Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মুকুলে নেই, বিজেপি হিমন্তে

রাজনৈতিক ‘ম্যানেজার’ হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে দু’জনেই নিজের রাজ্যে হয়ে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ডান হাত। রাজ্যে শাসক দলের দু’নম্বর মুখ। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মুকুল রায় ও অসমে কংগ্রেসের হিমন্তবিশ্ব শর্মা। সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযোগের আঙুল ওঠায় বারবারই শোনা গিয়েছে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন এ দু’জন।

দুর্নীতির অভিযোগ গৌণ, ভোটের ময়দানে দাপট মেপেই মুকুল রায়কে না নিলেও, অসমে ভোটের মুখে হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে দলে টানল বিজেপি।

দুর্নীতির অভিযোগ গৌণ, ভোটের ময়দানে দাপট মেপেই মুকুল রায়কে না নিলেও, অসমে ভোটের মুখে হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে দলে টানল বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

রাজনৈতিক ‘ম্যানেজার’ হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে দু’জনেই নিজের রাজ্যে হয়ে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ডান হাত। রাজ্যে শাসক দলের দু’নম্বর মুখ। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মুকুল রায় ও অসমে কংগ্রেসের হিমন্তবিশ্ব শর্মা। সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযোগের আঙুল ওঠায় বারবারই শোনা গিয়েছে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন এ দু’জন। দু’জনেই বারবার উড়িয়ে দিয়েছেন সে খবর। লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষে শেষ পর্যন্ত মুকুলকে না নিলেও, অসমের ভোটের মুখে হিমন্তকে বিজেপিতে সামিল করছেন অমিত শাহ।

হিমন্তের সুবিধাবাদী চরিত্র ও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলির কথা মাথায় রেখে রাজ্য বিজেপির কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এতে কি আদৌ লাভ হবে বিজেপির? দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের যুক্তি, সারদা বা অন্যান্য দুর্নীতি মামলার চার্জশিটে হিমন্তের নাম নেই। বেআইনি লেনদেনের অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে। মুকুলের সম্পর্কেও অনুরূপ যুক্তি উঠতে পারত, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে পরের পর নির্বাচনে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ভোট-ভাগ্যে আদৌ তেমন ছায়া ফেলতে পারেননি কোণঠাসা মুকুল। হিমন্ত সেটা পেরেছেন। তাঁর বিরুদ্ধতায় বিভিন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসের ফল খারাপ হয়েছে। এ-হেন হিমন্তের রাজনৈতিক কুশলতা ও সমর্থনের ভিত, দু’টোকেই ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে কাজে লাগাতে চান বিজেপি সভাপতি। কংগ্রেসের নেতারা মুখে না মানলেও ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন এটা তাঁদের কাছে বড় ধাক্কা।

তরুণ গগৈয়ের এক সময়ের ডান হাত হিমন্ত আজ দিল্লিতে বিজেপি সভাপতির সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছেন, গুয়াহাটিতে ফিরে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেবেন, অসম-সহ উত্তর-পূর্বের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন, তাকেই সফল করার কাজে ঝাঁপ দেবেন। তবে এখনই বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না। দলের আরও কয়েক জন বিধায়ক তাঁর পাশে আছেন বলেও দাবি করেছেন হিমন্ত।

কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সারদা-সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে হিমন্তের বিরুদ্ধে। তরুণ গগৈয়ের সরকারের উপরে যার আঁচ পড়ছিল। দল ও রাজ্য সরকার তা থেকে মুক্তি পেল। কী বলছেন গগৈ? তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন হিমন্ত।’’

মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে গগৈকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৪ সালে মন্ত্রীত্ব ছাড়েন হিমন্ত। এই সময়ই সারদা কেলেঙ্কারিতে হিমন্তর নাম জড়ায়। তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের ঘনিষ্ঠতার খবর সামনে আসায় হিমন্ত খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যান। সিবিআই তাঁর একাধিক বাড়িতে হানা দেয়। হিমন্তর স্ত্রীকেও বহু বার জেরার মুখে পড়তে হয়। গ্রেফতার হন হিমন্তর ঘনিষ্ঠ শিল্পী সদানন্দ গগৈ। আত্মঘাতী হন প্রাক্তন ডিজিপি শঙ্কর বরুয়া। তখনই শোনা গিয়েছিল নিজেকে বাঁচাতে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন হিমন্ত। তবে, শেষ পর্যন্ত সিবিআই চার্জশিটে নাম না থাকা ও এখনও তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় হিমন্ত কিছুটা রাজনৈতিক জমি ফিরে পান। আবার দলের কাজকর্মে অংশ নিতে শুরু করেন।

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারণা, এত দুর্নীতির অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, ২০১৬-র ভোটের আগে তাঁকে দলে নেওয়ায় বিজেপিতেও গোল বাঁধবে। রাজ্য বিজেপি হিমন্তকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানালেও, দলের নিচু তলায় যে এ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তার আঁচ মিলেছে এ দিনই। প্রশ্ন উঠছে, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে তৃণমূলে কোণঠাসা হয়ে পড়া সাংসদ মুকুলকে দলে না নিলেও প্রায় একই পরিস্থিতিতে পড়া হিমন্তকে কেন নেওয়া হবে বিজেপিতে? বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, ভোটের আগে হিমন্তকে পেলে লাভই হবে। তিনি অসমের শাসক দল ও সরকারের দু’নম্বর মুখ ছিলেন। নিজস্ব একটা সমর্থনের ভিত যেমন রয়েছে, তেমনই রাজনৈতিক ম্যানেজার হিসেবেও তিনি যথেষ্ট দক্ষ। কংগ্রেসের সঙ্গে স্থানীয় মুসলিম সংগঠনগুলির বিরোধ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হিমন্তর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারাও মানছেন, হিমন্ত এক জন দক্ষ নেতা। তবে তাঁদের দাবি, ভোটের আগে হিমন্ত বিজেপিতে যাওয়ায় দলের ক্ষতি হতে পারে আঁচ করেই মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সম্ভাব্য ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্তের দাবি, হিমন্ত কেন, তিনি বা খোদ মুখ্যমন্ত্রীও যদি দল ছেড়ে দেন, তবুও কংগ্রেস থাকবে, লড়বে। বরং হিমন্ত বিজেপিতে যোগ দেবেন শুনেই বিজেপির অনেকে কংগ্রেসে যোগ দেবেন বলে ফোন করছেন। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন দলের মাত্র ৪ জন বিধায়ক আপাতত হিমন্তের পাশে আছেন। তবে কট্টর গগৈ-পন্থীরাও পরোক্ষে মেনে নিচ্ছেন, হিমন্ত-ব্রিগেডহীন কংগ্রেসের পক্ষে আগামী বছর মে মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। হিমন্তর যাওয়াটা বড় ধাক্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE