Advertisement
০২ মে ২০২৪

কংগ্রেস টিকিটের দৌড়ে এগিয়ে বীথিকা

কংগ্রেসের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হয়নি এখনও। তবু শিলচরের নির্বাচনী হাওয়ায় বাড়তি উত্তাপ এনে দিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক বীথিকা দেব। তাঁর নামই টিকিট প্রাপকদের দৌড়ে শীর্ষে রেখেছে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি। বিজেপির দিলীপকুমার পালের সঙ্গে টেক্কা দিতে তাঁরা বীথিকা দেবকে প্রার্থী করতে চান। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০৪:৩৬
Share: Save:

কংগ্রেসের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হয়নি এখনও। তবু শিলচরের নির্বাচনী হাওয়ায় বাড়তি উত্তাপ এনে দিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক বীথিকা দেব। তাঁর নামই টিকিট প্রাপকদের দৌড়ে শীর্ষে রেখেছে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি। বিজেপির দিলীপকুমার পালের সঙ্গে টেক্কা দিতে তাঁরা বীথিকা দেবকে প্রার্থী করতে চান। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ দেব। তালিকায় না থাকলেও দলীয় বিভিন্ন সমীক্ষায় এসেছে প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিকের নামও। কংগ্রেস নির্বাচন কমিটি দিল্লিতে প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করবে। দলীয় সূত্রে খবর, কংগ্রেস নেতৃত্ব সুস্মিতা দেবের দিদি ভারতী দেবের কথাও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন।

শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেবের কাছে স্বস্তির কথা, মন্ত্রী গৌতম রায় এ বার শিলচর আসনের টিকিট নিয়ে নাক গলাননি। সঙ্গে অস্বস্তির কথা, বীথিকা দেবের নাম চর্চায় আসতেই তাঁর নিজের অনুগামীরা বিরোধিতায় প্রস্তুত হচ্ছে।

সন্তোষমোহন দেবের পত্নী, সুস্মিতা দেবের মা বীথিকা দেব ২০০৬ সালে এই আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। পরের বার মেয়ের হাতে আসন ছেড়ে তিনি অসুস্থ স্বামীর শুশ্রুষায় সময় দেন। সুস্মিতা সাংসদ হয়ে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলে শিলচরে উপনির্বাচন হয়। কিন্তু বীথিকা দেব আর পরিষদীয় রাজনীতিতে আসতে চাননি। পরবর্তী ভোটচর্চায় সাংসদ-মায়ের নাম হারিয়েই গিয়েছিল। প্রার্থী হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তমালকান্তি বণিক ও রাজেশ দেব। দু’জনই সুস্মিতাদেবীর ঘনিষ্ঠ। শক্তির পরীক্ষা কী বুদ্ধির লড়াই, তাঁদের উপরই ভরসা তাঁর। তাই কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে বাড়তি চাপ নিচ্ছিলেন না সুস্মিতাদেবী। উপত্যকার কংগ্রেস রাজনীতিতে তাঁর একটাই লক্ষ্য, গৌতম রায় যেন থাবা বসাতে না পারেন। গৌতমবাবুর নীরবতায় এ বার সুস্মিতাদেবীর অনুগামীমহলেই বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। প্রশ্ন উঠছে, মা না হলে মেয়ে দাঁড়াবেন, মেয়ে না হলে মা, এ কেমন কথা? তাঁরই ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা কয়েক দিন আগেও সাংসদের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে কথা বলেছিলেন। মা বীথিকা দেব বা বোন ভারতী লড়তে রাজি কিনা জিজ্ঞাসাও করা হয়েছিল। সুস্মিতাদেবী তখন জানিয়ে দিয়েছিলেন, দেব পরিবারের কেউ লড়বেন না। এখন ভোট দোরগোড়ায় আসতেই তিনি বীথিকা দেবের নাম চর্চায় নিয়ে এসেছেন।

শিলচর শহর কংগ্রেস কমিটি এবং ওয়ার্ড কমিটিগুলি সাংসদের এই আচরণের ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি। তাঁরা গত কাল বৈঠকে বসে সাংসদের সমালোচনায় মুখর হন। তমালকান্তি বণিককে প্রার্থী করার জন্য নিজেদের সূত্রগুলিকে ব্যবহারের জন্যও সহমতে পৌঁছন। সেই সভায় নেতৃত্ব দেন ‘সুস্মিতা ব্রিগেড’ বলে পরিচিত শহর কংগ্রেস কমিটির সভাপতি শৈবাল দত্ত, পুরসভার বিরোধী দলনেতা অলক কর, উপনেতা সজল বণিক ও অতনু ভট্টাচার্য। রাজেশগোষ্ঠীও বীথিকাদেবীর নাম হঠাৎ উঠে আসায় ক্ষুব্ধ। তবে তাঁদের কাছে তমাল বণিকের চেয়ে বীথিকা দেব ভাল। রাজেশবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘হাইকমান্ডের যে কোনও সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেব।’’ তমালবাবু এ সংক্রান্ত কোনও কথাই বলতে চাননি।

বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে সুস্মিতা দেবকে ভোটের আগেই চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তিনি অবশ্য মা, বোনের নাম প্রস্তাবের কথা অস্বীকার করেন। সুস্মিতাদেবী আজ বলেন, ‘‘এআইসিসি শিলচর আসনটি জিততে চাইছে। সে জন্য শক্তিশালী প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। তাঁদের ধারণা, দেব পরিবারের কেউ দাঁড়ালে শিলচরের ভোটাররা মুখ ফেরাতে পারেন না। মা নিজেও লড়তে চাইছেন না। একরকম বাধ্য হয়েই তাঁকে বলতে হয়েছে, হাইকম্যান্ড চাইলে দাঁড়াতে পারি। বয়সের দরুন আমি তাঁকে টানাটানি করাতে চাই না। কিন্তু নাছোড় এআইসিসি-র একাংশ নেতা। তাঁরা সে ক্ষেত্রে ভারতীদিকে দাঁড় করানোর কথা বলছেন।’’

সুস্মিতা দেবের দাবি, মা-দিদি কিংবা তমাল-রাজেশ যিনিই টিকিট পান না কেন, শিলচরে বিক্ষোভের অবকাশ নেই। রাজেশ বা তমালের পক্ষে যাঁরা সওয়াল করছেন, তাঁরা ভুলে গিয়েছেন, তিনি তাঁদের সঙ্গে বীথিকা দেবের টিকিট নিয়ে আগেই কথা বলেছেন। এরপরই অবশ্য তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ সতর্কবার্তা, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ৬৪ বিধায়কের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেও সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেননি। কারণ এআইসিসি বিদ্রোহীদের পছন্দ করে না। তবে কি তমাল বণিককে রাজনৈতিক ভাবে শেষ করে দিতে ষড়যন্ত্র চলছে? জবাব এড়িয়ে গেলেন সাংসদ দেব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE