Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কত দিন বাড়তি বাহিনী কাশ্মীরে, ধন্দে সরকারই

কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আজ সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উপস্থিত ছিলেন সদ্য স্বরাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব নেওয়া অজয় কুমার ভল্লা-সহ বিভিন্ন দফতরের কর্তারা।

কাশ্মীরে সেনা টহল। পিটিআইয়ের ফাইল চিত্র।

কাশ্মীরে সেনা টহল। পিটিআইয়ের ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪২
Share: Save:

কাশ্মীর প্রশ্নে শাঁখের করাতের দশা নরেন্দ্র মোদী সরকারের। নিরাপত্তায় ছাড় দেওয়ায় অসম্ভব, আবার কত দিন এ ভাবে উপত্যকাকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে রাখা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরে। তাই ইতিবাচক বার্তা দিয়ে উপত্যকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে আগামিকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য এক গুচ্ছ ঘোষণা করার পথে হাঁটতে পারে সরকার। আস্থা অর্জনে দ্রুত সরকারি চাকরিতে ব্যাপক সংখ্যায় স্থানীয়দের নিয়োগের বিষয়টিও নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে মন্ত্রিসভা।

কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আজ সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উপস্থিত ছিলেন সদ্য স্বরাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব নেওয়া অজয় কুমার ভল্লা-সহ বিভিন্ন দফতরের কর্তারা। সূত্রের খবর, ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। ওই দুই এলাকার সরকারি দফতর-কর্মী বণ্টন কী ভাবে হবে, আর্থিক অনুদান কোন সূত্র মেনে দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

আগামিকাল বিকেলে বৈঠকে বসার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার। তারপরে রয়েছে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক। সূত্রের খবর, আগামিকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে কাশ্মীরের মানুষকে বার্তা দিতে বড় মাপের প্যাকেজ ঘোষণা করার পথে হাঁটতে পারে মোদী সরকার। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হবে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে। জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন সরকারি দফতরে আরও বেশি চাকরির সুযোগ করে দেওয়া ও সেনা-আধাসেনা যাতে স্থানীয়দের নিয়োগ করতে বেশি সংখ্যক শিবির তৈরি করে তা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট ঘোষণা করতে পারে সরকার। উদ্দেশ্য স্থানীয় মানুষ বিশেষ
করে যুব সমাজের আস্থা অর্জন। বাস্তবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুফল মানুষ
পাচ্ছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে আজ দু’দিনের সফরে শ্রীনগরে গিয়েছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের ছ’জনের একটি দল। সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, ‘‘কাশ্মীরিদের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে কোথায় স্কুল, কলেজ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে তা দেখা হবে।’’ পর্যটনে উৎসাহ দিতে আগামী মাসে উপত্যকায় যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী প্রহ্লাদ পটেল। অক্টোবরে হতে চলেছে বাণিজ্য সম্মেলনও।

কিন্তু সরকারের অভ্যন্তরে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আর কত দিন থাকবে আধাসেনা? সেই প্রশ্নে কার্যত দিশাহীন কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের কাছে সমস্যা হল
১৫ অগস্টের পর থেকে উপত্যকায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যেখানে-যেখানে নিরাপত্তা শিথিল করা হয়েছিল সেখানেই বিক্ষোভ হয়েছে। পাথর ছোড়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। হামলার শিকার হয়েছেন সরকারি কর্মীরাও। ফলে আপাতত কোনও ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষপাতী নয় নয়াদিল্লি। সরকারের একটি শিবিরের মত হল সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আধাসেনা থাকুক কাশ্মীরে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন। তার আগে তুলে নেওয়া হোক বাড়তি নিরাপত্তা। তাহলে কাশ্মীর যে শান্ত, বিশ্বকে সেই বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। ওই মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গে পাকিস্তান সরব হলে একঘরে করা সম্ভব হবে ইসলামাবাদকে।

পাল্টা মত হল, নিরাপত্তায় সামান্য ঢিলে দিলেই ঝামেলা হচ্ছে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে বরফ পড়া পর্যন্ত বাড়তি বাহিনী রাখা হোক। এতে অন্তত আগামী ছ’মাস কোনও বিক্ষোভ দানা বাঁধতে পারবে না। সময়ের সঙ্গেই কমে আসবে কাশ্মীরিদের ক্ষোভ। তখন পরিস্থিতি বুঝে ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হোক আধাসেনা। আগামিকাল কাশ্মীর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলাগুলির শুনানি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে। ফলে সুপ্রিম কোর্ট কাশ্মীর নিয়ে কী অবস্থান নেয় তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে সরকারের অভ্যন্তরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bifurcation of j&k jammu and kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE