গত ১০ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’পর্বে ভারতীয় সেনার ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানা হয়েছিল ওই বিমানঘাঁটি। পাক ফৌজের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি স্বয়ং সে কথা কবুল করেছিলেন। পাক পঞ্জাবের চাকলালার সেই মুরিদ বিমানঘাঁটির প্রধান ভবনের ছাদ খাটানো হয়েছে লাল ত্রিপলের শামিয়ানা।
এনডিটিভির প্রকাশ করা একটি উপগ্রহচিত্রে এই তথ্য উঠে আসার পরেই দানা বেঁধেছে জল্পনা। লাল ত্রিপলের আড়ালে পুনর্নির্মাণ, না কি প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি চলছে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ‘অপারেশন সিঁদুরে’র সময় মুরিদ বিমানঘাঁটির ওই ভবন থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা পরিচালনা করত পাক বাহিনী। রাওয়ালপিন্ডির নুর খান এবং পাক পঞ্জাবের শোরকোটের রফিকি বিমানঘাঁটি থেকেও একই কাজ চলত। ১০ মে ভোরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তিনটি ঘাঁটিই কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র।
প্রসঙ্গত, নুর খান বিমানঘাঁটি কার্যত পাক বায়ুসেনার রসদ সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র। সি-১৩০ হারকিউলিস, সিএন-২৩৫-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ বিমনের মাধ্যমে এখান থেকেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রসদ এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি আকাশপথে নজরদারি ও প্রত্যাঘাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘এয়ার মোবিলিটি উইং’ এবং ‘এয়ার ডিফেন্স কমান্ড’-এর সদর দফতরও রয়েছে মধ্যে নুর খান বিমানঘাঁটিতে। ওয়াঘা-অটারী সীমান্তের অদূরে শোরকোটে পাক বায়ুসেনার রফিকি বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন জেএফ-১৭ এবং মিরাজ় ৫পিএ যুদ্ধবিমানের বহর। রয়েছে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং কয়েকটি হেলিকপ্টার ইউনিটও।
অন্য দিকে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অদূরে চাকওয়ালের মুরিদ বিমানঘাঁটি হল পাক বায়ুসেনার ড্রোনবহরের সদর। এই বিমানঘাঁটিতে পাঁচটি ড্রোন স্কোয়াড্রনই ‘অপারেশন সিঁদুরে’র প্রথম তিন দিন ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত লঙ্ঘন করে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল বলে সেনা সূত্রের খবর। ভারতীয় ফৌজের প্রত্যাাঘাতে মুরিদের প্রধান ভবনটির প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছিল। এর পরে বেশ কয়েক মাস উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছিল, সেটিকে আড়াল করে সবুজ রঙের ত্রিপলের আচ্ছাদন বসানো হয়েছে। এনডিটিভি প্রকাশিত প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত ১৬ ডিসেম্বর তোলা উপগ্রহচিত্রে দেখা যাচ্ছে, কলেবর বেড়েছে সেই আচ্ছাদনের। রং বদলে হয়েছে লাল।
নতুন করে রেডার এবং ঘাতক ড্রোন নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম বসানোর উদ্দেশ্যেই এই তৎপরতা বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। উপগ্রহচিত্র বিশেষজ্ঞ ড্যামিয়েন সাইমন বলেন, ‘‘এখন মুরিদ বিমানঘাঁটির কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল ভবনটি সম্পূর্ণরূপে নতুন ত্রিপল এবং জাল দিয়ে ঘেরার ঘটনা সম্ভবত পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা শুরুর ইঙ্গিতবাহী। ভবনের চারপাশে নিয়ন্ত্রণের মাত্রাও ইঙ্গিত দেয় যে সম্ভবত আগের চেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ ক্ষতি হয়েছে।’’ ভারতীয় সেনার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মিসাইল ওয়ারহেড বিমানঘাঁটির মূল নিয়ন্ত্রণ ভবনের ছাদের কংক্রিট চুরমার করে ভিতরে আঘাত করেছিল বলেও জানান তিনি।