কারও দাবি, এনআরসি ফর্ম জমার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়াতে হবে। কেউ বলছেন, মামলাগুলির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা হোক এনআরসি প্রক্রিয়া। সুপ্রিম কোর্ট বা সরকারের তরফে এ পর্যন্ত নতুন কোনও ঘোষণা হয়নি। ফলে ৩১ জুলাই-ই আবেদন পত্র জমার শেষ তারিখ ধরে উদ্বেগে সাধারণ মানুষ।
হাতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ। এখনও বহু গ্রামে আবেদন পত্র পৌঁছয়নি। কবে ফর্ম পৌঁছবে, আদৌ পৌঁছবে কিনা, এই সব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব মিলছে না। উত্কণ্ঠিত মানুষ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। অনেকে পড়ছেন দালালদের খপ্পরে। শহরগুলিতে অধিকাংশ মানুষ ফর্ম পেয়েছেন। সমস্যায় গ্রামের লোকজন। কে বিএলও, কোথায় সেবাকেন্দ্র তা বের করতেই হিমসিম খাচ্ছেন তাঁরা। বড় কর্তাদের জিজ্ঞেস করলে জবাব মেলে, বিএলও-দের হিসেব করে ফর্ম দেওয়া হয়েছে। কারও না পাওয়ার কথা তো নয়। নইলে পরামর্শ মেলে, সেবাকেন্দ্রে যান। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ অবশ্য এনআরসি সংক্রান্ত সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখার জন্য আজই প্রবীণ বিধায়ক ভূমিধর বর্মনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
কাছাড় জেলার সোনাই সার্কেলের সুন্দরী পঞ্চায়েতের কচুদরম, গাঙ্গুলিগ্রাম ও বাগাডুরি এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে এনআরসি-র আবেদনপত্র একেবারেই পৌঁছয়নি। ফর্ম পাননি সোনাই পঞ্চায়েতের ১, ২, ৩, ৪, ৭, ৮, ৯ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডেরও অনেকে। এক এক জায়গায় বসে এক এক এলাকার ফর্ম বিলি করেছেন বিএলও-রা। যারা খবর পেয়েছে, গিয়ে সংগ্রহ করেছে। অনেকে বিএলও-র নাম-ধাম সংগ্রহ করে তাঁদের বাড়ি থেকে ফর্ম এনেছে। একই অভিযোগ অন্যান্য এলাকাতেও।
এনআরসি-র আবেদন নিয়ে গ্রামেগঞ্জের জনজীবন কার্যত বিপর্যয়ের মুখে। যারা ফর্ম পেয়ে গিয়েছে, কী ভাবে তা পূরণ করবে, তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। কাগজপত্র জোগাড় করাও কম ঝামেলার নয়। ফর্ম যারা পায়নি, তারা ভেবে পাচ্ছে না কী ভাবে তা সংগ্রহ করবেন। শেষ পর্যন্ত না পেলে কী হবে, তা ভেবে অনেকে শিউরে উঠছে।
বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এখনও ৩০ শতাংশ মানুষ ফর্ম পায়নি। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত ফর্ম বিলি ও জমার কাজ কোনও মতেই শেষ হবে না। তাদের দাবি, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হোক। দলের কাছাড় জেলা সভাপতি কৌশিক রাই ও প্রদেশ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় আজ দিল্লি গিয়েছেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে এনআরসি নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের সমস্যাগুলি তাঁর সামনে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন। দেশের রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গেও দেখা করবেন তাঁরা। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আর্জি জানাবেন। একই দাবি জানিয়েছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। তারা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে স্মারকপত্র পাঠিয়েছেন।
এ দিকে, ফর্ম নিয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন না হতে পরামর্শ দিয়েছেন কাছাড়ের এনআরসি নোডাল অফিসার এস এন সিংহ। তিনি জানান, ‘‘৮৫ শতাংশ মানুষ এর মধ্যে ফর্ম পেয়ে গিয়েছেন। আজই গুয়াহাটি থেকে অতিরিক্ত ফর্ম এসেছে। এখন আর ফর্মের অভাব হবে না।’’ প্রথম দিকে ফর্ম জমার কাজ ধীরে চললেও গত কয়েকদিনে তার গতি বেশ বেড়েছে বলেই দাবি করেন তিনি। তাঁর হিসেব, ১২-১৩ শতাংশ আবেদনপত্র জমাও পড়েছে। আগামী তিন সপ্তাহে বাকি কাজ শেষ করতে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি সাব-কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন।
কমিটির নেতৃত্ব দেবেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সাত বারের বিধায়ক ভূমিধর বর্মন। এনআরসি নিয়ে মানুষকে যেন ভুগতে না হয় তা নিশ্চিত করতে গগৌ মুখ্যসচিবকেও নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy