ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি!
দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে (২০১০-১১) সরকারকে জনগণনার সঙ্গে জাতগণনা করার জন্য কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরি করেছিল শরিক দল সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি। সে সময়ে বিরোধী বিজেপি এ নিয়ে নীরব থাকায় শেষ পর্যন্ত জাতিগত সমীক্ষা করেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয় কংগ্রেস। কারণ কংগ্রেস নেতৃত্বের ভয় ছিল, জাতগণনার ফলে উচ্চবর্ণের ভোট হারাবার ভয় রয়েছে। তা ছাড়া সে সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানিয়েছিলেন, জনগণনার সঙ্গে জাতগণনা করার কিছু সমস্যা রয়েছে। এতে তথ্যগত ভুল হলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। যে যুক্তি মেনে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠীর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। যারা পরে জাতিগত সমীক্ষার প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত দেয়।
দেড় দশক পরে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের মতোই বিজেপির উপরেও জাতগণনার প্রশ্নে প্রবল চাপ ছিল শরিক জেডিইউ, এলজেপি-র মতো দলগুলির। ২০২১ সালে কেন্দ্রীয়
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই সংসদে ওই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, সরকার তফসিলি জাতি ও জনজাতির সমীক্ষা করতে প্রস্তুত। কিন্তু অন্যান্য জাতির সমীক্ষা করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে বলে সার্বিক জাতগণনা এড়িয়ে যাওয়ার নীতি নেয় মোদী সরকার। কারণ কংগ্রেসের মতোই জাতগণনা হলে উচ্চবর্ণের ভোট সরে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল বিজেপির। কিন্তু বিজেপির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় বিরোধী কংগ্রেস-সহ প্রায় গোটা ইন্ডিয়া শিবিরের অধিকাংশ দলের জাতগণনার প্রশ্নে টানা প্রবল চাপ সৃষ্টি করে যাওয়া। যে বিরোধী চাপ ২০১০ সালে সহ্য করতে হয়নি কংগ্রসকে। জাতগণনা প্রশ্নে নীতিগত ভাবে আপত্তি ছিল আরএসএস নেতৃত্বেরও।
এ যাবৎ বিজেপি জাতগণনা এড়িয়ে গেলেও প্রশ্ন হল, ঠিক কী কারণে সরকার বিহার নির্বাচনের আগে জাতগণনায় সম্মতি জানাল? সূত্রের মতে, একাধিক কারণে এ নিয়ে নিমরাজি হতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। যার মধ্যে অন্যতম হল এ নিয়ে শরিক দলগুলির চাপ। মূলত বিহারের শরিক দলগুলি এ নিয়ে প্রথম থেকেই সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছিল। ভোটের আগে ওই চাপ আরও বাড়ত। কারণ শরিক দলগুলির এ নিয়ে দায়বদ্ধতা ছিল
বিহারবাসীর কাছে।
এ ছাড়া ওয়াকফ বিল নিয়ে মুসলিম সমাজের পথে নামাও চিন্তায় রাখে বিজেপি নেতৃত্বকে। বিহারের ১৭ শতাংশ ভোট রয়েছে মুসলিমদের। যারা প্রথাগত ভাবে আরজেডি ও কংগ্রেসের ভোটার। সেই ভোট যে বিরোধীদের ঘরে যাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত বিজেপি। তার উপরে জাতগণনা না করার ক্ষোভে বিহারের পিছিয়ে থাকা সমাজের ভোট যদি বিরোধীদের ঘরে যায়, সে ক্ষেত্রে বিহারে ক্ষমতা ধরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে এনডিএ-র।
লোকসভায় উত্তরপ্রদেশে পিছিয়ে পড়া সমাজের ভোট বিজেপির পিছন থেকে সরে যাওয়ায় ওই রাজ্যে খারাপ ফল করে বিজেপি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিহারের পিছিয়ে পড়া সমাজের ভোট নিশ্চিত করতেই জাতগণনা করার ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বিজেপি বলেই মত রাজনীতিকদের। যদিও কংগ্রেসের মতে, গোটাটাই লোক দেখানো পদক্ষেপ। কারণ কবে জনগণনা হবে তার কোনও ঠিক নেই। কংগ্রেসের মতে, পহেলগাম হামলা থেকে নজর ঘোরাতেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)