Advertisement
E-Paper

লোকসভা ভোটের ‘ফাইনালে’ মোদীর সঙ্গে টক্করে তৈরি রাহুল

এ দিনের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উজ্জীবিত কংগ্রেস। দলের নেতাদের মতে, ২০১৮-র এই ভোটই ২০১৯-এর ভোটের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিল।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৩
ভোটের ফল বেরোনোর পরে রাহুল গাঁধী। ছবি: এএফপি।

ভোটের ফল বেরোনোর পরে রাহুল গাঁধী। ছবি: এএফপি।

পাঁচ বছর আগে এ রকমই এক ডিসেম্বর মাসে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা নির্বাচনে মোদী-ঝড়ে বিপুল ভোট বিজেপি ক্ষমতাসীন হয়েছিল। তখনও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যথেষ্ট অসন্তোষ। রায়পুরে নিজের বাসভবনে বসে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ বলেছিলেন, ‘‘গোটা দেশ এখন মোদীকে চাইছে। রাজ্যে দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে মানুষের অসন্তোষ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মোদী ঝড়ে আমিও জিতব।’’

এর পর ২০১৪। লোকসভায় নরেন্দ্র মোদী নামক এক অত্যাশ্চর্য রাজনৈতিক সুপারম্যানের অভিষেক। তার পর উত্তরপ্রদেশে জয় গড়ে তুলেছিল ‘মোদী মিথ’। ধারণা তৈরি হয়েছিল মোদী অপরাজেয়। সেই ধারণা প্রথম ধাক্কা খেয়েছিল বিহারের বিধানসভা ভোটে। এর পর একাধিক উপনির্বাচনে। আর আজ হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ‘সেমি ফাইনালে’ বসুন্ধরা রাজে ও রমন সিংহকে হারালেন রাহুল গাঁধী। কোণঠাসা করলেন শিবরাজ সিংহ চৌহানকে। ফলে আগামী বছর লোকসভা ভোটের ‘ফাইনালে’ নরেন্দ্র মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এলেন রাহুলই।

এ দিনের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উজ্জীবিত কংগ্রেস। দলের নেতাদের মতে, ২০১৮-র এই ভোটই ২০১৯-এর ভোটের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিল। ঠিক যেমন হয়েছিল ২০১৩ সালে। যে রাহুলকে একদা বিজেপি বলত ‘পাপ্পু’, আজ তাঁর সম্পর্কেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলছেন, ‘বিজেতার অভিনন্দন প্রাপ্য’।

আরও পড়ুন: থেমে গেল নরেন্দ্র মোদীর বিজয়রথ! সেমিফাইনালে ধাক্কা মোদীত্বে

কিন্তু মোদীর সেই ‘নামদার’ প্রতিপক্ষই যে শেষ পর্যন্ত তাঁদের ঘরে লড়াইটা পৌঁছে দিয়েছেন, তা কবুল করছেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের মতে, প্রথমত, এটা বিজেপি-বিরোধী ভোট। দলের শীর্ষ ম্যানেজারেরা এখন মুখ্যমন্ত্রীদের দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করলেও রাজ্য নেতারা বলছেন, প্রচারের প্রধান মুখ ছিলেন মোদী-ই। বলা হয়েছিল, কেন্দ্রে মোদী-বিজেপি। রাজ্যেও বিজেপি থাকলে আপনাদের লাভ। তবু চিঁড়ে ভিজল না।

দ্বিতীয়ত, এ বার ভোট হল মূলত হিন্দি বলয়ে। তিন রাজ্যে মোট লোকসভা আসনের সংখ্যা ৬৫। এখানে মায়াবতী প্রার্থী দিয়ে কংগ্রেসের যাত্রা ভঙ্গ করার চেষ্টা করেও তেমন লাভের গুড় পেলেন না। বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন ২০১৯-তে বিপদের ঘণ্টা আজ বেজেছে। কারণ, বিজেপি মানেই কিন্তু হিন্দি বলয়। দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে বিজেপি আজও দুর্বল। তেলঙ্গানার ফলেও তা টের পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: রামের নামেও ভোট দিল না সতীর রাজ্য!

তৃতীয়ত, হিন্দুত্ব-রামমন্দিরকে সামনে এনে আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সহায়তা নিয়েও এ বার ভোটে কাজ হয়নি। বিজেপি নেতারা আজ বুঝছেন, রুটি-রুজির ব্যবস্থা যদি না হয়, আর্থিক সঙ্কট যদি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়, তবে ধর্মীয় উন্মাদনা ভোটে সে ভাবে কার্যকর হয় না।

বিজেপির এক শীর্ষনেতা এ দিন বলেন, ‘‘রাহুল যে ভাবে মন্দিরে যাচ্ছেন, সোমনাথ থেকে কৈলাস মান সরোবর, তাতে বিজেপির সমস্যা হয়েছে। হিন্দি বলয়ে বিজেপির একচেটিয়া হিন্দুত্ব আর কাজ করছে না।
অতএব লোকসভা ভোটের মুখে বিপদের ঘণ্টাধ্বনি শুনলেন মোদী। এমনকি এই ভোটের ফলে ২০১৯-এর পর যখন রাজ্যসভার ভোট হবে, তখন কংগ্রেস সেখানে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এই ভোটের ফলাফলে আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, যে সব আঞ্চলিক নেতা মোদী-বিরোধী ফ্রন্ট গঠন করতে চাইলেও নিজেরা প্রধানমন্ত্রী হতে চান, আর তাই রাহুলের নেতৃত্ব মানতে নারাজ, আজ তাঁরাও দেওয়াল লিখন পড়তে পারছেন। ২০১৯-এ জোটের নেতৃত্ব দেবেন রাহুল গাঁধী।

Rahul Gandhi Assembly Elections 2018 MadhyaPradesh Assembly Election 2018 Chhattisgarh Assembly Election 2018 Rajasthan Assembly Election 2018 Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy