Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে ব্যবধান ১৫ থেকে ৩-এ কমিয়ে আনল বিজেপি

একের পর এক বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর এ বার রাজ্যসভার ভোটও কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিল। আজ রাজ্যসভায় আট রাজ্যের ৫৭টি আসনে নির্বাচনের পর কংগ্রেসের সঙ্গে অনেকটাই ব্যবধান কমিয়ে ফেলল বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৮:৫৭
Share: Save:

একের পর এক বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর এ বার রাজ্যসভার ভোটও কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিল।

আজ রাজ্যসভায় আট রাজ্যের ৫৭টি আসনে নির্বাচনের পর কংগ্রেসের সঙ্গে অনেকটাই ব্যবধান কমিয়ে ফেলল বিজেপি। অন্য দিকে কংগ্রেসের অন্দরমহলে শীর্ষনেতৃত্বের বিরুদ্ধে নতুন বিদ্রোহের ইঙ্গিত মিলল। হরিয়ানায় সনিয়া গাঁধীর নির্দেশ সত্ত্বেও তাঁর পছন্দের প্রার্থী আর কে আনন্দ হেরে গিয়েছেন। তাঁকে হারিয়ে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপি সমর্থিত মিডিয়া ব্যারন সুভাষ চন্দ্র। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, রাজ্যের নেতা ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা হাইকম্যান্ডের নির্দেশ না মানাতেই এ ভাবে দলের মুখ পুড়েছে।

লোকসভায় বিজেপির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও রাজ্যসভায় কংগ্রেসই সব থেকে বড় দল হওয়ার সুবাদে এত দিন মোদী সরকারকে বিপাকে ফেলেছে। জমি অধিগ্রহণ বিলে সংশোধন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্কারের বিলে সরকার রাজ্যসভাতেই বারবার হোঁচট খেয়েছে। ৫৭টি আসনের মধ্যে ৩০টির ফলাফল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই ফয়সালা হয়েছিল। ভোটাভুটি হয়েছে ৭টি রাজ্যের ২৭টি আসনে। নির্বাচনের পর কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে এনেছে বিজেপি। কংগ্রেসের সদস্যসংখ্যা ৬৪ থেকে কমে এসেছে ৫৭-তে। অন্য দিকে বিজেপির সদস্যসংখ্যা ৪৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৪। এমন নয় যে এর ফলে রাজ্যসভার সমীকরণ পাল্টে যাচ্ছে। কারণ আপাত ভাবে কংগ্রেসের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির ভিড় অনেক বেশি। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির ব্যবধান কমে আসায় ভবিষ্যতে অনেক বিলেই সরকারের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট জোটানো সম্ভব হবে বলে আশা করছেন মোদী সরকারের মন্ত্রীরা।

কংগ্রেসের জন্য খুশির খবর হল, পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বলের মতো ইউপিএ-সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা এ বার রাজ্যসভায় আসছেন। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেস প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে সাহায্য করেছেন বসপা-নেত্রী মায়াবতী। উল্টো দিকে বিজেপিও বেঙ্কাইয়া নায়ডু, মুখতার আব্বাস নকভি, নির্মলা সীতারমন, পীযূষ গয়ালদের মতো ছয় জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে রাজ্যসভায় জিতিয়ে এনেছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে ফের রাজ্যসভায় ফিরছেন অমর সিংহ। কিন্তু কংগ্রেসের অন্দরমহলের ছবিটা যে মোটেই সুখকর নয়, তা আজকের ভোটে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

ছত্তীসগঢ়ে অজিত জোগী, মহারাষ্ট্রে গুরুদাস কামাথরা দল ছাড়ার ঘোষণা করার পর সনিয়া গাঁধী নিজেই তাঁদের উষ্মা কমাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। আজকের পর সনিয়ার চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছেন হরিয়ানার ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। হরিয়ানায় দু’টি আসনে ভোটাভুটি হয়েছিল। বিজেপির মন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংহ চৌধুরীর একটি আসনে জয় নিশ্চিত ছিল। অন্য আসনে আইনজীবী আর কে আনন্দকে জেতানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন সনিয়া। কংগ্রেস ছাড়াও আইএনএলডি-র উপরে ভরসা করেছিলেন আনন্দ। কিন্তু দিনের শেষে দেখা যায়, ভুল কালি ব্যবহার করার জন্য ১৪ জন কংগ্রেস বিধায়কের ভোট খারিজ হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব মনে করছে, এটা আসলে অন্তর্ঘাত। এ বিষয়ে হুডার ব্যাখ্যা দাবি করেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ বলেন, ‘‘হতাশাজনক ঘটনা। কেন এমন হল, তা খতিয়ে

দেখতে হবে। তবে দলের অন্দরে যখন পালাবদল চলে, বাইরের পরিস্থিতি বিরূপ থাকে, তখন এই ধরনের ঘটে, আবার পরে তা ঠিকও হয়ে যায়।’’

উত্তরপ্রদেশ থেকে কপিল সিব্বলের রাজ্যসভায় জেতা নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। সিব্বলকে প্যাঁচে ফেলতে গুজরাত থেকে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর স্ত্রী প্রীতি মহাপাত্রকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে খাড়া করেছিল বিজেপি। দিনের শেষে সিব্বল জিতেছেন ঠিকই। কিন্তু সেখানেও দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের ২৯ জন বিধায়ক থাকলেও মাত্র ২৫টি প্রথম পছন্দের ভোট পেয়েছেন সিব্বল। অথচ কংগ্রেসের নিজস্ব ভোট ছাড়াও রাষ্ট্রীয় লোক দলের ভোট পাবেন বলে আশা করেছিলেন সিব্বল। শেষবেলায় মায়াবতীর দলের ভোটই সিব্বলের রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছে।

সাধারণত রাজ্যসভার ভোট ঘিরে তেমন উত্তেজনা তৈরি হয় না। কিন্তু এ বারের ছবিটা ছিল অন্য রকম। কর্নাটক থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ উঠেছিল। কংগ্রেস, বসপা-র মতো দলের নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে টাকা ওড়ানোর অভিযোগ তুলেছে। আজ ঝাড়খণ্ডে ভোট চলাকালীনই জেএমএম-বিধায়ক চামরা লিন্ডাকে তিন বছরের পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। উত্তরপ্রদেশে আবার বিজেপির বিধায়ক বিজয়বাহাদুর যাদব নিজেই জানিয়েছেন তিনি সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajya sabha equation seat BJP Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE