বনতারার বন্যপ্রাণী হাসপাতাল এবং পশুচিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে প্রাণীদের শুশ্রূষার জন্য এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আইসিইউ-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বন্যপ্রাণীদের জন্য অ্যানাস্থেশিয়া, কার্ডিয়োলজি, নেফ্রোলজি, এন্ডোস্কোপি, দন্ত্যচিকিৎসার ব্যবস্থা। এই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন মুকেশ-পুত্র অনন্ত। তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে পুরোটা দেখাশোনা করেন।
বনতারার বিশেষত্ব হল এর দ্বৈত কাঠামো— এক দিকে এক্স সিটু সুরক্ষা অর্থাৎ, প্রাণীকে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল থেকে বাইরে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, পুনর্বাসন দেওয়া এবং ইন সিটু, যেখানে ওই প্রাণীদের আবার তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে ফেরানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এই দুই প্রক্রিয়াকে একত্রে বাস্তবায়িত করতে পৃথিবীর খুব কম সংস্থাই পারে। কিন্তু বনতারা পেরেছে।
অনন্তের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ‘গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট রবিন গ্যাঞ্জার্ট। তখন তাঁর বক্তব্যই স্পষ্ট করে দেয় কেন এই সম্মান এত বিশেষ। গ্যাঞ্জার্টের কথায়, ‘‘বনতারার এই সম্মান অর্জন কেবল প্রাণীদের যত্ন করার জন্য নয়, বরং প্রতিটি প্রাণীকে যথাযথ মর্যাদা, নিরাময় এবং আশা প্রদানের জন্য দেওয়া হয়েছে। এ এক গভীর নিষ্ঠার প্রতিফলন। এই দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই মহান।’’
অন্য দিকে পুরস্কার গ্রহণের সময় অনন্তের নিজের বক্তব্যেই প্রকাশ পায় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির মূলনীতি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশেষ সম্মান পাওয়ার পর অনন্ত বলেন, ‘‘আমি এই সম্মানের জন্য গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটিকে ধন্যবাদ জানাই। এ সম্মান আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমাদের চিরন্তন দর্শন— ‘সর্বভূত হিত’, অর্থাৎ, সকল প্রাণীর কল্যাণ নিশ্চিত করা।’’
অনন্ত আরও বলেন, ‘‘প্রাণীরা আমাদের ভারসাম্য, নম্রতা এবং বিশ্বাস শেখায়। বনতারা শুরুর উদ্দেশ্য সমস্ত প্রাণীকে মর্যাদা দেওয়া, যত্ন করা এবং সেবার চেতনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। সংরক্ষণ যে কেবল আগামী দিনের জন্য প্রয়োজনীয় তেমনটা নয়। এটি আমার কাছে ধর্মপালনের মতো, যা আমাদের আজই করতে হবে।’’ অনন্তের কথাতেই স্পষ্ট যে, প্রাণী সংরক্ষণ তাঁর কাছে কোনও প্রকল্প নয়, বরং নৈতিক দায়িত্ব। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং পরিবেশবোধের সঙ্গে গভীর ভাবে মিশে আছে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি।
অনন্তকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করার জন্য যে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ার্ভেশন অফ নেচার) স্পিসিস সারভাইভাল কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জন পল রডরিগেজ়, কলসাল বায়োসায়েন্সেসের প্রধান প্রাণীকর্তা ম্যাট জেমস, নক্সভিল চিড়িয়াখানার প্রেসিডেন্ট তথা সিইও উইলিয়াম স্ট্রিট, কলম্বাস চিড়িয়াখানার প্রসিডেন্ট তথা সিইও টমাস শ্মিড, ব্রুকফিল্ড চিড়িয়াখানা শিকাগোর প্রসিডেন্ট তথা সিইও মাইকেল অ্যাডকেসন এবং সমুদ্রজীববিজ্ঞানী ক্যাথলিন ডুডজিনস্কি।
এ ছাড়াও সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বেশ কয়েক জন বিখ্যাত সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ। এঁদের মধ্যে অন্যতম নীলম খায়ের, ভিবি প্রকাশ এবং কেকে শর্মা। এঁদের তিন জনই ভারতে বন্যপ্রাণী গবেষণা এবং সংরক্ষণের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এঁরা সকলেই কুর্নিশ জানিয়েছেন অনন্তের প্রচেষ্টাকে। বনতারাকে আগামী দিনে সংরক্ষণ গবেষণার ‘রেফারেন্স মডেল’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন তাঁরা।
অনন্তের আগে ‘গ্লোবাল হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপকদের তালিকায় রয়েছে শার্লি ম্যাকলেইন, জন ওয়েন এবং বেটি হোয়াইটের মতো হলিউড কিংবদন্তিদের নাম। জন এফ কেনেডি এবং বিল ক্লিনটনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও এই পুরস্কার পেয়েছেন। সেই তালিকাতেই নাম জুড়ল তরুণ প্রজন্মের অগ্রদূত অনন্তের। ভারতকে বিশ্বদরবারে বিশেষ জায়গাও করে দিল তাঁর বনতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy