Advertisement
E-Paper

বাণিজ্যে বেসুরো বেজিং, ধন্দে ব্রিকস

সন্ত্রাসবাদের মতোই অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রশ্নেও মতান্তর বজায় রইল ব্রিকস-সম্মেলনে। গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলনের শেষে পাঁচ রাষ্ট্র ঘোষণা করল, বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা দ্রুত কাটাতে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৪
ব্রিকসের ফাঁকে।

ব্রিকসের ফাঁকে।

সন্ত্রাসবাদের মতোই অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রশ্নেও মতান্তর বজায় রইল ব্রিকস-সম্মেলনে।

গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলনের শেষে পাঁচ রাষ্ট্র ঘোষণা করল, বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা দ্রুত কাটাতে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ আরও বাড়াবে। কিন্তু পাকিস্তান প্রশ্নের মতো সেখানেও চিনের সঙ্গে ভারতের মতভেদ কাঁটা হয়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েই গেল।

পরিকাঠামোয় বেশি অর্থ ঢেলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য নতুন উন্নয়ন ব্যাঙ্ক তৈরির পর এ বার ভারত চাইছিল, উন্নয়নশীল দেশগুলি মিলে একটি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি বা অর্থনীতির মূল্যায়ন সংস্থা তৈরি করা হোক। কারণ মোদী সরকারের অন্দরমহলের মত হল, বিশ্বের তিনটি প্রধান মূল্যায়নকারী সংস্থা, ফিচ, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স ও মুডি’জ পশ্চিমের উন্নত অর্থনীতিগুলির প্রতি বেশি সদয়। তারা ভারতের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতি সম্পর্কে বরাবর নেতিবাচক মনোভাব নেয়। কিন্তু ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি তৈরির বিষয়ে মোটের উপর সহমত তৈরি হলেও চিনের আপত্তিতে এ বার এই চুক্তি সম্ভব হয়নি। কারণ চিন মনে করছে, মূল্যায়নকারী সংস্থার পিছনে কোনও সরকার থাকলে তার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টির খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আরও আলোচনা হবে বলে ঠিক হয়েছে।

পাঁচ বছর আগে মূলত উন্নত অর্থনীতিগুলির সঙ্গে দর কষাকষি করতে ও আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো মঞ্চে উন্নয়নশীল দেশগুলির হয়ে গলা তুলতেই ভারত, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া ও ব্রাজিল একজোট হয়ে ‘ব্রিকস’ তৈরি করে। এই পাঁচটি দেশের মোট জনসংখ্যা গোটা বিশ্বের অর্ধেক। সে সময়ে এই দেশগুলির অর্থনীতির মোট বহর ছিল ১৬ লক্ষ কোটি ডলার। যা গোটা বিশ্বের মোট অর্থনীতির চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু এই পাঁচ বছরে পাঁচটি দেশেরই অর্থনীতির ছবিটা মলিন হয়েছে। রাশিয়া, ব্রাজিলের অর্থনীতি মন্দাগ্রস্ত। দক্ষিণ আফ্রিকা মন্দা থেকে কোনওমতে গা বাঁচিয়ে চলছে। চিনের অর্থনীতিও সঙ্কুচিত হচ্ছে। ভারতের বৃদ্ধির হার গোটা বিশ্বে সব থেকে বেশি হলেও নতুন লগ্নি বা কারখানার উৎপাদনের নিরিখে ছবিটা মোটেই উজ্জ্বল নয়। এর মধ্যেই দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে ভারতের চিন-বিরোধী অবস্থান, চিন বা রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতা, এনএসজি-তে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে চিনের ভারত-বিরোধিতার মতো কূটনৈতিক প্রশ্নে মতান্তর ব্রিকস-এর ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

তা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন আজ ফের এই দেশগুলির একসঙ্গে থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। চিনফিং বিশ্ব জুড়ে মন্দার প্রকোপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘কিছু দেশ মুক্ত অর্থনীতির বদলে বিশ্বায়নের রাস্তায় বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাতে নতুন বিপদ তৈরি হচ্ছে।’’

গত পাঁচ বছরে ব্রিকস-এর দেশগুলির নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বিশেষ বাড়েনি। ২০১৫-য় যার পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার কোটি ডলারের কম, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ১ শতাংশেরও কম। মোদী মুখে একে দ্বিগুণ করার কথা বলেছেন। চিন প্রস্তাব দিয়েছে, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল তৈরি হোক। কিন্তু চিনের সঙ্গে অন্য দেশগুলির, বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্যিক ঘাটতি এতে বাধা তৈরি করেছে। অন্য দেশগুলির ভয় হল, মুক্ত বাণিজ্য করতে গিয়ে তাদের দেশের বাজার আরও বেশি করে সস্তার চিনা পণ্যে ভরে উঠবে।

এই পরিস্থিতিতে এ বারের গোয়ার ব্রিকস-সম্মেলনে একমাত্র আশার আলো হল, বিমস্টেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ব্রিকস-এর যোগাযোগ তৈরির প্রয়াস। যেখানেই ব্রিকস সম্মেলন হয়, সেখানেই আশেপাশের দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই অনুযায়ী ভারতের আমন্ত্রণে বঙ্গোপসাগর ঘিরে থাকা সাতটি দেশ, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড ও মায়ানমারকে নিয়ে তৈরি এই বিমস্টেক (বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিকাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন) গোষ্ঠীর সব রাষ্ট্রপ্রধান গোয়ায় এসেছেন। এই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগের ফলে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা, পরিকাঠামোয় লগ্নি আরও বাড়বে বলেই অর্থনীতিবিদদের মত। সম্মেলনের ঘোষণাতেও বলা হয়েছে, ব্রিকসের উন্নয়নে ব্যাঙ্ক পরিকাঠামো, প্রযুক্তি ও অপ্রচলিত শক্তিতে ঋণ দিতে নজর দেবে।

India china global financial crisis brics summit Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy