বিচারপতিকে সীমা লঙ্ঘন না করতে বলেছিলেন প্রকাশ্য আদালতে। সেই সঙ্গে বলেছিলেন বিচারবিভাগ-সহ গোটা দেশে আগুন জ্বলছে। সেই প্রবীণ আইনজীবী মহেশ তিওয়ারির বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা শুরু করল ঝাড়খণ্ড হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে বিচারপতি রাজেশ কুমারের এজলাসে এক বৃদ্ধার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সওয়াল করেন মহেশ। ৫০ হাজার টাকা জমা দিলে বিদ্যুৎ সংযোগ ফের চালু করার নির্দেশ দেয় ঝাড়খণ্ড হাই কোর্ট। মহেশ জানান, তাঁর মক্কেল এক জন বৃদ্ধা ও শারীরিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল। তাই মানবিক কারণে আরও কিছুটা ছাড় দেওয়ার প্রার্থনা করেন তিনি।
জবাবে বিচারপতি জানান, তাঁর এজলাস ক্ষমাভিক্ষা করার আদালত নয়। আইনের আদালত। ন্যায় দেওয়ার আদালত নয়।
এর পরে অন্য এক মামলায় বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘আপনি সওয়ালে বলবেন আপনার মক্কেল গরিব, স্বামীহারা। যদি স্থগিতাদেশ দেওয়া না হয় তবে তা অবিচার। কেমন সওয়াল চলছে? আমরা অবিচার করছি। আমি মামলা খারিজ করলে প্রবল অবিচার হচ্ছে, এটাই আপনার সওয়াল? আর বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বসে শুনছেন। তাঁকে এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে।’’ এর পরে ঝাড়খণ্ড বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র কৃষ্ণকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে আপনার আইনজীবী সওয়াল করবেন।’’
এর পরেই আইনজীবী মহেশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘মহামান্য বিচারপতিরা কি আমাকে কিছু বলছেন? আমি আমার মতো করে সওয়াল করতেই পারি। আপনি যে ভাবে বলবেন সে ভাবে সওয়াল করব না। এটা মনে রাখবেন।’’ বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি বলতে পারেন না যে আদালত অবিচার করছে। ভিডিয়ো রেকর্ডিংরয়েছে।’’ জবাবে মহেশ বলেন, ‘‘আমি কেবল মহামান্য বিচারপতির সামনে প্রার্থনা জানিয়েছি। কোনও আইনজীবীকে অপমান করবেন না।’’ জবাবে আবার বিচারপতিবলেন, ‘‘এটা বিচারপতিকে অপমানের প্রশ্ন।’’ স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ মহেশ বলেন, ‘‘দয়া করে কাউকে অপমান করবেন না। বিচারবিভাগ-সহ গোটা দেশে আগুন জ্বলছে। আমার কথা মনে রাখবেন। আপনি অনেক জানেন তাই আপনি বিচারপতি হয়েছেন। আমরা জানি না তাই আইনজীবীরকাজ করছি।’’
তরজা এখানে থামেনি। বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনাকে সঠিক ভাবে সওয়াল করতে হবে।’’ মহেশ বলেন, ‘‘আমি আমার মতো করেই সওয়াল করব। সীমা লঙ্ঘন করবেন না। আমি ৪০ বছর ধরে আইনজীবীর কাজ করছি।’’ এর পরে বিচারপতি বলেন, ‘‘প্রধান বিচারপতিকে বলব আমার রস্টার বদলে দিতে।’’ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান-সহ কয়েক জন আইনজীবী পরিস্থিতি সামলাতে হস্তক্ষেপ করেন।
গত কাল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি তারলোক সিংহ চৌহানের নেতৃত্বাধীন ফুল বেঞ্চে তলব করা হয় মহেশ তিওয়ারিকে। ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বেঞ্চকে জানান, ‘‘আমি সুস্থ মস্তিষ্কেই যা বলার বলেছি ও যা করার করেছি।’’ এর পরে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় বেঞ্চ। ১১ নভেম্বর মামলার শুনানি হবে।
মহেশকে সমর্থন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় ঘোষ। তাঁর মতে, ‘‘আইনজীবী এক স্বামীহারা মহিলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিরুদ্ধে মর্যাদার সঙ্গেই সওয়াল করছিলেন। আর বিচারপতি বারবার বলছিলেন আমি আইনের আদালত! ন্যায় দেওয়ার আদালত নই!আমি আইনজীবীকে সমর্থন করছি।’’ মিজ়োরামের এজি বিশ্বজিৎ দেবের মতে, ‘‘বার ও বেঞ্চের মধ্যে তরজা এমন পর্যায়ে পৌঁছনোর কথা কল্পনাও করা যায় না। এমন ঘটনা এড়াতে বার ও বেঞ্চ, দু’পক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে।’’
সংবাদ সংস্থা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)