রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।—ছবি পিটিআই।
লোকসভা ভোটের আগে এ বার অসমিয়া-ভাষীদের মন জয় করতে অসম চুক্তির ‘ছ’নম্বর ধারা’র বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই কমিটি অসমিয়াদের সংরক্ষণ ও স্বার্থ সুরক্ষিত করার বিষয়টি দেখবে।
আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘অসম বিধানসভা এবং স্থানীয় পরিষদগুলিতে ভূমিপুত্রদের জন্য আসন সংরক্ষণ ও সরকারি চাকরিতে আসন সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে কমিটি রিপোর্ট দেবে। মাথায় রাখা হচ্ছে বড়ো সম্প্রদায়ের অপূর্ণ দাবি এবং বড়ো চুক্তির বিভিন্ন বিষয়গুলিও।’’ রাজনাথের ওই বক্তব্যের পরই কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে অসমিয়াদের ভোটব্যাঙ্ক কব্জা করতেই ওই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র।
একদিকে অসমে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নবীকরণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। অন্য দিকে, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে রাজ্য জুড়ে চলা আন্দোলনের মধ্যেই যৌথ সংসদীয় কমিটি তাদের রিপোর্ট লোকসভায় পেশ করতে যাচ্ছে। এই আবহের মধ্যেই অসম চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে এই কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দু’কূল রক্ষার প্রয়াস শুরু করল বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
প্রদেশ কংগ্রেসের মতে, নাগরিকত্ব বিল দিয়ে বাংলাভাষী হিন্দুদের তুষ্ট করার পাশাপাশি অসমিয়া ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই ভোট বাজারে সক্রিয় হয়েছে মোদী সরকার। কংগ্রেস মুখপাত্র প্রদ্যোৎ বরদলৈ বলেন, ‘‘২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করলে অসম চুক্তিই ব্যর্থ হয়ে যাবে। সেই সংশোধনী পাশ হলে অসম চুক্তি রূপায়ণে কমিটি গড়ে কি লাভ?’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আসলে অসমিয়াদের কয়েকটি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে বিজেপি।’’ আসুর সাধারণ সম্পাদক লুরিনজ্যোতি গগৈ বলেন, ‘‘কমিটি গঠনে কারা থাকবে তা অনেক আগেই স্থির হয়ে গিয়েছে। এখন হঠাৎ ভোটের আগে নতুন কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করা একেবারেই হাস্যকর।’’
অসম চুক্তির ছ’নম্বর ধারায় অসমিয়াদের সাংবিধানিক ও অন্য স্বার্থ সুরক্ষিত করার কথা আছে। কিন্তু প্রধান সমস্যা হল, অসমিয়া কারা-সেই সংজ্ঞাই সর্বসম্মত ভাবে ঠিক করা যায়নি। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী রায় বলেন, ‘‘অসমিয়াদের স্বার্থ সুরক্ষার কথা বলা হলেও অসমিয়া কারা সেটাই আজও নির্ধারিত হয়নি। তা না করেই ওই কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত অর্থহীন।’’ বাঙালি সংগঠনটির দাবি, নাগরিকত্ব আইন পাশ করানো যেমন হচ্ছে, তেমনই বাঙালিদের রাজনৈতিক ক্ষমতা খর্ব করার চক্রান্ত চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy