Advertisement
E-Paper

শিব-শিব জপছেন চম্বলের দুর্ধর্ষ ডাকু মালখান সিংহ

চম্বলের এক সময়ের দুর্ধর্ষ ডাকু মালখান সিংহ তখন দরজায় দু’পা ছড়িয়ে আয়নার সামনে। কাঁচি দিয়ে গোঁফ ছাঁটছেন। দেখেই ঘরের ভিতর ছুটে পালালেন।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০২
নিজের বাড়িতে মালখান সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের বাড়িতে মালখান সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

ডাকাত পড়লে মানুষ পালাতে শুনেছি। ডাকাত পালাতে আজ দেখলুম।

ফোনে বলেছিলেন এক ঘণ্টা পরে আসতে। পৌঁছে গেলাম ১৫ মিনিটেই। চম্বলের এক সময়ের দুর্ধর্ষ ডাকু মালখান সিংহ তখন দরজায় দু’পা ছড়িয়ে আয়নার সামনে। কাঁচি দিয়ে গোঁফ ছাঁটছেন। দেখেই ঘরের ভিতর ছুটে পালালেন।

মালখানকে সকলে ডাকেন ‘দদ্দা’, বড় ভাই। তাঁকে পালাতে দেখেই ঘরের ভিতর থেকে ছুটে এলেন দু’জন। “আসুন, আসুন”, “বসুন” করে ঘরে নিয়ে তো গেলেন, কিন্তু সেজেগুজে বাইরে আসতে অনেকটা সময় নিলেন প্রাক্তন দস্যু। হত্যা, অপহরণ নিয়ে দু’শোর মতো মামলা ছিল। অর্জুন সিংহ মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় আত্মসমর্পণ করে জেলও খেটেছেন। চম্বলের অনেক প্রাক্তন ডাকুই পরে ভোটে জিতেছেন। দদ্দাও সেই আশায় ঘুরছেন দলে দলে। এক বার ভোটেও লড়ে হেরেছেন।

পাশের ঘরের পর্দা সরিয়ে এ বার আসল ‘এন্ট্রি’ হল ‘দ্য মালখান সিংহ’-এর। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। পেটানো চেহারা। চওড়া কপাল। টানা লাল তিলক। ঘোলাটে চোখ বড় বড় করে বাজখাঁই গলায় বললেন, “আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি। আমায় আবার প্রচারে বেরোতে হবে।”

আরও পড়ুন: সেনার অর্থ লুটছে মোগাম্বোর জাল! রাফালে নতুন তির রাহুলের

প্রচার? কিন্তু এ বারে তো কোনও ডাকাতই ডাক পাননি। টিকিটও পাননি। এখন তাঁদের ‘রবিনহুড’ ইমেজও শেষ, গুরুত্বও!

এ বার আরও ভয় পাওয়াচ্ছেন মালখান। উরু চাপড়ে বললেন, “ডাকাত বলবেন না, বলুন বাগি। পান, বিড়ি, মদ ছুঁইনি। মহিলাদের অত্যাচার করিনি। ওই (বিপ..বিপ) নেতাদের বিরুদ্ধে কুড়িটি করে মামলা, ডাকু তাঁরা। আমি তো আত্মসমর্পণ করেছি, ওঁরা করবেন?” তার পর দু’হাত ছড়িয়ে বললেন, “কী আছে আমার? ভিন্দে দশ-কুড়ি বিঘা জমি আর গ্বালিয়রে দু’কামরার ঘর। ডাকু হলে সম্পত্তি করতাম না?”

আরও পড়ুন: টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের দৌড়ে সবাইকে টপকে গেল বিজেপি

কার হয়ে প্রচার করছেন দদ্দা?

“এই তো শিবরাজ সিংহের সঙ্গে প্রচার করলাম। সিন্ধিয়া (জ্যোতিরাদিত্য) ছাড়া কংগ্রেসের নেতা নেই। বিজেপিই আসছে। ইমানদার নেতার সঙ্গে আছি।” বলতে বলতেই ফোন এল দদ্দার। সামনে ঠায় দু’জন বসে। এক জন রামপ্রকাশ নিষাদ। মালখানের সঙ্গেই জঙ্গলে ছিলেন। ফিসফিস করে বললেন, “দদ্দা জেল খেটেছেন, কিন্তু সাজা হয়নি।” আর এক জন বছর তিরিশের বেশি— দদ্দার বড় ছেলে বিজয় বাহাদুর সিংহ। দদ্দা তখনও ফোনে। পাশের ঘর থেকে ছুটে এল একটি ফুটফুটে মেয়ে। কে তুমি? নাম কী? প্রশ্ন করতেই বলল, রাজনন্দিনী। দদ্দার মেয়ে। এগারো বছর বয়স। একটি ছোট ভাইও আছে রাজনন্দিনীর। দদ্দার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সন্তান।

চুয়াত্তর বছরের মালখান তখনও ফোনে ছক কষছেন, কোন কেন্দ্রে কী ভাবে প্রচার হবে। ফোন রাখতেই বললেন, “এ বার উঠি? ভোটের কাজ আছে।” বলতে বলতে আবার ফোন। এত ক্ষণে প্রথম বার হাসলেন, হেসে আমায় বিদায়ও জানালেন। বড় ছেলে বললেন, “ভাল করে লিখুন। যাতে পরের বার টিকিট পান দদ্দা।” রিংটোন তখনও বাজছে শুনছি: ‘যশোমতী মাইয়া সে পুঁছে নন্দলালা, রাধা কিঁউ গোরি, ম্যায় কিঁউ কালা’।

রসিক দদ্দা ফোন ওঠালেন, “হ্যালোওও…”।

Malkhan Singh Chambal Assembly elections 2018 Madhya Pradesh Assembly Election 2018 বিধানসভা নির্বাচন মধ্যপ্রদেশ মালখান সিংহ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy