Advertisement
E-Paper

মহেন্দ্র কর্মার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হিংসাদীর্ণ দন্তেওয়াড়া

মহেন্দ্রকে বলা হত,‘বস্তারের বাঘ’। ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদীদের খতম তালিকায় সম্ভবত পয়লা নম্বর নাম ছিল তাঁর।

তাপস সিংহ

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:৫৩
নির্বাচনের লড়াইয়ে এ বারও কংগ্রেস প্রার্থী মহেন্দ্র কর্মার স্ত্রী দেবতী কর্মা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নির্বাচনের লড়াইয়ে এ বারও কংগ্রেস প্রার্থী মহেন্দ্র কর্মার স্ত্রী দেবতী কর্মা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বস্তারের অভয়ারণ্য আজ বড়ই স্মৃতিমেদুর!

সেই অরণ্য আজ ব্যাঘ্রহীন বটে, কিন্তু তার স্মৃতি যেন ছায়া ফেলছে সর্বত্র।

২০১৩-র ২৫ মে এই বস্তারের সুকমা জেলার পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা দরভা ঘাঁটিতে কংগ্রেসের ‘পরিবর্তন যাত্রা’র কনভয়ের উপরে মাওবাদীদের তীব্র হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২৭ জন। ছত্তীসগঢ় কংগ্রেসের প্রথম সারির বহু নেতার মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল, ছত্তীসগঢ় কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি নন্দকুমার পটেল-সহ অনেকেই। নিহত হয়েছিলেন দন্তেওয়াড়ার অবিসম্বাদি নেতা মহেন্দ্র কর্মাও। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও রাজ্য কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতা ছাড়াও গোটা দেশ তাঁকে জানে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা আন্দোলন ‘সালওয়া জুড়ুম’-এর জনক হিসেবে।

আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গের মতো পরিবর্তনের মেঘ ছত্তীসগঢ়ের আকাশেও!

মহেন্দ্রকে বলা হত,‘বস্তারের বাঘ’। ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদীদের খতম তালিকায় সম্ভবত পয়লা নম্বর নাম ছিল তাঁর। মহেন্দ্রর উপর এতটাই রাগ ছিল মাওবাদীদের যে, তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের সময় দেখা যায়, অন্তত ৭৮টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দেহ ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছিল বুলেটে।

‘সালওয়া জুড়ুম’-এর জনক হিসেবে মহেন্দ্র কর্মাকে এখনও জানে গোটা দেশ। —ফাইল চিত্র।

দরভা ঘাঁটির সেই রক্তের দাগ শুকিয়ে গিয়েছে, কিন্তু পুজোবাড়ির আলপনার মতো সেই দাগ থেকে গিয়েছে আজও! মাওবাদীদের আর এক শক্ত ঘাঁটি দন্তেওয়াড়ায় পা দেওয়ার পর থেকে বস্তারের বাঘের সেই স্মৃতিচারণই শুনছি বার বার।

কিন্তু মহেন্দ্র কর্মার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আজকের দন্তেওয়াড়ায় বিধানসভা নির্বাচনের সম্পর্ক কোথায়?

সম্পর্কটা এখানেই যে, তাঁর শূন্য পদে গত বারের মতো এ বারেও কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন মহেন্দ্রর স্ত্রী দেবতী কর্মা। এই আসনে গত বার বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। এ বারে অবশ্য কিঞ্চিৎ গোলযোগ বেঁধেছিল কয়েক দিন আগে। নির্দল প্রার্থী হিসেবে মায়ের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র পেশ করেছিলেন মহেন্দ্র কর্মার ছেলেছবিন্দ্র। বিষয়টা বেশি দূর গড়ানোর আগেই হস্তক্ষেপ করেছিলেন স্বয়ং রাহুল গাঁধী। ছবিন্দ্রকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলেন তিনি। এখন অবশ্য মায়ের নির্বাচনী প্রচারের কাজেও নেমেছেন তিনি।

নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র দন্তেওয়াড়ার মানুষের পাশে বছরভরই থাকেন দেবতী। দন্তেওয়াড়ার মানুষজনও সে কথা জানিয়েছেন। কারও বাড়িতে বিয়ে, মুখেভাত বা যে কোনও অনুষ্ঠানে দেবতী যান, অতিথিদের দেখভালও করেন।

কিন্তু দেবতীকে পাওয়া যাবে কোথায়? মহেন্দ্রর গ্রামের বাড়ি ফরসপালে তিনি নেই। নেই দন্তেওয়াড়া শহরেও। জানা গেল, নির্বাচনী প্রচারে তিনি গিয়েছেন প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মহেলওয়াড়া কোলারপাড়ায়।সেখানেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন তিনি। অবশ্য দেবতী কোথাও গেলে অনেক দূর থেকেই তা মালুমপাওয়া যায় তাঁর সঙ্গের কনভয় দেখে। মহেন্দ্র কর্মাকে হত্যা করার পরেও প্রতিশোধের আগুন নেভেনি মাওবাদীদের। খতম তালিকায় রয়েছে মহেন্দ্র কর্মার গোটা পরিবার। ফলে জেড প্লাস ক্যাটেগরি নিরাপত্তা দেওয়াহয়েছে দেবতীকে। তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীরা ছাড়াও রয়েছেন ছত্তীসগঢ় সশস্ত্র পুলিশের কমান্ডোরা।

মহেন্দ্র কর্মাকে হত্যা করার পরেও প্রতিশোধের আগুন নেভেনি মাওবাদীদের। —ফাইল চিত্র।

উঠোনে দাঁড়িয়ে ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন দন্তেওয়াড়ার কংগ্রেস প্রার্থী। ছোটখাটো চেহারা, চোখে চশমা, পরনে ছাপা শাড়ি। পায়ে সস্তার চপ্পল।এক ফাঁকে বললেন, ‘‘চলুন, পাশের গ্রামে যাই। ওখানেই কথা হবে।’’ গোটা দশেক স্করপিয়ো-র কনভয় ছুটল লাল ধুলোর ঝড় তুলে। দুপুরের জঙ্গল যেন কিছুটা ঝিম ধরা। সড়ক থেকে অনেকটা ভিতরে মাটির রাস্তা ধরে কনভয় ছুটল দন্তেওয়াড়ার কাটিকল্যাণ ব্লকের মোকপাল রাউতপাড়ায়। যেখানে সভা হবে, সেখানে আর একটি অনুষ্ঠান চলছে। তিনি কিন্তু স্থির হয়ে বসলেন গাছের নীচে পাতা প্লাস্টিকের চেয়ারে। এক জন এসে বললেন, ‘‘ভাবিজি, একটু বসতে হবে। শেষ হলেই ডাকবে।’’ স্মিত হেসে দেবতী বলেন, ‘‘নিশ্চিন্তে ওদের শেষ করতে বলুন। আমি বসছি।’’

আগামী ১২ নভেম্বর নির্বাচনী লড়াই হবে দন্তেওয়াড়া​য়। —নিজস্ব চিত্র।

মহেন্দ্রর কথা তুললে এখনও বিষণ্ণ হয়ে পড়ে তাঁর চোখ। আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেবতী বলেন, ‘‘ওর চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখের। তবে কি জানেন, মাওবাদী সমস্যার সমাধান বিজেপি সরকার করতে পারবে না। পারবে কংগ্রেস।’’ এ বারেও কি এই আসন কংগ্রেস ধরে রাখতে পারবে? তাঁর সংক্ষিপ্ত ও দৃঢ় উত্তর: ‘‘নিশ্চিত ভাবে পারবে। শুধু এই আসনই নয়, রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে কংগ্রস।’’

আরও পড়ুন: কার্বাইনের নল উঁচিয়ে অবুঝমাড় পরীক্ষা নিচ্ছে গণতন্ত্রের

দেবতীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির ভিমারাম মন্ডাবী। বিজেপি-ও অবশ্য এই আসন জেতার ব্যাপারে আশাবাদী। দলীয় সূত্রের খবর, দন্তেওয়াড়া এবং কোন্টা আসন এ বার পেতে চান বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এ জন্য এই কেন্দ্রের উপর বাড়তি নজর রয়েছে বিজেপির।

অনুন্নয়নের ছবিটা এখনও রীতিমতো স্পষ্ট। —নিজস্ব চিত্র।

বিকেল নামে বস্তারে। আলো কমে আসছে দন্তেওয়াড়ার পাহাড়-জঙ্গল-জমিনে। বস্তারের অরণ্য অনেক দিনই ব্যাঘ্রহীন বটে, কিন্তু লড়াইটা বয়ে নিয়ে চলেছেন দেবতী।

দন্তেওয়াড়ার মাটিতে রক্তের ধারা বহমান। আইনের শাসনের পাশাপাশি এখানে চলে বেআইনের শাসনও। নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়। দন্তেওয়াড়ার রক্তের খিদের নিবৃত্তি হয় না কেন!

(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদের দেশ বিভাগে।)

Assembly Elections 2018 Chhattisgarh Assembly Election 2018 Chhattisgarh ছত্তীসগঢ় Video Salwa Judum Mahendra Karma
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy