Advertisement
E-Paper

সেমিফাইনালে জিততে ‘বিকাশ’ মেরুকরণের

দেশি ঘিয়ের ঠাসবুনোট গন্ধের মধ্যে ইদানীং ভনভন লেগেই রয়েছে নেতা, কর্মী, হাটুরে, ফড়েদের। দেড় ফুট উঁচু থেকে অবিরল ঢেলে যাওয়া এলাচ-চায়ের ধুম! তরজার পারদ এতটাই চড়া, যে একলা হয়ে কাঁচের আলমারিতে পড়ে রয়েছে এখানকার স্পেশাল চমচম, পেঁড়া, বরফি বাহিনী। কার এসবে মন আছে? খোদ দোকানিরই নেই!  

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২১
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

দেশি ঘিয়ের ঠাসবুনোট গন্ধের মধ্যে ইদানীং ভনভন লেগেই রয়েছে নেতা, কর্মী, হাটুরে, ফড়েদের। দেড় ফুট উঁচু থেকে অবিরল ঢেলে যাওয়া এলাচ-চায়ের ধুম! তরজার পারদ এতটাই চড়া, যে একলা হয়ে কাঁচের আলমারিতে পড়ে রয়েছে এখানকার স্পেশাল চমচম, পেঁড়া, বরফি বাহিনী। কার এসবে মন আছে? খোদ দোকানিরই নেই!

বিশ বছর আগে বিশ্বকে ফের চমকে দেওয়া বিস্ফোরণ-বিন্দু থেকে ঠিক ৩৫ কিলোমিটার দূরে একটি প্রাচীন এবং জনপ্রিয় মিঠাই বিপণির ‘চায়ে পে চর্চা’-র মধ্যে বসে রয়েছি। শুধু ভোট কেন, এখানকার নিস্তরঙ্গ মফস‌্সলি যাপনে যে কোনও উত্তেজনার সময় নাকি এটিই ‘শ্যাডো বক্সিং’-এর জায়গা। কারণ, বিজেপি এবং কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে এই ‘মহাবীর ভবরজী কি দুকান’ নিকটবর্তী এবং সমদূরত্বে।

কিন্তু যা চলছে, তা কি নিছকই দু’টি দলের রাজনীতির লড়াইয়ের চর্চা? উন্নয়ন, অপশাসন নিয়ে কাজিয়া? শেষ নভেম্বরের নরম রোদ্দুরে যে ভাষায় চোয়াল-শক্ত সংলাপ শুনছি আড়ি না পেতেই, তাতে মনে হতে বাধ্য— রাজস্থান, তুমিও?

“সবে তো এলেন. ক’দিন থাকুন, বিজেপির আরও সভা শুনুন। তা হলে বুঝতে পারবেন. ওরা প্রত্যেকটি ধানিতে (গ্রাম) গিয়ে কী বলছে!” গরম চায়ের গ্লাসের শেষ ওমটুকু লোলচর্ম গালে ঘষতে ঘষতে বলছেন রহমতুল্লা। দীর্ঘদিন মজদুরি করা প্রবীণ মানুষটি সম্ভবত আমার হতভম্ব দশা দেখেই বললেন কথাটা। কারণ, তার আগেই অটোয় ব্যাটারি-মাইক ফুঁকতে ফুঁকতে গিয়েছে গেরুয়া কোম্পানি। প্রচারের অন্য কোনও বিষয় নেই। গুজরাত ভোটে সেই চালু রসিকতার মতো ‘বিকাশ বাবু’কে খোঁজার দায় নেই। পাগড়ি এবং তাগড়াই গোঁফশোভিত ঘোষক বলতে বলতে গেলেন, “অনেক হয়েছে ভাইরা। এবার ঘর ওয়াপসি করো সবাই। আমরাও দু’তিন প্রজন্ম আগে মুসলমান ছিলাম। ভুল শুধরে নিয়েছিলেন বাপদাদারা।”

সাধে কি আর ক’দিন আগে যোগী আদিত্যনাথ এসেছেন এখানে! একদিকে বারমের জেলার তন্ত্রমঠের প্রধান মহন্ত প্রতাপ পুরী মহারাজ (বিজেপি প্রার্থী)। অন্যদিকে, এখানকার জনপ্রিয় পীর গাজি ফকিরের ছেলে তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক সালে মহম্মদ। দু’লক্ষ লোকের বসতি, যাঁদের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মুসলিম। ফলে চলছে মেরুকরণের টি-২০ ম্যাচ! কমল খানের কথায়, “ওরা উজলা গাঁওতে হিন্দু ঘরে ঘরে গিয়ে বলছে, সব জাতপাতের হিন্দুরা এক হোক। মুসলমানেরা দেশের বোঝা।”

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিশ বছর আগে যে গগনভেদী ‘বিইইপ’ আওয়াজে (যা এখনও কানে লেগে আছে পদ্মরাম মেঘাওয়ালদের) কেঁপে উঠেছিল মাটি, তার পর থেকে নানা রকম ত্বকের অসুখ, ক্যানসার বেড়েই চলেছে এখানে। জেলা, শহর, মফস্‌সল, গ্রাম আরও ব্যাজার হয়ে রয়েছে নোটবাতিল, জিএসটি-র জেরে। তার মধ্যে বহু যুগ ধরে শান্তিতে পাশাপাশি থাকা মানুষগুলোর মধ্যে বিভাজনের প্রচার ভাল ভাবে নিচ্ছেন না এই বড় মিঠাই দোকানটির মালিক পিন্টুজির মতো অনেক হিন্দুও।

মেরুকরণ যদি পয়লা হয়, তা হলে জাতীয়তাবাদ এবং নরেন্দ্র মোদীকে (বসুন্ধরা রাজে কদাপি নন) অন্য দুই কবচকুণ্ডল করে প্রচার করছে বিজেপি শিবির। রাজপুত এবং মুসলিম সমাজে প্রবল প্রভাবশালী গেরুয়াধারী প্রতাপ পুরী মহারাজের একটাই জবান। যা নাকি এই মুহূর্তে শুধু মারওয়াড় নয়, মেবার বা শেখাওয়াতি অঞ্চলেও বিজেপি-র ‘কলার টিউন’। এবং সেখানেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তুলে ধরা নেই। মহারাজের আপ্তবাক্য, “মোদীজীকে হৃদয়ে রেখে ভোট করুন। উনিশের আগের এই সেমিফাইনালে তাঁকে হেরে যেতে দেবেন না!”

Rajasthan Assembly Election 2018 Assembly Elections 2018 Rajashthan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy