‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ করে প্রতারণার মামলার তদন্তে রাজধানী দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে হানা দিল সিবিআই। অভিযান চলেছে হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাত এবং কেরলেও। বুধবার দেশের মোট ৪০টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালান তদন্তকারী আধিকারিকেরা। তল্লাশি অভিযানে বেশ কিছু ডিজিটাল যন্ত্র (মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি), কেওয়াইসি নথি, সিম কার্ড এবং হোয়াট্সঅ্যাপ মারফত কিছু পুরনো কথোপকথনের তথ্য সংগ্রহ করছে সিবিআই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত পোর্টাল ‘ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ (আই৪সি)-এ সম্প্রতি ৯টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। আন্তর্জাতিক প্রতারণাচক্র ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ করে তাঁদের থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। ওই অভিযোগগুলির প্রেক্ষিতে এফআইআর রুজু করে তদন্তে নামে সিবিআই। তদন্তে বেশ কিছু ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’ (অন্যের নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, যেগুলি সাধারণত সাইবার প্রতারকেরা ব্যবহার করে)-এর সন্ধান পান আধিকারিকেরা। সেই সূত্র ধরে ৪০ জনকে শনাক্ত করা হয়। তদন্তকারীদের সন্দেহ, তাঁরা প্রত্যেকেই ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’-এর সংগঠিত সাইবার অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, অন্যের নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির পাশাপাশি হাওয়ালার মাধ্যমেও নিজেদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন চালাতেন এই চক্রের সদস্যেরা। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকার কিছু অংশ দেশের বিভিন্ন এটিএম থেকে তোলা হয়েছে। বাকি টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হত। এ ছাড়া প্রায় ১৫ হাজার আইপি অ্যাড্রেসও বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। তাতে দেখা যায়, কম্বোডিয়া থেকে এই প্রতারণাচক্রটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। প্রতারণাচক্রের মাথারা কম্বোডিয়া থেকে এ দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন। তদন্তে উঠে আসা এই সব তথ্যের ভিত্তিতেই বুধবার দেশের ৪০টি জায়গায় হানা দেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন:
সাম্প্রতিক কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’-এর ফাঁদে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জালিয়াতদের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন অনেকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ আইফোরসি-ও একটি অ্যাডভাইজ়রি প্রকাশ করেছিল। সেখানেও বলা হয়েছিল এই ধরনের ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’ এক ধরনের দুর্নীতি। সাধারণ মানুষকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়ে ওই অ্যাডভাইজ়রিতে বলা হয়েছিল, সিবিআই, পুলিশ, কাস্টমস, ইডি কিংবা বিচারক— কেউই ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেন না। প্রতারণার এই চক্রের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।