Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bajrang Dal

Christmas Celebration: বড়দিন পালন কেন, চড়াও বজরঙ্গ দল!

কর্নাটকের তুমাকুরু কুনিগল তালুকের ওই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই বাদ-বিতণ্ডার খবর পেয়ে তারা ছুটে যায় ঘটনাস্থলে।

—প্রতীকী ছবি

  সংবাদ সংস্থা 
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৪২
Share: Save:

হিন্দু হয়ে খ্রিস্টানদের মতো বড়দিনের উৎসবে মেতে উঠেছিল তারা— এই ‘অপরাধ’ রুখতে গ্রামের এক দলিত পরিবারের বাড়িতে সদলবলে হানা দিয়েছিল বজরঙ্গ দলের কর্মী বলে পরিচিত কয়েক জন যুবক। তবে এই ‘অবাঞ্ছিত অতিথিদের’ চোখরাঙানির তোয়াক্কা না-করে পাল্টা গর্জে ওঠেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত মহিলারা। ওই মহিলাদের তর্জনগর্জনের সামনে শেষমেশ নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় গ্রামে ‘মাতব্বর’ বলে পরিচিত ওই দলটি। ভাইরাল হয়েছে ঘটনাটির ভিডিয়ো।

কর্নাটকের তুমাকুরু কুনিগল তালুকের ওই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ এই বাদ-বিতণ্ডার খবর পেয়ে তারা ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। দু’তরফই তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছিল। তবে লিখিত ভাবে কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি বলেই জানান আধিকারিকেরা। ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই পরিবারটিতে বড়দিন উপলক্ষে কোনও এক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল এবং কয়েক জন যুবক গিয়ে তা ভন্ডুল করার চেষ্টা করে। তর্কাতর্কি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল তবে কোনও হাতাহাতি বা মারপিটের খবর নেই। আমরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা দায়ের করে তদন্ত চালাচ্ছি।’’

ঘটনার সূত্রপাত যাঁর হাতে, বজরঙ্গ দলের সেই নেতা রামু বজরঙ্গি জানান, গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের নজরে আসে যে, গ্রামের বাসিন্দা রামচন্দ্র এবং তাঁর পরিবারের সদস্যেরা গত এক মাসে খ্রিস্টান ধর্মমতে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। বিষয়টি বজরঙ্গ দলের এক দল সদস্যের কানে আসতেই বেশ কয়েক জনকে নিয়ে মঙ্গলবার ওই বাড়িতে চড়াও হয় তারা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শুরু হয় তর্কাতর্কি।

প্রথমেই রামচন্দ্রের পরিবারের কাছে তারা প্রশ্ন রাখে, হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও বড়দিনের উৎসব কেন পালন করছে তারা। যার উত্তরে সদস্যেরা জানান, তাঁরা খ্রিস্টধর্মেও বিশ্বাস রাখেন এবং বড়দিন পালনে ভুল কিছু দেখেন না। এর পরে ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে বাড়ির মহিলাদের উদ্দেশে ওই যুবকেরা প্রশ্ন ছুড়ে দেন যে, ‘‘হিন্দু হয়েও সিঁদুর পরেননি কেন?’’ ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ওই মহিলাদের মধ্যে নন্দিনী নামে এক জন বলেন, ‘‘আমরা কাকে পুজো করব বা করব না, তা একান্তই আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। বজরঙ্গ দলের এতে কিছু বলার থাকতে পারে না। তা ছাড়া, আমরা সিঁদুর পরব কি পরব না, তা নিয়েই বা প্রশ্ন তোলার আপনারা কে? আমরা থালি (হিন্দু মতে বিবাহিত মহিলারা এই হার পরেন) পরে আছি কেন? আপনাদের কী মনে হয়?’’ এর পরেও ওই যুবকেরা প্রশ্ন তোলেন, হিন্দু হয়েও কেন ধর্ম পরিবর্তন করেছে পরিবারটি? উত্তরে বাড়ির মহিলারা বলেন, তাঁরা হিন্দুই। তবে খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। সঙ্গে তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমাদের ধর্ম পরিবর্তন হল কোথায়? তার প্রমাণই বা কই? আমরা বড়দিন পালন করব কি না, তা আমাদের ইচ্ছে!’’ এই ঘটনাই প্রমাণ করে, খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী হয়েও সরকারের থেকে সংশ্লিষ্ট শংসাপত্র না নেওয়ায় হিন্দুত্ববাদীদের কোপের মুখে পড়ছেন এক দল মানুষ। অভিযোগ, এমনকি এক-এক সময়ে পুলিশের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের।

অন্য দিকে, ওই রাজ্যেরই ইলকাল শহরের এক স্কুলে বড়দিন উপলক্ষে মাংস খাওয়ানোয় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দিলেন বাগলকোট জেলার ব্লক এডুকেশন অফিসার। অভিযোগের আঙুল যে-দিকে, সেই সেন্ট পলস স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো সংশ্লিষ্ট বিবৃতি অনুযায়ী, স্কুলে মাংস খাওয়ানোর বিষয়টি সামনে এসেছে। এতে অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। ফের নোটিস না-পাওয়া পর্যন্ত স্কুলটি বন্ধই রাখতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bajrang Dal christmas Hinduism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE