নাগরিকপঞ্জি নবীকরণে সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করছে বলে অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। এনআরসি দফতরের দাবি, বাংলা-বিহার নথি যাচাইয়ে অস্বাভাবিক দেরি করাতেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে নবীকরণ প্রক্রিয়া।
আজ বিধানসভায় বিধায়ক অজন্তা নেওগ বলেন, ‘‘কংগ্রেস আমলে যে ভাবে সময় মেনে এনআরসির কাজ এগোচ্ছিল, তা এখন একেবারে ঢিমেতালে চলছে। তার মধ্যে আগের আমলে জমা পড়া সাড়ে ৬ কোটি নথিপত্র ফের যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গোটা প্রক্রিয়া অনিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, হঠাৎ কেন এতগুলি নথি যাচাই করা হবে, কোথা থেকে নথি নিয়ে অভিযোগ এল তার জবাব দিতে হবে সরকারকে। নাগরিকপঞ্জি নবীকরণ কবে হবে, তা-ও স্পষ্ট করতে বলেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী কেশব মহন্ত জানান, শুদ্ধ নাগরিকপঞ্জি রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব। তাই শপথ নিয়ে নিজের দফতর নয়, প্রথমেই এনআরসি দফতরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এনআরসি সংক্রান্ত সব নথি যাচাই প্রক্রিয়া ও অন্যান্য পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও পরামর্শ মেনেই করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভিনরাজ্য থেকে অসমে আসা ব্যক্তিদের বংশবৃক্ষ যাচাই করার জন্য সে সংক্রান্ত কাগজপত্র বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাতে হচ্ছে। কিন্তু ওই সব রাজ্যের কাছ থেকে জবাব আসতে দেরি হচ্ছে। তরুণ গগৈ পরে বলেন, ‘‘প্রথমে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হোক। তার পর ভুল শোধরানো যাবে। তা কেন করা হচ্ছে না?’’ তাঁর দাবি, এনআরসির দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলাকে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। প্রতি পদে সরকার হস্তক্ষেপ করছে। এনআরসি নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে সরকারেই। বিদেশি সমস্যার সমাধান চায় না এই সরকার।
২০১৩ সালে রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি নবীকরণের কাজ শুরু হয়। দফতর সূত্রে খবর, বিহারে পাঠানো হয়েছিল ৪৭ হাজার ৪২৩টি নথি। প্রশাসনের দাবি, তার একটিও নথি সেই রাজ্য যাচাই করে পাঠায়নি। ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট ২৮টি রাজ্যকে অসম থেকে পাঠানো নাগরিকপঞ্জি সংক্রান্ত নথি দ্রুত যাচাই করার নির্দেশ দিলেও অধিকাংশ রাজ্য তাতে সাড়া দিচ্ছে না।
প্রতীক হাজেলা জানান, অসম থেকে বিভিন্ন রাজ্যে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার নথি যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৬৪ হাজার ৪৫২টি নথি ফেরত এসেছে। তাই নাগরিকপঞ্জি নবীকরণে বিলম্ব হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও ভাল সাড়া মিলছে না। সেখানে পাঠানো ৯২ হাজার ৮৩টি নথির মধ্যে যাচাই করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫০৯টি নথি। সব চেয়ে ভাল সাড়া দিয়েছে ত্রিপুরা। তারা ৩৯ হাজার ২৪৯টি নথির মধ্যে ২০ হাজার ৮৬৪টি নথি যাচাই করে দিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন দফতরে থাকা মোট ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ যাচাই যোগ্য নথির মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৫ কোটি ৪৬ লক্ষ নথি পরীক্ষার কাজ শেষ। নকল নথি জমা দেওয়ায় মামলা দায়ের হয়েছে ১৬৬টি। মহন্ত জানান, সব জেলার জেলাশাসককে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী পাল্টা কংগ্রেসের কোর্টে অভিযোগ ঠেলে জানান, ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজ্যে আসা সকলের নাম এনআরসিতে ঢোকাতে বলে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়েছিল কংগ্রেস সরকার। সুপ্রিম কোর্ট তা নাকচ করায় রাজ্য বেঁচে গিয়েছে।
অগপ বিধায়ক পবীন্দ্র ডেকা জানান, নাগরিকপঞ্জির কাজ টাকার অভাবে থেমে রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরচ্ছে। তাতে মানুষের আস্থা কমছে। মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি জানান, এনআরসি নবীকরণের জন্য প্রথমে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পরে কেন্দ্র বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯৬৮ কোটি করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩৩৫ কোটি রাজ্য পেয়েছে। রাজ্য সরকারের ভাগের ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ৭৫ কোটি ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। ডেটা-এন্ট্রির কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে। মন্ত্রী জানান, ওই সংস্থা তাদের ঠিকাকর্মীদের ঠিকমতো বেতন দেয়নি বলে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এনআরসির কাজে সরকারের ৪০ হাজারের বেশি কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। ওই সংস্থার ঠিকাকর্মী মাত্র সাড়ে সাত হাজার। তারা কাজ বন্ধ করলে রাজ্য সরকার কর্মী দেবে। কিন্তু নবীকরণের কাজ থামবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy