দিল্লি থেকে উদয়পুরের বিমানভাড়া ২৪ হাজার টাকা। মুম্বই থেকে ভুবনেশ্বরগামী বিমানের টিকিটের দাম প্রায় ৮৪ হাজার টাকা। ইন্ডিগো বিভ্রাটের মাঝেই অন্য বিমান সংস্থাগুলি ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকাচ্ছে বলে অভিযোগ। এই আবহে শনিবার ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ করল কেন্দ্র। অতিমারির পরে এই প্রথম বার। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান মন্ত্রক বিমান ভাড়া বেঁধে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, যাত্রীদের স্বার্থেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। যত দিন না ইন্ডিগো সংস্থার বিমান পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন এই ব্যবস্থা থাকবে। যদিও যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, এত দেরিতে কেন এই পদক্ষেপ করা হল।
কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমান বিশৃঙ্খলার মাঝে কিছু বিমান সংস্থা অস্বাভাবিক ভাড়া নিচ্ছে। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। দেশের যে সব রুটে বিমান পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে, সেখানে যাতে সংস্থাগুলি ‘ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত’ ভাড়া নেয়, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ইন্ডিগো বিমান সংস্থার পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তত দিন কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার বেশি আদায় করতে পারবে না অন্য বিমান সংস্থাগুলি। ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে সর্বোচ্চ ৭,৫০০ টাকা, ৫০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরত্বে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ নিতে পারবে বিমান সংস্থাগুলি। ১০০০-১৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা, ১৫০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা ভাড়া নিতে পারবে বিমান সংস্থাগুলি।
কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, যাত্রীদের থেকে তা নেওয়ার জন্য সব বিমান সংস্থাকে সরকারি ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা জারি থাকবে। বাজারে বিমান ভাড়ার শৃঙ্খলারক্ষা এবং যে সব যাত্রীদের জরুরি ভিত্তিতে যাতায়াতের প্রয়োজন, বিশেষত প্রবীণ নাগরিক, অসুস্থ বা পড়ুয়া, তাঁদের স্বার্থরক্ষা করাই হল উদ্দেশ্য।’’ আগামী দিনেও বিমানের ভাড়া কেমন থাকছে, তার উপর নজর দেওয়ার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র।
একের পর এক ইন্ডিগো বিমান বাতিল হওয়ার পরে বিপাকে পড়েন দেশের হাজার হাজার যাত্রী। অনেকেই উপায় না দেখে অতিরিক্ত ভাড়া গুনে অন্য সংস্থার বিমানে চেপে গন্তব্যে পৌঁছোতে বাধ্য হন। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, শুক্রবার দিল্লি থেকে উদয়পুর যাওয়ার বিমান ভাড়া ছিল ১১ হাজার টাকা। অন্য একটি বিমান সংস্থা সেই একই রুটে ভাড়া নিয়েছে ২৪ হাজার টাকা। সেই যাত্রীদের অভিযোগ, কেন্দ্র সব জেনেও কেন এত দেরিতে পদক্ষেপ করছে। কেন এর আগে বিমান ভাড়া বেঁধে দেয়নি।
প্রতি দিন দেশে প্রায় ২,২০০ বিমান চালায় ইন্ডিগো। শুক্রবার প্রায় হাজারটি বিমান বাতিল হয়েছে। ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রের একটি বিধি। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন্স’ নামের ওই বিধিতে বলা হয়েছিল, প্রতি সপ্তাহে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের বিশ্রামের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে মাত্র ২টি বিমান রাতে অবতরণ করাতে পারবেন এক জন পাইলট (আগে সংখ্যাটা ছিল ৬)। তা ছাড়া ওই বিধিতে বলা হয়, পাইলট এবং বিমানকর্মীদের পর পর দু’দিন নাইট ডিউটি দেওয়া যাবে সপ্তাহে এক বারই। ২০২৪ সালের জুনেই এই বিধি কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু বিমানসংস্থাগুলির অনুরোধে তা বার বার পিছিয়ে যায়। সম্প্রতি নতুন বিধি কার্যকর করার জন্য ডিজিসিএ-কে নির্দেশ দেয় দিল্লি হাই কোর্ট। জুন এবং নভেম্বরে দুই দফায় ধাপে ধাপে নির্দেশিকায় থাকা নিয়মাবলি কার্যকর করার পথে হাঁটে ডিজিসিএ।