও রয়েছে ।
আরও পড়ুন: ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনির নাম আছে, তালিকায় ঠাঁই মেলেনি ইলার
তৃণমূলের কর্মসূচির কথা প্রকাশ্যে আসার পরই শিলচরের বিজেপি নেতা তথা অসমের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য তৃণমূল সাংসদদের ‘কটাক্ষ’ করে বলেন, ‘‘তাঁরা যেন অসমে আসার সময় এনআরসি-র নথিগুলি যাচাই করে আসেন!’’ পাশাপাশি এ দিন অসম গণ পরিষদের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, মমতা অসমের বাঙালি এবং অসমীয়াদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন: চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকলেই ঠাঁই ডিটেনশন ক্যাম্পে? চরম শঙ্কা অসম জুড়ে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy