বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হল বিহারের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। দিনের শেষে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসাব জানাচ্ছে, অন্তত ৬৪.৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্যে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিরোধী মহাগঠবন্ধনের পাশাপাশি কয়েকটি কেন্দ্রে ভীতিপ্রদর্শনের অভিযোগ তুলেছেন শাসক এনডিএ প্রার্থীরাও! সেই তালিকায় অন্যতম উপমুখ্যমন্ত্রী তথা লখীসরাই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিজয়কুমার সিন্হা। তাঁর গাড়িতে আরজেডি কর্মীরা ইট, পাথর, গোবর ও জুতো ছোড়েন বলে অভিযোগ। আরজেডির বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন আলিনগরের বিজেপি প্রার্থী, ভোজপুরি গায়িকা মৈথিলী ঠাকুরও।
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভার বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় মধ্য ও দক্ষিণপ্রান্তের ১৮টি জেলার ১২১ আসনে ১৩১৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য ইভিএমে বন্দি হয়েছে। কমিশনের দেওয়া হিসাব থেকে জানা যাচ্ছে, বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের ইতিহাসে ভোটদানের এই হার সর্বোচ্চ। ১৯৯৮ সালের বিধানসভা ভোটে বিহারে সার্বিক ভাবে ৬২.৫৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এতদিন পর্যন্ত সেই হার ছিল সর্বোচ্চ। অর্থাৎ আগামী ১১ নভেম্বরে দ্বিতীয় দফায় ১২২টি আসনেও ভোটদানের এই হার বজায় থাকলে নতুন রেকর্ড গড়বে বিহার। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে মগধভূমে ভোটদানের হার ছিল ৫৭.২৯ শতাংশ। বস্তুত, সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরেই বুথে বুথে ভোটারদের ঢল নেমেছিল। বেলা ৯টার মধ্যেই প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট পড়ে যায়। তবে দ্বরভাঙার কুশেশ্বর আস্থান বিধানসভার মতো বন্যাপ্লাবিত এলাকায় জল ভেঙে বুথে যেতে হওয়ায় ভোটাদের একাংশ বিক্ষোভও দেখিয়েছেন।
ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরেই ভোটারদের ‘পূর্ণ উদ্যমে’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমাজমাধ্যমে হিন্দিতে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে মোদী লেখেন, “গণতন্ত্রের উৎসবে আজ বিহারে প্রথম পর্যায়ের ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এই পর্বে সকল ভোটারের কাছে আমার আবেদন, আপনারা পূর্ণ উদ্যমে ভোট দিন।” ওই পোস্টেই বিহারের প্রথম বারের ভোটার যাঁরা, তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে ভোটারদের উদ্দেশে মোদীর বার্তা, “মনে রাখবেন, আগে ভোট, পরে আহার-বিশ্রাম।” মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী— আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ এবং তাঁর স্ত্রী রাবড়ি সকালেই পটনায় ভোট দেন। স্ত্রী রাজশ্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে গিয়ে লালু-পুত্র তথা বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব বলেন, ‘‘আগামী ১৪ নভেম্বর (বিহারে ভোটগণনা এবং ফলপ্রকাশের দিন) নতুন সরকার তৈরি হবে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাবড়ি তাঁর কনিষ্ঠপুত্র তেজস্বীর পাশাপাশি ‘বিতাড়িত’ জ্যেষ্ঠপুত্র তেজপ্রতাপকেও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, “দুই সন্তানের জন্যই আমার শুভেচ্ছা রয়েছে। তেজপ্রতাপ নিজের মতো লড়ছে। আমি তাঁদের (তেজস্বী এবং তেজপ্রতাপ) মা। দু’জনের জন্যই আমার শুভেচ্ছা রয়েছে।” প্রসঙ্গত, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ এবং ‘পারিবারিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ণ’ করার কারণে জ্যেষ্ঠপুত্র তেজপ্রতাপকে দল এবং পরিবার থেকে বিতাড়িত করেছেন লালু। তার পরেই ‘জনশক্তি জনতা দল’ গঠন করেছেন তেজপ্রতাপ। ২২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তাঁর দল। নিজের পুরনো কেন্দ্র মহুয়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তেজপ্রতাপ। সেখানে আরজেডি-ও প্রার্থী দিয়েছে। অন্য দিকে, রাঘোপুর কেন্দ্র থেকে আরজেডির টিকিটে লড়ছেন লালু-রাবড়ীর কনিষ্ঠপুত্র তেজস্বী। বৃহস্পতিবার দুই কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ হয়েছে। লালু-কন্যা রোহিণী আচার্যও বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে তেজপ্রতাপকে সমর্থন করেছেন।
ভোটগ্রহণ শুরুর পরে সকালে কয়েকটি বুথে বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল আরজেডি। যদিও নির্বাচন কমিশন সেই অভিযোগ খারিজ করেছে। প্রথম দফার ভোটপর্বের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদী বৃহস্পতিবার মধুবনি, পূর্ব চম্পারণ এবং মোতিহারিতে জনসভা করেন। তেজস্বীও ভোট দেওয়ার পরেই চলে যান রাজ্যের উত্তরপ্রান্তের জেলাগুলিতে। যেখানে আগামী ১১ নভেম্বর ভোটগ্রহণ করা হবে। মোদী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিহারে এনডিএ আবার সরকার গড়বে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কল্যাণমূলক কর্মসূচির প্রতি নতুন করে আস্থাজ্ঞাপন করবেন বিহারবাসী।’’ যদিও জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারই আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না, সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি মোদী।