চেন্নাই সুপার কিংগসের গুরুনাথ মইয়াপ্পন আইপিএল-এ বেটিং করতে গিয়ে ৬০ লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন।
শুধু এন শ্রীনিবাসনের জামাইয়ের টাকা নয়। বিপুল পরিমাণ কালো টাকা খাটছে ক্রিকেট বেটিংয়ে। এই ক্রিকেট বেটিং এবং তাতে কালো টাকার রমরমা রুখতে নির্দিষ্ট আইনের সুপারিশ করল বিচারপতি এম শাহ-র নেতৃত্বাধীন এসআইটি। জুয়ায় বেটিংয়ের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারই আইন তৈরি করতে পারে। কালো টাকা উদ্ধারে তৈরি এসআইটি-র যুক্তি, এক দিকে ক্রিকেট বেটিংয়ে কালো টাকা খাটছে। আবার বেটিং থেকে যে টাকা আয় হচ্ছে, সেটাও পুরোপুরি কালো টাকা। তাই অবিলম্বে আইন বা নিয়ন্ত্রণবিধি দরকার।
কত টাকা খাটছে ক্রিকেট বেটিংয়ে?
এসআইটি তিন বছর আগের ফিকি-কেপিএমজি-র রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলছে, ভারতে ৩ লক্ষ কোটি টাকার ক্রিকেট বেটিংয়ের বাজার রয়েছে। এর উপর যদি ২০ শতাংশ হারে কর বসানো যায়, তা হলে প্রতি বছর রাজকোষে ১২ থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতে পারে। কিন্তু বেটিং আইনত নিষিদ্ধ। একমাত্র ঘোড়দৌড় ও লটারিতে জুয়া আইনত অপরাধ নয়। কিছু রাজ্যে ক্যাসিনোরও অনুমতি রয়েছে। ক্রিকেট বেটিং আইনত অপরাধ হলেও দেশ জুড়ে এর রমরমা বাজার। বুকিদের মাধ্যমে বাজি ধরা হয়। সেই বুকিরাই আবার ক্রিকেটারদের টোপ দিয়ে ম্যাচ-ফিক্সিং বা স্পট-ফিক্সিংয়ের চেষ্টা করে। পুরোটাই বেআইনি কারবার হওয়ায় যাঁরা বাজি ধরেন, তাঁদেরকেও বুকিদের ঠকানো সহজ।
কালো টাকার রহস্য উদ্ধারে নেমে এসআইটি ২০১৩-র আইপিএল-এর ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের বিষয়টিও খতিয়ে দেখেছে। ওই কেলেঙ্কারির জেরেই লোঢা কমিটির নিদানে চেন্নাই সুপার কিংগস ও রাজস্থান রয়্যালস দু’বছরের জন্য আইপিএল থেকে বাদ গিয়েছে। গুরুনাথ মইয়াপ্পন ও রাজ কুন্দ্রা ক্রিকেট থেকে চিরনির্বাসিত। কিন্তু লোঢা কমিটির ওই নিদানেই যে ক্রিকেট বেটিংয়ের শিকড় উপড়ে ফেলা যাবে না, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে এসআইটি।
কালো টাকার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের বারবার নির্দেশ সত্ত্বেও ইউপিএ সরকার এসআইটি গঠন করেনি। নরেন্দ্র মোদী লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় আসার পরই শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে কালো টাকা উদ্ধারে এসআইটি গঠন করে মোদী সরকার। বিচারতি এম বি শাহ-র নেতৃত্বে ওই কমিটিই আজ সুপ্রিম কোর্টে তাদের তৃতীয় রিপোর্ট পেশ করেছে।
ক্রিকেট বেটিং বাদ দিলেও এসআইটি-র সাম্প্রতিক রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে ললিত মোদী-আইপিএল কেলেঙ্কারির ছায়া।
ললিত মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, কর ফাঁকির অন্যতম স্বর্গরাজ্য কেম্যান আইল্যান্ডে তাঁর বেশ কিছু বেনামি সংস্থা রয়েছে। আইপিএল-দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা ওই সব সংস্থাতেই বিনিয়োগ হয়েছে। তার পর সেই সব সংস্থারই টাকা ঘুরপথে বসুন্ধরা রাজে-পুত্র দুষ্মন্ত সিংহের হোটেল সংস্থার মতো বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ হয়েছে। প্রথমে ওই সংস্থাকে নিঃশর্ত ঋণ, তারপর সেই সংস্থার ১০ টাকার শেয়ার প্রায় ৯৬ হাজার টাকায় কিনে ফেলেন ললিত।
আজ এসআইটি এক দিকে যেমন কেম্যান আইল্যান্ড থেকে ভারতে অস্বাভাবিক পরিমাণ লগ্নির দিকে আঙুল তুলেছে, তেমনই কোনও শেয়ারের এই ভাবে অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়েও সেবি-র নজরদারি ও নিয়মাবলী তৈরির সুপারিশ করেছে।
ক্যারিবিয়ান সাগরে কেম্যান আইল্যান্ডের জনসংখ্যা ৫৫ হাজারেরও কম। সেবি-র হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ দেশের শেয়ার বাজারে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় পৌনে তিন লক্ষ কোটি টাকা ঢুকেছে। এর মধ্যে পাঁচটি দেশ থেকে লগ্নির পরিমাণ সব থেকে বেশি— কেম্যান আইল্যান্ড, আমেরিকা, ব্রিটেন, মরিশাস ও বারমুডা। এর মধ্যে কেম্যান আইল্যান্ড থেকেই ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ লগ্নি কেম্যান আইল্যান্ডের নাগরিকেরা করেননি, অন্য কেউ সেখানে বেনামি সংস্থা তৈরি করে ভারতে টাকা ঢালছে।
এসআইটি-র সুপারিশ, বিদেশি সংস্থায় পার্টিসিপেটরি-নোটের মাধ্যমে যাঁরা এ দেশে লগ্নি করছেন, তাঁদের আসল পরিচয় উদ্ধারে সেবি কিছু ব্যবস্থা তৈরি করুক। একই ভাবে কোনও শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে নজরদারির ব্যবস্থা করুক। নজরে আসা মাত্র প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (সিবিডিটি) ও ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিয়নকেও জানানো হোক। এসআইটি-র মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা ধর্মীয় সংগঠনে দান করার নামেও প্রচুর পরিমাণে কালো টাকা সাদা করা হয়। তাই একমাত্র চেকের মাধ্যমে এই ধরনের লেনদেন বাধ্যতামূলক করা হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy