Advertisement
E-Paper

রোল কলেই শৌচালয়ের খতিয়ান

রোল নম্বর ১২—ইয়েস স্যার। আমার বাড়িতে টয়লেট আছে। রোল নম্বর ১৩— ইয়েস স্যার। আমার বাড়িতে টয়লেট নেই।এই ভাবে ক্লাসে রোল কল করার সময়ই ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলতে হচ্ছে, কার বাড়িতে শৌচালয় আছে, আর কার বাড়িতে নেই।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০৩:২১

রোল নম্বর ১২—ইয়েস স্যার। আমার বাড়িতে টয়লেট আছে।

রোল নম্বর ১৩— ইয়েস স্যার। আমার বাড়িতে টয়লেট নেই।

এই ভাবে ক্লাসে রোল কল করার সময়ই ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলতে হচ্ছে, কার বাড়িতে শৌচালয় আছে, আর কার বাড়িতে নেই। প্রতিদিনের রোল কলে একই ছবি।

আর সেই অনুযায়ী একটা পরিসংখ্যান তৈরি করে ফেলছে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত। গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণের লক্ষ্যে এরকমই এক অভিনব পদ্ধতি নিয়েছে হাজারিবাগের চুরচু ব্লক। হাজারিবাগের জেলাশাসক মুকেশ কুমারের কথায়, “চুরুচু ব্লকের অধীনে আটটি পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েত এলাকায়, প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণের লক্ষ্যে আমরা এই পথটাই বেছে নিয়েছি। এই এলাকার সব স্কুলেই এই পদ্ধতিতে রোল কল করে কাদের বাড়িতে শৌচালয় আছে ও কাদের বাড়িতে শৌচালয় নেই তার একটা হিসেব নেওয়া হচ্ছে।”

বিষয়টি যে রকম অভিনব সেরকমই কার্যকর বলে দাবি মুকেশ কুমারের। তাঁর কথায়, “এই পদ্ধতিতে রোল কল শুরু হয়েছে সপ্তম শ্রেণি থেকে। যারা বলছে তাদের বাড়িতে শৌচালয় নেই তাদের মা, বাবাকে স্কুলের পেরেন্ট-টিচার মিটিংয়ে ডাকা হচ্ছে।’’ ওই বৈঠকেই বাবা-মাদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, কেন শৌচালয় নেই, তা তৈরির কী অসুবিধা ইত্যাদি। বিপিএল শ্রেণিভুক্ত কোনও পরিবারের যদি শৌচালয় না থাকে এবং তাঁরা যদি তার আগে শৌচালয় নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান না পেয়ে থাকেন তবে তাঁদের তৎক্ষণাত্ শৌচালয় নির্মাণের জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে জেলাশাসক জানান। আর যদি তাঁরা টাকা পেয়েও শৌচালয় তৈরি না করে থাকেন, তবে তার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। মেটানো হচ্ছে সে সমস্যাও।

হাজারিবাগ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রামগড় জেলার সীমাবর্তী চুরচু ব্লক। মাওবাদী প্রভাবিত এই ব্লকের প্রতিটি গ্রামই পিছিয়ে পড়া। প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত, কয়েকটি স্কুল রয়েছে। জেলাশাসক জানান, প্রত্যন্ত এই ব্লক থেকেই শুরু হচ্ছে হাজারিবাগ জেলার প্রতিটি ঘরে শৌচালয় নির্মাণ অভিযান। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘চমকা চুরচু’—উজ্জ্বল চুরচু। ছ’মাসের মধ্যে এই ব্লকে ৭ থেকে ৮ হাজার শৌচালয় তৈরি করাই আপাতত জেলা প্রশাসনের লক্ষ্য।

‘চমকা চুরচু’ অভিযানে সাড়া পড়েছে স্কুলগুলিতেও। চুরচু ব্লকের চানহি হাইস্কুলের এক শিক্ষক জানালেন, যাদের বাড়িতে শৌচালয় নেই তারা যখন ক্লাসে রোল কলের সময় তাদের বন্ধুদের সামনে চেঁচিয়ে বলছে, তখন একটু অপ্রস্তুতও হয়ে পড়ছে। ফলে তারা নিজেরাই বাড়ি গিয়ে তাদের মা, বাবাকে শৌচালয় তৈরির জন্য চাপ দিচ্ছে। অনেক সময়ই আমাদের আর নতুন করে বাড়িতে বাড়িতে বলতে হচ্ছে না। তাদের মা, বাবারা নিজেরাই এসে জানতে চাইছেন, শৌচালয় নির্মাণের জন্য কী করতে হবে। আর জেলাশাসক মনে করেন, রোল কলের সময়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে তাদের বাড়িতে শৌচালয় আছে কিনা জানতে চাওয়ায় ওদের মধ্যেও এই বয়সেই একটা সচেতনতা-বোধ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। খোলা জায়গায় শৌচক্রিয়া করলে যে কত রকমের অসুখ করতে পারে সেই সচেতনতাও তৈরি হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। কোনও দিনই আর তারা খোলা জায়গায় শৌচক্রিয়া করবে না বলে জানাচ্ছে।

চানহি হাই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী অনিতা কুমারী। সে তো বলেই ফেলল, “রোল কলের সময় আমার বাড়িতে ‘শৌচালয় নেই’ বলতেই আমার খুব লজ্জা লাগছিল। বাড়ি গিয়েই মা, বাবাকে বলেছি, মার্চ মাসের মধ্যেই শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু করতে হবে।’’ সে খুশি, জানাল, ‘‘আমার জেদের কাছে বাবা হেরে গিয়েছে। বাড়িতে শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।”

toilet attendance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy