নয়াদিল্লি, ১৩ মার্চ: শত্রুর শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা রণকৌশলের অঙ্গ। তা কূটনীতির পুরনো রেওয়াজও বটে। আপাতত পাকিস্তান এবং চিনের সঙ্গে আফগানিস্তানের সংযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেই পন্থা অবলম্বন করল দিল্লি। কাবুলের তালিবান শাসকের সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর পরবর্তী ধাপ হিসেবে নয়াদিল্লিতে শীঘ্রই কাবুল দূতাবাসের প্রধান অর্থাৎ রাষ্ট্রদূত নিয়োগের অনুমতি দেবে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে।
কূটনৈতিক মহলের মতে, চিন এবং পাকিস্তানের দিকে লক্ষ্য রেখেই এই পদক্ষেপ করছে নয়াদিল্লি। কারণ, তালিবানের ফিরে আসাকে ভারত-বিরোধিতায় কাজে লাগাতে এই দুই দেশ যে তৎপর, সেই সঙ্কেত আসছে সাউথ ব্লকে। পাশাপাশি কাবুলকে কাজ লাগিয়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে দিল্লির ব্যবসাবৃদ্ধির পরিকল্পনাও মাথায় রাখছে মোদী সরকার। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে সুন্নি চরমপন্থী শাসিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই ধাপ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
আমিরশাহির দুবাইয়ে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের কার্যনির্বাহী বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব স্তরের বৈঠক করেছিলেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। আলোচনায় আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে ইরানের চাবাহার বন্দর থেকে পণ্য চলাচলের পাশাপাশি সে দেশের বাণিজ্যবৃদ্ধি, বিবিধ পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হয়। সূত্রের খবর, তখনই প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়ে যায় নয়াদিল্লিতে আফগানিস্তানের দূতাবাসের প্রধানকে নিয়োগ করতে দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত এর আগে মুম্বইয়ে আফগানিস্তানের কনস্যুলেটের প্রধান নিয়োগের অনুমতি দিয়েছিল সাউথ ব্লক। শর্ত ছিল, ভারতে বসবাসকারী এবং ভারতে পড়াশোনা করেছেন, এমন কাউকে সেই পদ দিতে হবে।
এর আগে ১৯৯৬ সালে যখন আফগানিস্তানে তালিবান অভ্যুত্থান হয়, ভারত কাবুলে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট তালিবান ফের ক্ষমতা দখল করলে আনুষ্ঠানিকভাবে তেমনটা করা হয়নি। সে সময় ভারতীয় কূটনীতিকদের ফেরত আনা হলেও কয়েক মাসের মধ্যে একটি ‘টেকনিক্যাল টিম’ পাঠানো হয়েছিল। সেই দলই ভারতীয় দূতাবাস চালাচ্ছিল। গত দু’ছরে তালিবানের সঙ্গে বহু দফায় আলোচনা করেছে ভারত। সম্প্রতি ভারতের এক কূটনীতিক আফগানিস্তানের কার্যনির্বাহী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইয়াকুব তালিবানের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের পুত্র।
আফগানিস্তানের সংঘর্ষময় পর্বে, তালিবানদের উত্থানের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ইসলামাবাদ। শুধু তা-ই নয়, ভারতে বহু সন্ত্রাসবাদী হামলার ক্ষেত্রেও তালিবানকে কাজে লাগানোর অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দিল্লি-কাবুল সম্পর্কেও। ফলে, ২০২১ সালে তালিবানরা ক্ষমতায় ফেরার পরে এক দিকে ভারতের আঞ্চলিক নীতিতে ধাক্কা লাগে; অন্য দিকে পাকিস্তানের লাভের সম্ভাবনা দেখা দেয়, বিশেষত পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সখ্যের জেরে। তবে তালিবান শাসনকালে ভূমিকম্পের মতো আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ করেনি দিল্লি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)