কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে হলুদ খোলে সবুজ পাড়ের মাইসুরু সিল্ক শাড়ি এবং মাথায় জুঁইফুল পরে বুকার পুরস্কার বিজয়ী লেখিকা বানু মুশতাক সোমবার চামুণ্ডী পাহাড়ের চূড়ায় ১১ দিনের মাইসুরু দশেরা উৎসবের সূচনা করলেন। বানুকে দিয়ে এই উৎসব উদ্বোধন করানোর সিদ্ধান্তকে ঘিরে অনেক জলঘোলা হয়েছিল। হিন্দুত্ববাদী শিবির থেকে নানা রকম আপত্তি উঠেছিল। সেই আপত্তি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু কর্নাটক সরকার মাথা নোয়ায়নি। হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও সরকারের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়।
বানু মুশতাক এ দিন এই উৎসবকে কর্নাটকের যৌথ সংস্কৃতির প্রতীক বলে অভিহিত করেন। মাইসুরুর প্রধান দেবী চামুণ্ডেশ্বরীকে একজন নারীর শক্তি এবং তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রতীক বলে বর্ণনা করেন। বানু বলেন যে, নারীত্ব কেবল কোমলতা এবং মাতৃস্নেহের বিষয় নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তির বিষয়ও। চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরে পুরোহিতদের বৈদিক স্তবগানের মধ্যে দেবীমূর্তিতে ফুল বর্ষণ করে শুভ বৃশ্চিক লগ্নে উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি। তার আগে তিনি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে মন্দির পরিদর্শন করেন এবং দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। সিদ্দারামাইয়া এবং তাঁর সরকারকে নৈতিক ভাবে তাঁর পাশে থাকার জন্য এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দশেরা উদ্বোধনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।
হিন্দু ধর্মের সঙ্গে তাঁর বন্ধনের কথাও এ দিন তুলে ধরেন বানু। তিনি বলেন, “আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছি, অনেক বার আমন্ত্রণ পেয়েছি, প্রদীপ জ্বালিয়েছি, ফুল দিয়েছি এবং মঙ্গলারতি গ্রহণ করেছি। এটা আমার কাছে নতুন নয়।” তিনি জানান, যখন তাঁর নাম বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল, মাইসুরুতে তাঁর এক লেখক বন্ধু দেবী চামুণ্ডেশ্বরীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তাঁকে মন্দিরে নিয়ে আসার শপথ করেছিলেন। বানু বলেন, ‘‘নানা কারণে আমি এর আগে আসতে পারিনি। কিন্তু এ বার দেবী চামুণ্ডী নিজেই আমাকে সরকারের আমন্ত্রণের মাধ্যমে ডেকে নিয়েছেন।”
উদ্বোধনী ভাষণে বানু বলেন, ‘‘আমাদের সংস্কৃতি আমাদের শিকড়, সম্প্রীতি আমাদের শক্তি এবং অর্থনীতি আমাদের ডানা। আসুন আমরা একটি নতুন সমাজ গড়ে তুলি যা মানবিক মূল্যবোধ এবং ভালবাসায় পরিপূর্ণ। সেই সমাজে সকলের সমান অংশ এবং সুযোগ থাকুক। এই ভূমি সম্প্রীতি ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠুক। গণতন্ত্র কেবল একটি ব্যবস্থা নয়, সেটি একটি মূল্যবোধ। তাকে সম্মান করা সকলের কর্তব্য।”
বানু মনে করিয়ে দেন, মাইসুরুর উর্দুভাষীদের কাছেও নবরাত্রির প্রতিটি দিনের জন্য উর্দুতে নিজস্ব প্রতীকী নাম রয়েছে। কারণ এটি তাঁদেরও সংস্কৃতির অংশ। বানুর এক চাচা মাইসুরু মহারাজের দেহরক্ষী বাহিনীর একজন ছিলেন। সে কথা স্মরণ করে বানু বলেন, ‘‘মহারাজা জয়চামারাজেন্দ্র ওয়াদিয়ার মুসলিমদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলেন বলেই তাঁদের দেহরক্ষী হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। এটা সত্যিই আমাকে গর্বিত করে। আমরা সবাই এক আকাশের নীচে ভ্রমণ করি। আকাশ মানুষের মধ্যে পার্থক্য করে না এবং ভূমি কাউকে বহিষ্কার করে না। মানুষই সীমানা তৈরি করে, আমাদের সেই সীমানা মুছে ফেলা উচিত।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)