—প্রতীকী ছবি।
‘বাবু’-র মনে বড় দুঃখ! কার্যত নিজভূমেই পরবাসী যে তিনি!
সাইবারাবাদ। আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি মানচিত্রে সদর্প উপস্থিতি নতুন স্বপ্নের সন্ধান দিয়েছিল ১৯৯০-এর দশকের ভারতকে। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা তৈরির পরে নয়া হায়দরাবাদের রূপকার চন্দ্রবাবু নায়ডু তাঁরই অতীত সাম্রাজ্যে বহিরাগত। এক সময়ের শাসক দল তেলুগু দেশম আজ তেলঙ্গনায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে।
প্রধান প্রতিপক্ষ মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও তো প্রকাশ্যে বলছেন, ‘‘বাবুর আবার তেলঙ্গানায় কী দরকার! জিতলেও তো উনি দফতর চালাবেন সেই অন্ধ্রপ্রদেশে বসেই। বাবুকে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট।’’
মাইক্রোসফ্ট থেকে ওরাক্লের উপস্থিতি। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক লক্ষ চাকরি। হাই টেক সিটি। এ সব যাঁর কৃতিত্ব, সেই বাবুর পাল্টা অভিমান, ‘‘নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ-সবাই প্রচারে আসছেন। আর আমি করলেই দোষ! ভুললে চলবে না তেলুগু দেশম না থাকলে রাওয়ের টিআরএসের জন্মও হত না। চারমিনার না বানাতে পারি, আমি না থাকলে হত না সাইবারাবাদও।’’
কিন্তু হায়দরাবাদে সদ্য চালু হওয়া মেট্রোয় ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র সুরেশ বললেন, ‘‘জেনে রাখুন অন্ধ্র থেকে ছাত্রেরা তেলঙ্গানায় পড়তে আর চাকরির খোঁজে আসছে।’’ নতুন প্রজন্ম আর বাবুর অতীত খ্যাতিতে ভুলতে চায় না। পুলিশকর্মী থেকে সরকারি কর্মী— সকলেই রাও সরকারের আমলে বেতন বৃদ্ধিতে সন্তুষ্ট।
তেলুগু দেশম নেতারা মানছেন, দলের অস্তিত্ব বজায় রাখতে এটাই চন্দ্রবাবুর শেষ চেষ্টা। বেগমপেটের অস্থায়ী দফতরে বসে ছিলেন দীর্ঘদিনের কর্মী টি কুমার। ইরানি চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘এ বার হারলে তেলঙ্গানা থেকে মুছে যাবে দল।’’
চন্দ্রবাবু তাই শরণাপন্ন শ্বশুর এনটি রাম রাও-এর। প্রয়াত শ্বশুরের ঐতিহ্যকে ফের হাতিয়ার করতে কুকাটপল্লি থেকেই লড়াইয়ের আসরে নামিয়েছেন এনটিআরের নাতনি সুহাসিনী নন্দমুরুকে। সুহাসিনীর প্রচারের দায়িত্বে থাকা রাঘব রেড্ডির কথায়, ‘‘আমরা আছি না! সুহাসিনী আক্কা জিতবেনই।’’ ‘আমরা’ কারা? রেড্ডি বলেন, ‘‘আমরা হলাম সেটলারস। আদতে অন্ধ্রের লোক। কিন্তু কাজ-ব্যবসার খাতিরে তেলঙ্গানায় রয়ে গিয়েছি।’’ কিন্তু পুরভোটে এই ‘সেটলার’দের গড়েও টিআরএস প্রার্থীর জয় প্রশ্ন তুলেছে সেই আনুগত্য নিয়ে।
তাই চন্দ্রবাবুর শক্ত মাটিতেই তাঁকে চরম আঘাত দিতে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছে কেসিআরের দল টিআরএস। প্রার্থী হয়েছেন গত বারের জয়ী মাধবরাম কৃষ্ণ রাও। তেলুগু দেশমের টিকিটে জেতার পরে তিনি টিআরএসে যোগ দেন। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী কে টি রাম রাও মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলছেন, ‘‘লিখে নিন জিতে গিয়েছি। বিদেশে বড় হওয়া সুহাসিনী তো তেলুগুই ভাল বলতে পারেন না।’’ উত্তেজিত সুহাসিনী বলছেন, ‘‘সভায় আসুন। দেখুন তেলুগু জানি কি না!’’ ভোটের হাওয়া অমরাবতী থেকে বয়ে এনেছে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিতও। হাওয়ায় ফিসফিসানি, বাবু চাইছেন সুহাসিনী হারুন। তা হলে বাবুর ছেলে নারা লোকেশের অন্ধ্রের মসনদে উত্তরসূরি হওয়ার পথে কোনও বাধা থাকে না।
গুঞ্জন যে দলের পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে, তা বিলক্ষণ জানেন প্রায় চল্লিশ বছর ধরে রাজনীতি করা বাবু। তাই আপাতত ভোটারদের সমর্থন পেতে নিজের অভিমানকে কাজে লাগাচ্ছেন। পরবাসী বাবুর মান ভাঙাতে মরিয়া ‘সেটলার’রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy