অসমের পর এবার ত্রিপুরায় বিজেপির শক্তি ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) কাজকর্মের পরিধিও।
লোকসভা ভোট কি বিধানসভার উপনির্বাচন, বিজেপি-ভোটের লেখচিত্রটি উর্ধ্বমুখী। পঞ্চায়েত-পুরনির্বাচনেও আগের মত খালিহাতে ফিরতে হয়নি। একই ভাবে ক’বছর আগে’ আরএসএস করতেন হাতে গোনা ক’জন। এ বার এখানে প্রান্তীয় অর্থাত আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন হয়েছে। সোমবার ২১ দিনের শিবির উদ্বোধন হল আগরতলার অদূরে, খয়েরপুর সেবাধামে। এই প্রথম এমন আয়োজন ত্রিপুরা রাজ্যে। বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজ্য-রাজনীতির বিশ্লেষকরা।
বিজেপি বা আরএসএস, দুই সংগঠনের কেউ পারস্পরিক সম্পর্কের কথা খোলামেলা স্বীকার কখনওই করে না। তবে উভয়ের লক্ষ্যই হিন্দু জাগরণ। আর এ নিয়েই যত চর্চা দেশের একমাত্র বামশাসিত রাজ্যটিতে। কেউ বলেন, অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সেবাধামে। কারও আশঙ্কা, দাঙ্গা বাধানোর কৌশল রচনা হচ্ছে।
সঙ্ঘের প্রান্তীয় প্রচার প্রমুখ (আঞ্চলিক প্রচার সম্পাদক) মনোরঞ্জন প্রধান বললেন, ‘‘সঙ্ঘ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এক শ্রেণির মানুষ উল্টোপাল্টা মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ জেনে-বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে অপপ্রচারও করছেন।’’ তিনি জানান: প্রতি বছর সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গ আয়োজিত হয়। আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রথম বর্ষ। উত্তর-পূর্ব জুড়ে দ্বিতীয় বর্ষ। তৃতীয় বর্ষের শিবির হয় জাতীয় পর্যায়ে। অসমের কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও ডিমা হাসাও জেলা এবং মিজোরাম ও ত্রিপুরা নিয়ে সংঘের দক্ষিণ অসম আঞ্চলিক বা প্রান্তীয় কমিটি। এর প্রশিক্ষণ শিবির এক এক বছর এক এক জায়গায় করার কথা। কিন্তু ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য তা গত ১০ বছর লাগাতার অসমের করিমগঞ্জ জেলার মাধবধামে অনুষ্ঠিত হয়। এ বার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠায় প্রথম বর্ষের প্রশিক্ষণের জন্য ত্রিপুরার সেবাধামকেই বাছাই করা হয়েছে। মোট ১৩৮ জন এতে অংশ নিচ্ছেন। এরমধ্যে রয়েছেন ত্রিপুরার ৫৮ জন। এই শিবিরের ২০-২৫ জন আগামী বছর অসমের হোজাইয়ে উত্তর-পূর্ব ভিত্তিক দ্বিতীয় বর্ষ শিবিরে প্রশিক্ষণ নেবেন। সেখান থেকে কয়েকজন পরের বছর নাগপুরে জাতীয় পর্যায়ের তৃতীয় বর্ষ শিবিরে যাবেন।
প্রান্তীয় প্রধান বিমল নাথচৌধুরী জানান, সঙ্ঘের শিবিরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ হয় না। দণ্ডচালনা তথা লাঠিখেলা শেখান তাঁরা। তাও প্রথম বর্ষে নয়। এই পর্যায়ে শুধু শারীরিক শিক্ষা, মহাপুরুষদের জীবন-আলোচনা এবং দেশাত্মবোধের শিক্ষা দেওয়া হয়। পরবর্তী পর্যায়ে কর্মকর্তাদের লাঠিখেলা শেখানো হয়। এতে মনে সাহস সঞ্চারিত হয়।
বামশাসিত ত্রিপুরায় এই সময়ে সঙ্ঘের কাজ করতে কোনও প্রতিবন্ধকতা অবশ্য নেই বলেই জানান সংগঠনের রাজ্য প্রধান নৃপেন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘‘নেই প্রশাসনিক যন্ত্রণাও। ১৯৯৯ সালে চার প্রচারক অপহৃত ও খুন হওয়ার পরই থেকেই সঙ্ঘের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ জন্মায়।’’ সেখান থেকেই আজকের বাড়বাড়ন্ত। তাই কোনও শক্তি সঙ্ঘের কাজ বিঘ্নিত করার কথা ভাবেন না। নৃপেন্দ্রবাবু বনে করেন, ‘‘এ ছাড়া, রাজ্যে এই সময়ে জঙ্গি সমস্যা নেই বলে সঙ্ঘের কাজে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরার সুযোগ মিলছে। এর উপর, গত বছর বরাক উপত্যকা থেকে ২৬১ জন সঙ্ঘকর্মী ত্রিপুরায় এসে সংগঠন বিস্তারের কাজ করে গিয়েছেন।’’
আর সঙ্ঘের শক্তি বৃদ্ধির সূত্রেই যে বিজেপির শক্তি বাড়ছে, সে কথা স্বীকার করে সংঘ-প্রচারক শশীকান্ত চৌথাইওয়ালে বলেন, ‘‘আমাদের কাজকর্মে অন্য কারও সুবিধে হলে হতেই পারে। এতে আমাদের করণীয় কিছু নেই। সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল কেউ আরএসএস-কে সইতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির লাভ হবে।’’ ত্রিপুরায় যে সংঘের হাত ধরেই বিজেপির শক্তি বাড়ছে, ইঙ্গিতে সে কথাই শুনিয়ে দিলেন শশীকান্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy