সুখবর পেয়ে হাসিমুখে। মঙ্গলবার দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
কলকাতার পুরভোটে দল যখন তাঁকে প্রার্থী করতে চেয়েছিল, দেখা গিয়েছিল তিনি মহানগরীর ভোটারই নন! পরে বিধানসভা ভোটে হাওড়া উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী হলেও দৌড় শেষ করেছিলেন তৃতীয় হয়ে। কিন্তু এ সব ব্যর্থতা তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের পথে কোনও বাধাই হল না!
রাজ্য বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে সোজা রাজ্যসভায় সদস্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ!
যদিও সংসদের উচ্চ সভায় নির্বাচিত সদস্য হচ্ছেন না রূপা। বিজেপি-র সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্যের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিংহ সিধু। তাঁর স্থানে সোমবার রূপা-কে মনোনীত করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
বস্তুত, সিধুর ইস্তফার পর থেকেই তাঁর জায়গায় সংস্কৃতি জগতের মুখ খুঁজছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। তার জন্য দলের কাছে আবেদনের ভিড়ও কম ছিল না। কিন্তু তাঁরা এমন মুখ চাইছিলেন, যাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে রাজনৈতিক লাভও মিলবে। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় সর্বভারতীয় সভাপতি অমিতকে বোঝান, রূপাই সেই মুখ। এর পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আলোচনা করে রূপার নামে সিলমোহর বসে।
সে দিক থেকে রূপার এই উত্থানে কৈলাসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বছর খানেক আগে বাংলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন ইন্দৌরের এই বিজেপি নেতা। গোড়া থেকেই রূপাকে সামনে আনার চেষ্টা করেন তিনি। মহিলা মোর্চার দায়িত্ব দেওয়ার পর কেন্দ্রের বিভিন্ন বৈঠকে রূপার আমন্ত্রণ পাওয়ার নেপথ্যেও কৈলাসের ভূমিকা ছিল বলে দলের রাজ্য সংগঠনের অধিকাংশ নেতার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপতি রূপাকে মনোনীত করার পর মঙ্গলবার কৈলাসই সর্বাগ্রে টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, আসলে কৈলাস মনে করেন, আগামী লোকসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলায় রূপার মতো এক জন মহিলা মুখকে সামনে রেখে লড়াই করলে লাভ হবে। কারণ, বাংলায় লোকসভার এমন ২২টি আসন রয়েছে, যেখানে জেতার লড়াইয়ে থাকবে বিজেপি। তাই রূপার গুরুত্ব বাড়াতে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পরামর্শ দেন তিনি। তা ছাড়া অমিতকে কৈলাস এ-ও বুঝিয়েছেন, ঠিক মতো তৈরি করতে পারলে আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে স্মৃতি ইরানির মতো ক্ষুরধার নেত্রী হয়ে উঠতে পারেন রূপা। অমিত এই যুক্তিতে সহমত হয়েছেন বলেই দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা।
এ দিকে রূপার পদোন্নতির খবর পেয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহ, শমীক ভট্টাচার্য-সহ বিজেপি-র রাজ্য নেতারা। প্রকাশ্যে তাঁদের সকলেরই বক্তব্য, এতে দলের লাভই হল।
কিন্তু সত্যিই কি তাই? দলীয় সূত্রেই ইঙ্গিত, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে বেশিরভাগ রাজ্য নেতা খুশি নন। রাজ্য নেতাদের একাংশের মতে, রূপা দলের কাজে সক্রিয় ঠিকই। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে পরিণত নন। মহিলা মোর্চার সভানেত্রী হিসাবে তাঁর সাংগঠনিক কাজও সন্তোষজনক নয়। এ হেন পারফরম্যান্সের পর রূপা রাজ্যসভায় গেলে পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক শক্তি কতটা বাড়বে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
রাজ্য নেতাদের অনেকের এ-ও বক্তব্য, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে লড়াই করে রাহুলবাবু, শমীকবাবুর মতো নেতারা বাংলায় দলের সংগঠন তৈরি করেছেন। আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা রাজনীতি করছেন। তুলনায় রূপা বিজেপি-তে এসেছেন মাত্র ১ বছর ৯ মাস আগে। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই পদক্ষেপে রাজ্য সংগঠনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এমনকী কটাক্ষ করে বিজেপি-র এক রাজ্য নেতা বলেন, যাঁরা আগে এসেছিলেন, তাঁদের বাঘে খায়নি ঠিকই, তবে পরে এসে সোনা পেলেন রূপা!
যাঁকে ঘিরে এত হইচই তিনি অবশ্য সংবাদমাধ্যমে এ দিন মুখ খোলেননি। একেবারে স্পিকটি নট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy