Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আডবাণীর তোপ, জেটলির খোঁচা মোদীকে

অবশেষে শাসক শিবিরেই ধৈর্যের বাঁধে চিড়! সরসারি নোট-কাণ্ড নিয়ে না হলেও নরেন্দ্র মোদী জমানায় আড়াই বছর ধরে জমা হওয়া ক্ষোভ যেন আজ উগড়ে দিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।

দলের বৈঠকে মোদী ও রাজনাথের সঙ্গে আডবাণী। বুধবার। ছবি: প্রেম সিংহ।

দলের বৈঠকে মোদী ও রাজনাথের সঙ্গে আডবাণী। বুধবার। ছবি: প্রেম সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৫
Share: Save:

অবশেষে শাসক শিবিরেই ধৈর্যের বাঁধে চিড়! সরসারি নোট-কাণ্ড নিয়ে না হলেও নরেন্দ্র মোদী জমানায় আড়াই বছর ধরে জমা হওয়া ক্ষোভ যেন আজ উগড়ে দিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। ৮৯ বছর বয়সি প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী ফেটে পড়লেন নিজেরই দলের বিরুদ্ধে। আজ দিনভর আডবাণীর সেই ঝাঁঝ সামলানার পর বিকেলে আবার প্রধানমন্ত্রীর অস্বস্তি বাড়ান সরকারে তাঁর সেনাপতি অরুণ জেটলি। কৌশলে নোট-বাতিলের সুফলের সঙ্গে কুফলের দায়ও ঠেলে দেন একক ভাবে মোদীরই কাঁধে!

দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আজ এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী জেটলি বলেন, ‘‘নোট বাতিলের দায় বহনের জন্য চওড়া কাঁধ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।’’ ঠারেঠোরে তিনি বুঝিয়ে দেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত একা প্রধানমন্ত্রীর। এর কুফলও ভোগ করবেন তিনি একাই। যা শুনে দলের এক নেতা সন্ধেয় বললেন, ‘‘সকাল থেকে এক আডবাণী সামাল দিতেই জেরবার, বিকেলে আবার নতুন বোঝা!’’

আডবাণী অবশ্য এ দিন সরাসরি মোদীকে নিশানা করেননি। তাঁর ক্ষেত্রে বিস্ফোরণটি ঘটে নোট-কাণ্ড নিয়ে হৈ-হল্লার জেরে সংসদ অচল হয়ে থাকাকে উপলক্ষ করে। এই অচলাবস্থার জন্য আডবাণী আজ বিরোধীদের সঙ্গে একই কাঠগড়ায় দাঁড় করান সরকার পক্ষকে। রেয়াত করেননি সংসদীয় মন্ত্রী, এমনকী বিজেপি সাংসদ থেকে স্পিকার হওয়া সুমিত্রা মহাজনকেও! যা বলার সবটাই বলেছেন লোকসভায়, এমন ভাবে যাতে সাংবাদিকদের তা কানে আসে। যদিও সভা মুলতুবির পরে সেই ক্রুদ্ধ-বচনের একটি শব্দও ঠাঁই পায়নি সভার কার্যবিবরণীতে।

সংসদের এ বারের অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে যেমনটি হয়ে চলেছে, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ দিনও হট্টগোলে বারবার মুলতুবি হয় লোকসভা। মধ্যাহ্নভোজের আগে দ্বিতীয় বার মুলতুবি হতেই পাশে বসা সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারের উপরে ক্ষোভ উগড়ে দেন আডবাণী। বলেন, ‘‘সংসদীয় মন্ত্রী বা স্পিকার— কেউই সংসদ চালাচ্ছেন না। সংসদ চলছে নিজের মতো!’’ এর আগেই লোকসভার টেবিল অফিসারদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, কত ক্ষণের জন্য মুলতুবি হল? তাঁরা জানান, বেলা দুটো পর্যন্ত। এর পরে উঁচু গলাতেই আডবাণীর খেদোক্তি, ‘‘সংসদটা পাকাপাকি বন্ধ করে দিলেই তো হয়!’’

সভা মুলতুবির পরে এ সব বলায় তা রেকর্ডে যাচ্ছে না। কিন্তু উপরে বসে থাকা সাংবাদিককুল দিব্য শুনতে পারছেন তাঁর কথা। আডবাণীও যেন সাংবাদিকদের শোনাতে চাইছিলেন। অনন্ত কুমারকে ধমক দেওয়ার সময় তাঁদের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন। তাঁকে শান্ত করতে কানে কানে কিছু বলেন অনন্ত কুমার। সাংবাদিকরা শুনছেন— সম্ভবত এমন কিছুই বলে থাকবেন তিনি। এতে আরও তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন আডবাণী। বলেন, ‘‘তাতে কী হয়েছে? আমি সকলের সামনে বলব। স্পিকারের কাছে গিয়েও বলব। (সংসদে কাজকর্ম না হওয়ার জন্য) সরকার ও বিরোধী দু’পক্ষই সমান দোষী।’’

সকালে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে মোদী বরাবরের মতো সংসদ না চলার দায় বিরোধীদের ঘাড়েই ঠেলে দেন। আশ্বাস দেন, ডিজিটাল লেনদেন যত বাড়বে, তত দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বিরোধীদের মুখোশ খুলে দেওয়ার ডাক দেন। ওই বৈঠকে পাশে বসা রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মোদী যখন বারবার শলা-পরামর্শ করতে ব্যস্ত, সে সময় তাঁর অন্য পাশে চুপচাপই বসে ছিলেন বর্ষীয়ান আডবাণী। ঠিক যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে এসে ইস্তক মোদী তাঁকে রাজনৈতিক ভাবেও পাশে সরিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরে লোকসভায় গিয়ে আডবাণী যে ক্ষেপে গিয়ে দলকেই বিব্রত করবেন, তার আঁচটুকু পায়নি দল।

নোট-বাতিলের জেরে মানুষের ভোগান্তির জেরে বিরোধীরা যখন এককাট্টা, আডবাণী তখন নিজেদের দিকেই আঙুল তোলায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপি। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে দেখে বেঙ্কাইয়া নায়ডু, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মতো নেতারা তড়িঘড়ি আডবাণীকে গাড়িতে বসিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পাছে সংবাদমাধ্যমের কাছে ফের মুখ খুলে আরও বিপদ বাড়ান দলের।

এর পরেই নজর ঘোরাতে আসরে নামেন বেঙ্কাইয়া, অনন্ত কুমাররা। বোঝানোর চেষ্টা করেন, আডবাণী আসলে তোপ দেগেছেন বিরোধীদের দিকেই। অনন্ত কুমার ব্যাখ্যা দেন, ‘‘আডবাণীজির বয়স ৮৯ বছর। আমি তাঁরই হাতে গড়া। বাবার মতো তিনি যা খুশি বলতে পারেন।’’ অনন্ত কুমারদের ভাবটি এমন, যেন বয়সের ভারেই অসংলগ্ন কথা বলছেন আডবাণী। আডবাণী-ঘনিষ্ঠরা কিন্তু বলছেন, এ ভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে লাভ নেই। আডবাণী মুখ খুললে মোদীর বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না। আজ অনন্ত কুমারের উপরে রোষ আছড়ে পড়লেও মূল নিশানা মোদীই। জেনে-বুঝেই তিনি সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে ওই কথা বলেছেন। ঘায়ে নুনের ছিঁটে দিতে কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘আডবাণীজিকে ধন্যবাদ। তিনি সকলের মনের কথা বলেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arun Jaitley Narendra Modi L. K. Advani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE