করোনার টিকা নেওয়ার পরে যাঁরা গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশের মধ্যেই হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা বেশি দেখা গিয়েছে বলে এমস গোরক্ষপুরের একটি গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে খুব কম সংখ্যক রোগীর উপরে এই সংক্রান্ত সমীক্ষাটি হওয়ায় আরও বিশদে ওই গবেষণা করার সুপারিশও করা হয়েছে গবেষকদের রিপোর্টে।
এ মাসের প্রথম সপ্তাহে এমস গোরক্ষপুর হাসপাতালের দুই গবেষক, অবিন কুলাথনকল ও মহম্মদ আবু বশর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়েছে, করোনার টিকা নেওয়ার পরে গুরুতর অসুস্থ হওয়া ২৭০৮ জন রোগীর উপরে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। এঁদের প্রায় ৭০ শতাংশই কোভিশিল্ড প্রতিষেধক নিয়েছিলেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই রোগীদের মধ্যে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১১১৪ জন (৪২.১%) মারা যান। বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসার পরে বাড়ি ফিরে যান। রিপোর্ট বলছে, যাঁরা অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের প্রায় ৩১ শতাংশের হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়েছিল। সেই সমস্যা তাঁদের আগে থেকেই ছিল, না কি কোনও কারণে নতুন করে দেখা দিয়েছিল, সে বিষয়ে গবেষণায় কিছু বলা হয়নি। হৃদ্রোগ যাঁদের ধরা পড়েছে, তাঁরা করোনার টিকা নিয়েছিলেন কি না, কোন টিকা নিয়েছিলেন, এ ভাবে সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল। এই রোগীদের ১৩ শতাংশের শ্বাসজনিত সমস্যা ও ১৩.১ শতাংশের স্নায়ুর সমস্যাও ধরা পড়ে। রিপোর্ট বলছে, এই জাতীয় সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয় বয়স্কদের। আবার ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে’ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা অনেক কম।
যদিও রিপোর্টে এ-ও স্পষ্ট বলা হয়েছে, রোগীের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করোনার টিকা নেওয়ার জন্যই দেখা দিয়েছিল, বা করোনার টিকাই ওই রোগীদের মৃত্যুর কারণ— এমনটা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। তা নির্ণয় করার জন্য আরও বিশদে গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, সংক্রমণের সময়ে করোনার টিকার কোনও বিকল্প ছিল না, আজও নেই। টিকাকরণের পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক কারণেও অনেকে মারা গিয়েছেন। তার জন্য কোনও ভাবেই টিকাকরণকে দায়ী করা যায় না। স্বাভাবিক কারণে দেশে রোজই গড় সংখ্যক কিছু মানুষের মৃত্যু হয়। গবেষকদের মতে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এঁদের ৯৯ শতাংশই করোনার সময়ে টিকা নিয়েছিলেন। তা বলে কোনও ভাবেই সেই মৃত্যুর জন্য টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে দায়ী করা যায় না।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)