Advertisement
E-Paper

সচিনকে আটকাতে ‘রামভক্ত’ ইউনুস বাজি বসুন্ধরার

“হনুমানজি নিজের ছাতি চিরে দেখিয়েছিলেন, তাঁর হৃদয়ে শ্রীরামচন্দ্র। আমি হনুমানের মতো মহান নই। কিন্তু চেষ্টা করে যাচ্ছি রাম এবং আপনাদের সেবা করার।” বলছেন ইউনুস খান! “আজ আপনাদের সামনে আসার আগে সকালেই এখানকার হনুমান মন্দির দর্শন করে শক্তি সংগ্রহ করেছি।”

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৭
ইউনুস খান

ইউনুস খান

“হনুমানজি নিজের ছাতি চিরে দেখিয়েছিলেন, তাঁর হৃদয়ে শ্রীরামচন্দ্র। আমি হনুমানের মতো মহান নই। কিন্তু চেষ্টা করে যাচ্ছি রাম এবং আপনাদের সেবা করার।” বলছেন ইউনুস খান! “আজ আপনাদের সামনে আসার আগে সকালেই এখানকার হনুমান মন্দির দর্শন করে শক্তি সংগ্রহ করেছি।”

জয়পুর থেকে জব্বলপুর হাইওয়ে ধরে সোয়াশো কিলোমিটার দূরে টংক জেলায়, মেরুকরণের উলটপুরাণ! তারই জেরে এখানে কংগ্রেসের অন্যতম হাই প্রোফাইল প্রার্থীকে (সচিন পাইলট) লড়াইয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন ‘রামভক্ত’ ইউনুস খান! রাজস্থানে বিজেপির একমেবাদ্বিতীয়ম মুসলিম প্রার্থী। বসুন্ধরা রাজের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং রাজ্যের মন্ত্রিসভার দু’নম্বরও বটে। শেষ মুহূর্তে দলের মনোনীত হিন্দু প্রার্থীকে সরিয়ে এঁকে টিকিট দিয়েছেন রাজে, কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে ছাই দেওয়ার জন্য।

দূরে আরাবল্লী। সামনে সর্ষে আর গম খেত। তার মাঝে এক সময়ের এই নবাবি শহরে কংগ্রেস কপিবুক মেনে মুসলিম প্রার্থী দিয়ে এসেছে স্বাধীনতার পর থেকেই। বিজেপি দিয়েছে হিন্দু প্রার্থী। এ বার দু’পক্ষই উল্টে দিয়েছে হিসেব। গুজ্জর সম্প্রদায়ের সচিন নিজে টংক থেকে প্রথম বার দাঁড়ানোয়, এখানকার মোট (সোয়া দু’লক্ষ ভোটারের মধ্যে) ২৪ হাজার গুজ্জরের ভোট প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন। তাই এখানকার ৫৫ হাজার মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে (সাবেকি কংগ্রেস) চিড় ধরাতে এই বাজি ধরেছেন বসুন্ধরা। পাশাপাশি মিনা সম্প্রদায়কে পাশে পাওয়ার জন্য রাজ্যসভার সাংসদ নেতা কিরোড়িলাল মিনাকে বিজেপিতে নিয়ে আসা হয়েছে। বিজেপির বক্তব্য, রাজেশ পায়লটের পুত্রকে আটকে দেওয়া গেলে উনিশের ভোটের আগে কংগ্রেস-বিরোধী বার্তা তো রাজস্থান থেকে দেওয়া যাবে।

ঘণ্টাঘর এই টংকের এসপ্ল্যানেড চত্বর। কয়েকশো বছর আগে নবাবি আমলে তৈরি একটি ঘড়ি স্তম্ভকে কেন্দ্র করে মূল জনপদ। এখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে, গ্রামের ভিতর অরণ্যমাল বালাজি মন্দির ভোটযুদ্ধের বাইশ গজ। মন্দিরকে ঘিরে বিরাট মাঠে নির্বাচনী বক্তৃতা শুনতে রোজ হাজিরা দিচ্ছেন স্থানীয় গুজ্জর, মিনা, তফসিলি ও অন্য জনজাতি, মুসলিম গরিবগুর্বো মানুষ। সামনে একটি অস্থায়ী হেলিপ্যাড, যেখানে নেতাদের আসা যাওয়াকে ঘিরে চলছে স্থানীয়দের ভোট মরসুমি বিনোদন!

কারণ, আগে হেলিকপ্টার দূরস্থান, এখনও রেলেরই মুখ দেখেনি হঠাৎই হাই প্রোফাইল হয়ে ওঠা নির্বাচনী জেলাটি। হাতে গোনা মনিহারি দোকান, আরও কম সরকারি কাছারি, কিছু অটোযান। রাজধানী থেকে মাত্র সোয়াশো কিলোমিটারের মধ্যেই টংক, কিন্তু কোনও রেললাইন নেই। ২০১৮ সালেও নিশ্চিন্দিপুর থেকে যাওয়া টংকের এক ঘুপচি চা দোকানের মালিক ঈশ্বর সিংহ রাও বলছেন, “আমাদের এখানেই তৈরি হয়েছিল বিশালপুর বাঁধ। কিন্তু জল চলে যায় অন্যত্র, আমরা চাষের বরাদ্দ যথেষ্ট পাই না। এই নিয়ে আন্দোলন করে কয়েক বছর আগে পাঁচ জন মারাও গিয়েছে।”

ঈশ্বর বলছেন বটে, কিন্তু শুধুমাত্র উন্নয়নকে সামনে রেখে ভোট করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয়মুক্ত নয় দু’পক্ষই। তাই সংখ্যালঘু-মনোযোগী হতে গিয়ে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক যাতে চটে না যায়, সে ব্যাপারেও সক্রিয় বিজেপি। মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িতে ওঠার আগে ইউনুস যেমন বললেন, “রাম এবং রহিম দুজনেই আমার হৃদয়ে!” খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মঞ্চে হনুমানের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করায় বেশি মনোযোগী কেন ছিলেন ইউনুস। কারণ, এই এলাকায় মুসলমান বসতি নেই বললেই চলে।

যেখানে যেমন দাওয়াই আর কী! সচিন যেমন বলছেন, “আমি শুধু অপেক্ষা করে আছি, যদি যোগী আদিত্যনাথ এখানে আসেন! দেখতে চাই, তিনি তাঁর দলের প্রার্থীর সমর্থনে কী কী বলেন! অবশ্য এটাও জানি, মন্দির-মসজিদ নিয়ে রাজনীতি করা আদিত্যনাথ, ভয়ের চোটেই এখানে আসবেন না!”

Rajasthan Assembly Election 2018 Assembly Elections 2018 BJP Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy