শিবরাজ সিংহ চৌহানকে বলির পাঁঠা করে কি ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব?
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানাতে বাধ্য করান। দলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত শিবরাজ সিবিআই তদন্তে কখনওই রাজি ছিলেন না। কারণ সিবিআই পরিচালিত হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে। শিবরাজের আপত্তির কারণে সে রাজ্যের রাজ্যপাল রামনরেশ যাদবকে সরানো যায়নি এত দিন। বিজেপি সূত্রের খবর— এ বার তাঁকেও সরে যেতে বলা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে নোটিস দেওয়ার পরে যাদবকে সরানো ছাড়া উপায় নেই। তিনি নিজে যদি সরে গেলে ভাল, না হলে কেন্দ্রকেই সে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেন।
বিজেপি নেতৃত্বের আশা, এ বার সংসদের অধিবেশন সুষ্ঠু ভাবে চালানো সম্ভব হবে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘এত দিন আমাদের দিকে ক্রমাগত আক্রমণ ধেয়ে এসেছে। আজ সেই পর্ব সাঙ্গ হল। এ বারে আমরা প্রতি-আক্রমণে নামব— যাতে সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানো যায়, বিরোধী ঐক্য ভেঙ্গে দেওয়া যায়।’’
সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই আজ মুম্বই থেকে ফিরে অমিত শাহ নির্দেশ দেন, উত্তরপ্রদেশে সাংবাদিক জগেন্দ্র সিংহের হত্যার প্রতিবাদে সেখানে বিজেপির একটি টিম পাঠানো হবে। বিজেপি নেতৃত্বের প্রশ্ন, ব্যপম কাণ্ডে এক সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে যখন এত তোলপাড় হল, তখন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশের হাতে সাংবাদিকের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার অভিযোগকে কেন প্রচারের আলোয় তুলে আনা হবে না? কিন্তু এর পিছনে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দ্বিমুখী কৌশলও আছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, সিবিআই তদন্তের নির্দেশের পর এখন মধ্যপ্রদেশে রাজনীতিক-আমলা-বিচার ব্যবস্থার যোগসূত্রের তদন্ত করা হবে। এখনও পর্যন্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত শর্মা ছাড়া আর কোনও বড় রাজনীতিক গ্রেফতার হননি। রাজ্যপালের অপসারণও ঠেকিয়ে রেখেছিলেন শিবরাজ। তাঁর ‘রক্ষাকবচ’-এর অজুহাতে তদন্তও বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ বারে রাজ্যপাল মুখ খুললে কী হবে? বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, সেটা শিবরাজের মাথাব্যথা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নয়। সুষমা-বসুন্ধরা বিতর্কে ললিত মোদীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্যপম কেলেঙ্কারিতে বিরোধীদের কথা মেনেই সিবিআই তদন্ত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন সংসদ অধিবেশনের আগে যাবতীয় বিতর্ক নিয়ে পদক্ষেপ করার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বিরোধীদের ঠান্ডা রাখতে। উত্তরপ্রদেশে সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে টিম পাঠিয়ে মুলায়ম ও অখিলেশের উপরেও চাপ বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, তৃণমূলের সঙ্গে এমনিতেই নরম-গরম সম্পর্ক। জয়ললিতা ও বিজু জনতা দলকেও কাছে টানার চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার জয়ললিতার বিরুদ্ধে ফের মামলা করার পর নিঃশব্দে এডিএমকে নেত্রীকেও আইনি সাহায্য দিচ্ছে বিজেপি সরকার। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘সনিয়া গাঁধীর নাম আসা মাত্র সুষমা-বসুন্ধরা নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক হঠাৎই চুপসে গিয়েছে। তার পর থেকে প্রচার মাধ্যমে সেই বিতর্কও শেষ। ঢোলপুরের প্রাসাদ নিয়েও কংগ্রেস অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আজ ব্যপম কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রচারেরও ইতি হল। এ বারে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।’’ বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও বলেছেন, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া গাঁধী বিপদে পড়বেন। ফলে রাহুল গাঁধী আজ যতই আক্রমণ করুন, অভিযোগের খাঁড়া তাঁদের মাথাতেও ঝুলছে।
বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে সংসদ চালানোই এখন প্রধান লক্ষ্য। ঘনিষ্ঠ মহলে অরুণ জেটলিও বলছেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত এ বারে সংসদ মসৃণ ভাবেই চলবে।’’