Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
BJP

কাশী-মথুরায় বিজেপির ভরসা কোর্ট ও ‘জনতা’

কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, বিষয়টি এমনিতেই বিচারাধীন। মন্দির-মসজিদ নিয়ে বলতে গেলে বিজেপি আরও মেরুকরণের রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে যাবে।

বিজেপির ভরসা।

বিজেপির ভরসা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৩৪
Share: Save:

জ্ঞানবাপী হোক বা ভবিষ্যতের মথুরা জন্মভূমি। সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদ পুনরুত্থানের প্রশ্নে ‘জনতা’র পথে নামাকে দল স্বাগত জানালেও, আগামী দিনে ওই আন্দোলনের সঙ্গে দল কোনও ভাবেই জড়াবে না বলে দাবি করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলীয় নেতাদের বক্তব্য, এই আন্দোলন মানুষের। তাঁরা তাঁদের ধর্মীয় অধিকারের প্রশ্নে আদালতে গিয়েছেন বা ভবিষ্যতে যাবেন। এতে বিজেপির কী করার আছে! জ্ঞানবাপী প্রশ্নে দূরত্ব রচনা করেছে সঙ্ঘ পরিবার। তারা চায় প্রকৃত সত্য সামনে আসুক। সব মিলিয়ে জনতা ও আইন ব্যবস্থার ঘাড়ে বন্দুক রেখেই নিজেরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে ‘অযোধ্যা তো ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়!’-এর লক্ষ্য পূরণে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার এগোচ্ছে বলেই দাবি করেছেন বিরোধীরা।

বারাণসীর জেলা আদালত জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে পুজোর দাবি নিয়ে মামলার শুনানিতে রাজি হওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে একমাত্র সিপিএম ছাড়া কংগ্রেস-সহ প্রায় সব বিরোধী দলই আপাতত নীরব থাকার নীতি নিচ্ছে। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, বিষয়টি এমনিতেই বিচারাধীন। মন্দির-মসজিদ নিয়ে বলতে গেলে বিজেপি আরও মেরুকরণের রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে যাবে। কংগ্রেস অবশ্য আগেই অবস্থান নিয়েছিল, ১৯৯১ সালে পি ভি নরসিংহ রাওয়ের তৈরি ধর্মস্থান রক্ষা আইন মেনে দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ে যেখানে যেমন মন্দির, মসজিদ বা গির্জা রয়েছে, তেমনই রেখে দেওয়া উচিত। তার চরিত্র বদল করতে যাওয়া উচিত নয়। একমাত্র বাবরি মসজিদ-রাম মন্দিরকে এই আইনের বাইরে রাখা হয়েছিল। আর কোনও মন্দির-মসজিদ বিতর্ক যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই এই আইন তৈরি হয়েছিল।

অন্য দিকে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, দল গোড়া থেকেই একটি বিষয় নিয়ে আন্দোলন করেছিল তা হল অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ। অন্য কোনও মন্দির নির্মাণ বা সেটির পুনরুদ্ধার নিয়ে দলের কর্মসূচি অতীতেও ছিল না। আজও নেই। কিন্তু দেশের আমজনতা যদি নিজেদের ধর্মস্থান পুনরুদ্ধারে নামে তাহলে বিজেপির সেখানে কিছু করার নেই। বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মানো যে ধর্মস্থান রক্ষা আইন মেনেও অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ হওয়া সম্ভব। ২০১৪ সালের পরে নরেন্দ্র মোদী সরকার এসে সেই দাবিকে বাস্তবায়িত করেছে। যা নতুন করে ভরসা দিয়েছে দেশের ধর্মানুরাগী সমাজকে। এখন তাঁরাই নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে চাইছেন। মাথায় রাখতে হবে জ্ঞানবাপী হোক বা শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি কিংবা কুতুব মিনার-কোনও বিতর্কিত কাঠামো নিয়ে বিজেপি এক বারও মুখ খোলেনি। মানুষ পথে নামলে বিজেপি তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে উল্টে আমাদের হিন্দু-বিরোধী বলে দাগিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ তাই বিষয়টি জনতার সদিচ্ছার উপরেই ছেড়ে দিয়েছে দল।

জ্ঞানবাপী প্রশ্নে নীরব সঙ্ঘ পরিবার। তারা সরাসরি মন্দির নির্মাণের প্রশ্নে দাবি না তুললেও, প্রকৃত সত্য যাতে সামনে আসে সে বিষয়ে সরব হয়েছিলেন সঙ্ঘের মুখপাত্র সুনীল অম্বেকর। কারণ সঙ্ঘ-বিজেপি নেতারা জানেন আগামী দিনে আদালতের নির্দেশে বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে এক বার জ্ঞানবাপীতে প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্বের উপস্থিতি পাওয়া গেলে দেশ জুড়ে তলে তলে হিন্দুত্বকে উস্কে দিতে পথে নামা যাবে। যে হাওয়ায় অনায়াসে এ বছরের শেষে হওয়া গুজরাত বা হিমাচলপ্রদেশের ভোট বৈতরণী পার হয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। অন্য দিকে বিরোধীদের অভিযোগ, মুখে বিজেপি এই আন্দোলনে না থাকলেও, যে ব্যক্তিদের মাধ্যমে আদালতে বিতর্কিত বিষয়গুলি তুলে ধরা হচ্ছে তাঁদের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের সরাসরি যোগ রয়েছে। কেবল মুখেই দূরত্বের কথা বলছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু তলে তলে সব ধরনের মদত দিয়ে যাচ্ছেন আবেদনকারীদের।

আজ সিপিএমের পলিটবুরো বিবৃতি দিয়ে বলেছে, বারাণসী জেলা আদালতের সিদ্ধান্ত ধর্মস্থান রক্ষা আইনের উদ্দেশ্যর বিরোধী। কারণ আদালত বলেছে, মসজিদের মধ্যে পুজোর দাবিতে মামলা শোনা যায়, তাতে আইনে বাধা নেই। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, বিচার বিভাগের একাংশ আইনের ভুলব্যাখ্যা করলে তার গুরুতর ফল দেখা যাবে, আইনের মাধ্যমে ঠিক যা রোখার চেষ্টা হয়েছিল। দেশের শাসক দল যে ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা করে সংখ্যালঘুদের নিশানা করতে বদ্ধপরিকর, তা গোপন বিষয় নয়। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়েছে বলে দাবি তুলে বরাবরই ধর্মীয় ভাবাবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Mathura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE