জাতীয় বিমান চলাচল নীতির বিরোধিতায় সরব হল বরাকের ব্যবসায়ী সমাজ।
শিলচর-সহ সমগ্র দক্ষিণ অসম বর্তমানে যোগাযোগের দিক থেকে চরম বেহাল অবস্থায়। ১৯ বছর অপেক্ষার পর ব্রডগেজ লাইন নির্মিত হলেও ৪ মাসের বেশি চলেনি। এখন বাইরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। সড়কপথে প্রাণ হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়। কয়েক দিন আগেও দুর্ঘটনায় ৩০ জনের বেশি যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে বিমানে চড়া বরাকের মানুষের কাছে বিলাসিতা নয়। বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষকেও আকাশে উড়তে হয়।
সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি অব অ্যাসোসিয়েশন নামে সাত সংগঠনের জোট অভিযোগ করেছে— জাতীয় বিমান চলাচল নীতি তাঁদের একেবারেই আশ্বস্ত করতে পারেনি। শুধু একঘণ্টার বিমানযাত্রাকে ‘রিজিওনাল কানেকটিভিটি স্কিমে’ আনা হলে শিলচর-কলকাতা বিমানযাত্রীরা তা থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ এখান থেকে কলকাতা যেতে বা আসতে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় লাগে। তাঁদের আর্জি, সময়ে না বেঁধে স্কিমের সুবিধা পাওয়ার জন্য ৭৫০ কিলোমিটার দূরত্ব বেঁধে দেওয়া হোক। কারণ নানা কারণে বিমানযাত্রায় সময় কম-বেশি লাগে। ছোট বিমানবন্দরে ওঠা-নামাতেও অনেকটা সময় লেগে যায়। কিন্তু দূরত্ব যেহেতু স্থির, এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না। সে ক্ষেত্রে শিলচর-কলকাতা বিমান স্কিমের আওতায় এসে আড়াই হাজার টাকায় বিমান চড়ার সুযোগ মিলবে।
এই স্কিম যে এই অঞ্চলে অত্যন্ত জরুরি, নানা ভাবে তা ব্যাখ্যা করেন সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি অব অ্যাসোসিয়েশন-এর আহ্বায়ক (প্রশাসন) অসিত দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে শিলচর থেকে কলকাতা কি গুয়াহাটি, একেকটি টিকিটের মূল্য ১০-১১ হাজার টাকা। এমন চড়া দরের পরও এয়ার ইন্ডিয়া বা জেট কানেক্ট এই রুটে বিমান বাড়ায় না। নেই অন্য কোনও সংস্থার বিমানও।’’ তিনি বলেন, ‘‘নৈশ অবতরণের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা শিলচর বিমানবন্দরে রয়েছে। কিন্তু বিমানবাহিনীর আপত্তিতে তাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিনে-দিনে কাজ সেরে যাঁরা ফিরে যেতে চান, তাঁরা এই রুটে আসতে চান না। এতে ব্যবসায়ীদের বিরাট লোকসান হচ্ছে।’’ তিনি জানান, বিভিন্ন সংস্থার পদাধিকারী বা যন্ত্রপাতি সারাইয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে আনা যায় না। সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় উন্নত চিকিতসার জন্য কোনও রোগীকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময়।
তাই কো-অর্ডিনেশন কমিটির আর্জি, নতুন নীতি চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার আগে আরও একবার বিস্তৃত সমীক্ষা করা হোক। বরাকের মানুষের উপকারে আসে, এমন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হোক। এ সব নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। সংগঠনের কর্মকর্তা বিবেক পোদ্দার বলেন, ‘‘এই জায়গায় কংগ্রেস-বিজেপি সবাই একই ধরনের। এত দিনেও কোনও রাজনৈতিক দল এই ইস্যুতে সরকারকে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করতে পারেনি।’’
আরেক সদস্য নীলোৎপল চৌধুরীর কথায়, ‘‘শিলচর থেকে কলকাতা, গুয়াহাটি ও দিল্লি যাওয়ার প্রচুর যাত্রী রয়েছে। টিকিট চাইলেই দেখা যায়, চড়া দাম। না হলে জবাব মেলে, অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এর পরও বিমান সংস্থাগুলি এই অঞ্চলকে অবহেলিত করে রেখেছে।’’ তাঁর মতে, এটা রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু নয়। নীলোৎপলবাবুর আরও অভিযোগ, শিলচর বিমানবন্দরে এক কাপ চা কিনে খাওয়ার সুবিধা নেই। মা তাঁর শিশুকে দুধ খাওয়াবেন, সে ব্যবস্থাও করতে পারেননি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
শিলচর থেকে এই সময়ে শুধু এয়ার ইন্ডিয়া এবং জেট এয়ারওয়েজ-এর বিমান চলে। দুটো সংস্থাই কলকাতা ও শিলচরের মধ্যে প্রতি দিন একটি করে বিমান চালায়। জেট এয়ারওয়েজ সাত দিনই ৬৮ আসনের এটিআর চালায়। এয়ার ইন্ডিয়া চার দিন চালায় ১৪৪ আসনের বোয়িং। তিন দিন ৪৮ আসনের এটিআর। শিলচর ও গুয়াহাটির মধ্যে বিমান সংযোগ ধরে রেখেছে একমাত্র জেট এয়ারওয়েজ। তাও দৈনিক একটি ৬৮ আসনের বিমান চালায় তারা।
কো-অর্ডিনেশন কমিটি ২৬ ও ২৭ জুনের কিছু তথ্য-পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন। দেখা যায়, শিলচর-কলকাতা ৫১৭ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ভাড়া ছিল মাথাপিছু ১৩ হাজার ১৭৯ টাকা। গুয়াহাটি-কলকাতা ৫২৮ কিলোমিটারের জন্য ৩ হাজার ৩৮২ টাকা। শিলচর-গুয়াহাটি ১৮২ কিলোমিটার আকাশপথের জন্য গুনতে হয়েছে মাথাপিছু ১০ হাজার ৮৭৯ টাকা। কলকাতা-বেঙ্গালুরু ১ হাজার ৫৬০ কিলোমিটারের জন্যও এত ভাড়া নয়। ওই রুটে সে-দিন দিতে হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৬৪৯ টাকা। ২৭ তারিখেও একই চিত্র। বিমান চলাচল নীতি চূড়ান্ত করার আগে এইসব বিষয় খেয়াল রাখতে তাঁরা মন্ত্রকের উদ্দেশে অনুরোধ জানান। কমিটির চেয়ারম্যান সুমন্ত্রসারথি এন্দ বলেন, শিলচর থেকে কলকাতা ও গুয়াহাটি আসা-যাওয়ার বিমান যেন সরকারের রিজিয়নাল কানেকটিভিটি স্কিম থেকে বঞ্চিত না-হয়। নিখিল রায়, অংশুকুমার রায়, বুদ্ধদেব দাস, প্রণব পালচৌধুরী, নন্দদুলাল সাহা আর্জি জানান, সময়ে না মেপে এই সুবিধে সাড়ে সাতশো কিলোমিটার দূরত্বে বেঁধে দেওয়া হোক।
তবে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার শিলচর ডিরেক্টর নন্দকিশোর দেওলি জানান, নতুন নীতিতে বিভিন্ন ধারা-উপধারা-অনুচ্ছেদ রয়েছে। রিজিয়নাল কানেকটিভিটিতেও বহু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ওইসব শর্ত মানলেই আড়াই হাজার টাকা ভাড়ার সুবিধে মিলবে। ফলে অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের পাশাপাশি রাজ্য সরকারকেও কাজি করানোর প্রয়োজন রয়েছে। বিমানের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তিনি নিজেও আগ্রহী বলে ডিরেক্টর দেওলি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সকাল ১০টার পর এই বিমানবন্দর পুরো ফাঁকা পড়ে থাকে। যাত্রীভিড় থাকলে আরও বিমান চালানো যেতেই পারে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy