মিজোরামের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাজ করতে গিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফিরছেন কাছাড়ের শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে চার জন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। আরও চার জন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। আর অনেকেই হাসপাতালে আসেননি, বাড়িতেই চিকিত্সা চলছে তাদের।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মিজোরাম ফেরত শ্রমিকদের অধিকাংশই ছোট দুধপাতিল গ্রামের বাসিন্দা। সেখানে আজ স্বাস্থ্য শিবির করা হয়েছে। জ্বরে আক্রান্তদের রক্তপরীক্ষা করে সাত জনের দেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। পাঁচ জনের প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম এবং দু’জনের দেহে প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স জীবাণু রয়েছে। সাধন বাগতি নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে শিবির থেকেই শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা সুদীপজ্যোতি দাস বলেন, ‘‘মিজোরাম থেকে জ্বর নিয়ে যাঁরা বাড়ি ফিরেছেন তাঁদের মধ্যে চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তিনজনের বাড়ি দুধপাতিলে, অন্য জনের মাসিমপুরে।’’ শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এখনও পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যু সম্পর্কিত কাগজপত্র তিনি হাতে পেয়েছেন। তাতে ম্যালেরিয়ার উল্লেখ নেই। একজনের লিভার সংক্রান্ত সমস্যা, অন্য জন মারা গিয়েছেন সেপটোসেমিয়ায়। তাঁর কথায়, ‘‘৩৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ৭ জনের দেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধরা পড়ার পর, মৃতদেরও ম্যালেরিয়া হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে গ্রামবাসীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়ার ম্যালেরিয়া ইন্সপেক্টর হেমন্ত ই চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আজ মিজোরাম থেকে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে সাধারণ গ্রামবাসীদেরও রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ৯০-৯৫ জনের মধ্যে কারও দেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর সন্ধান পাওয়া যায়নি।’’
মিজোরাম ফেরত দুধপাতিলের শ্রমিকদের মধ্যে মুন্না দুষাদ জানান: মিজোরামের রাঙাসিয়া গ্রামে বিএসএফ জওয়ানদের কোয়ার্টার নির্মাণের কাজে শিলচরের এক ঠিকাদার তাদের নিয়ে যায়। প্রথমে যায় ২২ জনের একটি দল। এরপর আরও ১১ জন। তাঁরা রাঙাসিয়ায় পৌঁছে দেখেন, গা ছমছম করা পরিবেশ। আশপাশে লোকজন নেই বললেই চলে। ঠিকাদার বেশি পরিমাণে চাল, ডাল, আলু, ডিম কিনে নিয়েছিলেন। কিন্তু জল নেই। দূরে একটি ছোট নদী বয়ে চলেছে। ঘোলা জল। তাতেই স্নান, পান, সবকিছু। মুন্না পরিবেশ সহ্য করতে না পেরে ২৩ দিন পর চলে আসেন। তার অবশ্য কোনও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। কিন্তু এর ক-দিন পরই একে একে গ্রামের অন্যরা ফেরত আসতে থাকেন। সকলের জ্বর, গা-হাতে ব্যথা। আচমকা শরীরের তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যায়, কিছুক্ষণ পর আবার ঠাণ্ডা।
যুগ্ম অধিকর্তা জানান, উদ্বেগের কিছু নেই। এখন স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম ওই এলাকায় প্রতিদিন ঘুরে বেড়াবে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেবে। তিনি নিজেও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy