E-Paper

আইএএস পাঠাচ্ছে না রাজ্য, ফাঁপরে কেন্দ্র

কেন্দ্রের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “এখন প্রতি বছর ১৮০ জন করে আইএএস নিয়োগ করা হয়। মনে হচ্ছে, তা বাড়িয়ে প্রতি বছর ২১০ জন করে আইএএস নিয়োগ করতে হবে।”

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৪ ০৮:২৭
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।

এমনিতেই কেন্দ্রীয় সরকারে যত জন আইএএস অফিসার প্রয়োজন, তার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্য নিজের ক্যাডারের আইএএস অফিসারদের যথেষ্ট সংখ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারে কাজ করার জন্য দিল্লিতে পাঠাতে রাজি নয়। যুগ্ম-সচিব, উপসচিব, অধিকর্তা পদে সরাসরি ৪৫ জনকে নিয়োগ করা হলে কিছু শূন্যপদ পূরণ করা হতো। কিন্তু এনডিএ-র শরিক দলের চাপ এবং বিরোধীদের তোপের মুখে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়েছে। এখন মোদী সরকারের মাথায় হাত পড়েছে। আইএএসের ঘাটতি কী ভাবে মিটবে?

কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্য সরকার সেই রাজ্য ক্যাডারের আইএএস-দের কেন্দ্রীয় সরকারে কাজ করতে পাঠাতে নারাজ। অনেক অফিসার আবার নিজেরাই রাজ্য ছেড়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারে কাজ করতে রাজি নন। ফলে আইএএস-দের ঘাটতি মিটবে কী ভাবে, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।” কেন্দ্রের এই শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “এখন প্রতি বছর ১৮০ জন করে আইএএস নিয়োগ করা হয়। মনে হচ্ছে, তা বাড়িয়ে প্রতি বছর ২১০ জন করে আইএএস নিয়োগ করতে হবে।”

গত বছর কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ দফতর সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছিল, গোটা দেশে প্রায় ৬,৭০০ জন আইএএস রয়েছেন। তার মধ্যে ১,৪৬৯ জন আইএএস-এর কেন্দ্রীয় সরকারে কাজ করার কথা। কিন্তু মাত্র ৪৪২ জন কাজ করছেন, যা প্রয়োজনের ৩০ শতাংশেরও কম। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ নিজের ক্যাডার থেকে সব থেকে কম সংখ্যক আইএএস অফিসার দিল্লিতে পাঠায়। পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস-এর সংখ্যা ৩৭৮ জন। এর মধ্যে ৮২ জনের দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ডেপুটেশনে কাজ করার কথা। কিন্তু মাত্র ৬ জন অফিসার দিল্লিতে রয়েছেন। উল্টো দিকে নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, অনুমোদিত আইএএসের সংখ্যা ৩৭৮ হলেও বাস্তবে ৩০০ জনের মতো পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের খবর, অন্ধ্র প্রদেশ, বিহার, ছত্তীসগঢ়, হরিয়ানা, হিমাচল, এমনকি গুজরাতও নিয়ম মতো নিজের আইএএস-দের দিল্লিতে পাঠাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যের অনুমতি ছাড়া কোনও আইএএস-কে দিল্লিতে নিয়োগ করা সম্ভব নয়।

সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতি থেকেই প্রতি বছর আইএএস নিয়োগের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। আশু সমাধান হিসেবে ঠিক হয়েছিল, প্রায় ৫০ জনের মতো বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞদের সরাসরি যুগ্মসচিব, উপসচিব, অধিকর্তা পদে নিয়োগ করা হবে। এই পদগুলিতে আইএএস-রাই কাজ করেন। সেই মতো ৪৫টি পদে সরাসরি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল। তার পরেই রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী শিবির অভিযোগ তোলে, সংরক্ষণের নীতি না মেনে এই সব পদে সরাসরি নিয়োগ করা হচ্ছে। এনডিএ সরকারে বিজেপির শরিক নীতীশ কুমারের জেডিইউ, চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টিও এ নিয়ে আপত্তি তোলে। প্রথমে ‘সুশাসনের প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত’ বলে রুখে দাঁড়ালেও চাপের মুখে মোদী সরকারকে ‘সামাজিক ন্যায়’-এর গুণগান গেয়ে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হয়।

এখন আইএএস-এর অভাব কী ভাবে মিটবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ দফতরের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি বিধিনিয়ম বদল করে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নিজের প্রয়োজন মতো আইএএস-দের দিল্লিতে নিয়োগ করার ক্ষমতা তুলে নিতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

IAS Narendra Modi Indian Administrative Service

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy