Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় এ বার বিজেপি-রাজ, বলছে সমীক্ষা

দিল্লির দুর্গ জয়ের পাঁচ মাসের মাথায় আরও দু’টি রাজ্য নরেন্দ্র মোদীর নাগালে আসার ইঙ্গিত দিল বুথ ফেরত সমীক্ষা। লোকসভার পর উপনির্বাচনগুলিতে ধাক্কা খেয়ে এ বারে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনকে রীতিমতো মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিয়েছিলেন মোদী ও তাঁর সেনাপতি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আজ দুই রাজ্যে ভোটের পর সব বুথ ফেরত সমীক্ষাই বলছে, দু’রাজ্যেই সরকার গড়ার চাবিকাঠি যেতে চলেছে বিজেপির হাতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

দিল্লির দুর্গ জয়ের পাঁচ মাসের মাথায় আরও দু’টি রাজ্য নরেন্দ্র মোদীর নাগালে আসার ইঙ্গিত দিল বুথ ফেরত সমীক্ষা।

লোকসভার পর উপনির্বাচনগুলিতে ধাক্কা খেয়ে এ বারে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনকে রীতিমতো মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিয়েছিলেন মোদী ও তাঁর সেনাপতি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আজ দুই রাজ্যে ভোটের পর সব বুথ ফেরত সমীক্ষাই বলছে, দু’রাজ্যেই সরকার গড়ার চাবিকাঠি যেতে চলেছে বিজেপির হাতে।

এবিপি নিউজ-এ সি নিয়েলসেন-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ১৪৪টি আসন পেতে চলেছে বিজেপি ও তার ভোট-পূর্ববর্তী সঙ্গী দু-একটি ছোট দল। অর্থাৎ ম্যাজিক সংখ্যা ১৪৫-এর থেকে মাত্র একটি কম আসন পাচ্ছে তারা। শিবসেনা পাচ্ছে ৭৭টি, কংগ্রেস ৩০টি এবং এনসিপি ২৯টি। রাজ ঠাকরের এমএনএসের ভাগ্যে জুটতে পারে ৩টি আসন। অন্য দিকে, ৯০ আসনের হরিয়ানায় বিজেপি ৫৪টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে চলেছে বলে এই সমীক্ষা জানাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ওমপ্রকাশ চৌটালার আইএনএলডি এবং কংগ্রেস পেতে চলেছে যথাক্রমে ২২টি ও ১০টি আসন।

এমন নয় যে, অতীতে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল সব সময় মিলে গিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সমীক্ষায় ভোটারদের মনের একটি আভাস মেলে। তাই এই সমীক্ষার মান্যতা রয়েছে।

মহারাষ্ট্রে গত ১৫ বছর ধরে শরিক এনসিপির সঙ্গে সরকার চালিয়েছে কংগ্রেস। আর হরিয়ানায় কংগ্রেস সরকার চলেছে গত দশ বছর। এই অবস্থাতেও ভোটের মুখে দুই রাজ্যেই একলা চলার ঝুঁকি নিয়েছে মোদী-অমিত জুটি। কোনও রাজ্যেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। নির্বাচন পরিচালনায় অমিত এবং দলের মুখ মোদী লোকসভার এই কৌশলে ভর করেই ফের ভোটযুদ্ধে নেমেছিল বিজেপি। এবং মোদী ও অমিত শাহ দু’জনেই আত্মবিশ্বাসী যে, কোনও রাজ্যেই সরকার গড়তে তাঁদের শরিকের প্রয়োজন হবে না। বস্তুত, সি ভোটার-টাইমস নাও-এর সমীক্ষা বিজেপিকে ১২৯টি আসন দিলেও টুডেজ চাণক্য-নিউজ ২৪-এর সমীক্ষা অনুযায়ী মহারাষ্ট্রে ১৫১টি আসন নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েই যাচ্ছে মোদীর দল।


রণবীর কপূর, কিরণ রাও, শাহরুখ খান, অভিষেক বচ্চনএবং দীপিকা পাড়ুকোন। মুম্বইয়ে বুধবার। ছবি: পিটিআই ও রয়টার্স

আর এটাই চেয়েছিলেন মোদী। কেন্দ্রে সরকার গড়ার পর রাজ্যে-রাজ্যে ক্ষমতা বিস্তারের দু’টি বড় কারণ ছিল প্রধানমন্ত্রীর। এক, রাজ্যে বিজেপির যত দখল থাকবে, কেন্দ্রের উন্নয়ন কমর্সূচি রূপায়ণও তত সহজ হবে। দুই, সংস্কার প্রকল্পগুলি এখনও বিরোধীদের বাধায় আটকে রয়েছে। বিধানসভায় বিজেপির সংখ্যা বাড়লে ভবিষ্যতে রাজ্যসভার কাঁটাও দূর হবে। লোকসভায় কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করার পর এ বার রাজ্যে-রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলিকেও ধীরে ধীরে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলাই মোদীর বড় লক্ষ্য। সেই কারণে সিকি-শতকের সম্পর্ক থাকলেও শিবসেনার সঙ্গে আসন সমঝোতা ভেঙে দিতে পিছপা হননি মোদী-অমিত।

ম্যাজিক সংখ্যা ছোঁয়া না গেলে ফের কি শিবসেনার হাতই ধরবে বিজেপি? নাকি এনসিপি-কে নতুন সঙ্গী করবে তারা? বিশেষজ্ঞদের মতে,শেষ পর্যন্ত শরিকের হাত যদি ধরতেই হয়, তা হলে শিবসেনাই বিজেপির প্রথম পছন্দ। মনে রাখতে হবে, মহারাষ্ট্রে জোট ভাঙা সত্ত্বেও শিবসেনা নেতা অনন্ত গীতে এখনও মোদী মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেননি। রাজ্যে পুরসভা থেকে পঞ্চায়েত এখন জোট বেঁধে চালাচ্ছে দুই দল। আর শিবসেনাও অপেক্ষা করতে চাইছে ভোটের ফল প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত। যদিও প্রতিদিন তিক্ততা বাড়ছে দু’দলের। উদ্ধব গত কাল বলেছেন, “লোকসভায় একসঙ্গে লড়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতেই বিজেপি জোট ভেঙেছে। অথচ শিবসেনা না থাকলে মোদী কেন, কারও পক্ষেই মহারাষ্ট্রে এত আসন জেতা সম্ভব হতো না।” বিজেপি নেতাদের পাল্টা মন্তব্য, দেওয়াল লিখন পড়তে পারছেন উদ্ধব। ফলের পর সরকার গড়তে তাঁর প্রয়োজন হবে না বুঝতে পেরেই হতাশা প্রকাশ করছেন তিনি।

উল্টো দিকে, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার কিন্তু কোনও রাস্তাই পুরোপুরি বন্ধ করেননি। আগে মাঝেমধ্যেই তাঁর মন্তব্যে বিজেপির প্রতি প্রচ্ছন্ন বার্তা দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বার ভোটের আগে উদ্ধবের মোদী-বিরোধিতার প্রশংসা করে তাঁকে প্রকাশ্যে জোট-বার্তা দিয়েছেন পওয়ার। অবশ্য কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া এই জোটের পক্ষেও সরকার গড়া সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। কাজেই চূড়ান্ত সমীকরণের আগে এখনও বাকি বিস্তর হিসেব-নিকেশ।

হরিয়ানায় ভোটের আগে জনমত সমীক্ষা বলছিল, সমানে সমানে টক্কর দেবে বিজেপি এবং আইএনএলডি। তারা হাত না মেলালে সরকার গড়া অসম্ভব। আজ রেকর্ড ৭৬ শতাংশ ভোট পড়ার পর বুথ-ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি-কেই এগিয়ে রেখেছে সি ভোটার-টাইমস নাও। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি এবং আইএনএলডি পাচ্ছে যথাক্রমে ৩৭টি ও ২৮টি আসন। টুডেজ চাণক্য-নিউজ ২৪-এর সমীক্ষা যদিও এই রাজ্যেও ৫২টি আসন পেয়ে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ইঙ্গিত দিয়েছে। আইএনএলডি পাচ্ছে ২৩টি আসন। কোনও সমীক্ষাতেই ১০-১৫টির বেশি আসন পায়নি কংগ্রেস।

ভোট প্রচার শেষ হওয়ার মুখে ফের জেলে যেতে যেতে ওমপ্রকাশ চৌটালা অভিযোগ করেছিলেন, হরিয়ানায় মোদীর সভায় লোক হচ্ছে না বলেই সিবিআইয়ের অপব্যবহার করে তাঁকে জেলে ঢোকালেন প্রধানমন্ত্রী। স্বভাবতই সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। জাঠ-অধ্যুষিত হরিয়ানায় ২৬ জন জাঠ প্রার্থী দিয়েছেন অমিত শাহ। কিন্তু যাঁরা জাঠ নন, তাঁদের, বিশেষত দলিতদের মন জেতার দিকেও নজর দিয়েছিলেন মোদী। চৌটালার বিরুদ্ধে জনতাকে তাতিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ বাজারে ডেরা সচ্চা সওদার মতো প্রভাবশালী সংগঠনের সমর্থনও আদায় করেছেন, যারা গত ভোটেও কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়েছিল। কাজেই চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।

আসলে মোদী-অমিত জুটির লক্ষ্যই ছিল, উপনির্বাচনের ধাক্কা কাটিয়ে এই বিধানসভায় ফের মোদী-জাদুকে প্রতিষ্ঠা করা। লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদীর দেওয়া ভূরি-ভূরি প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি বলে বিরোধীরা যে প্রচার শুরু করেছিল, তা নস্যাৎ করা এবং দেশের সামনে তুলে ধরা যে মোদী রয়েছেন সঠিক পথেই। সেই কারণেই আজ অমিত শাহ নিজে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। বোঝানোর চেষ্টা করেন, মোদীর জনপ্রিয়তায় এক চিলতেও ভাটা পড়েনি। সুসংহত নির্বাচনেই এ বার দুই রাজ্যে বিজেপি একার ক্ষমতায় সরকার গড়তে চলেছে বলে দাবি করেন তিনি।

সত্যিই কি এতটাই নিরুদ্বেগ মোদী-অমিত? আর যা-ই হোক, কেন্দ্রে সরকার গড়ার পর তাঁদের প্রথম অগ্নিপরীক্ষা বলে কথা! যে যা বলুন, চার দিন কিন্তু জারি থাকবে দমবন্ধ সাসপেন্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE