লাদাখে সেনা তৎপরতা— ফাইল চিত্র।
আড়াই মাসেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে বিলকুল। তাই ১৯৬২-র যুদ্ধের উদাহরণ তুলে ধরে ভারতকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার হুমকি ছেড়ে চিন এখন নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে ‘সমঝোতা ভেঙে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা’ (এলএসি) লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে! প্যাংগং লেকের দক্ষিণে চিনা বাহিনীকে হটিয়ে ‘অবস্থান’ মজবুত করার পরে ভারতীয় সেনা আলোচনার টেবিলে দর কষাকষিতে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গিয়েছে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
সেনা সূত্রের খবর, শনিবার রাত এবং রবিবার সকালে দফায় দফায় সংঘর্ষের পরে দু’তরফে আলোচনা শুরু হলেও এখনও উত্তেজনা রয়েছে প্রবল। পিপলস লিবাবেশন আর্মি বিতর্কিত এলাকায় আর্মার্ড রেজিমেন্ট মোতায়েন করায় একই পদক্ষেপ করেছে ভারতীয় সেনাও। বেশ কিছু এলাকায় দু’দেশের ট্যাঙ্ক বাহিনী পরস্পরের নিশানায় রয়েছে। প্যাংগং পরিস্থিতি পর্যালোচানার জন্য মঙ্গলবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান এম এম নরভণে বৈঠকে হাজির ছিলেন।
এই আবহে মঙ্গলবার নয়াদিল্লির চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র জি রং বলেন, ‘‘চিনে সেনা সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আমরা চাই, ভারতীয় সেনা উস্কানিমূলক আচরণ বন্ধ করুক এবং বৈঠকে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করুক। ভারতীয় সেনা এলএসি লঙ্ঘন করার ফলেই এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।’’ অন্য দিকে, চিনের বিদেশমন্ত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই একটি ফরাসি প্রতিষ্ঠান আয়োজিত বিদেশনীতি সংক্রান্ত আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সংক্রান্ত বিবাদ মেটাতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করা হবে না।"
সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানাচ্ছে, সোমবার চুশুলে ব্রিগেডিয়ার স্তরের বৈঠকেও চিনের তরফে সেনা পিছনোর দাবি তোলা হয়েছে। কিন্তু কেন এমন দাবি? ওই সূত্রের জবাব, ২৯ অগস্ট রাতে সমঝোতা সূত্র ভেঙে প্যাংগং লেকের দক্ষিণে ভারতীয় এলাকায় ঢুকতে গিয়ে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হটে লাল ফৌজ। সেই সুযোগে, চুশুল থেকে কয়েকটি দিকে চিন নিয়ন্ত্রিত এলাকার অন্দরে বেশ কয়েক কিলোমিটার ঢুকে পড়েছে ভারতীয় সেনা। কালা টপের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ‘স্ট্র্যাটেজিক পজিশন’-সহ বেশ কিছু উঁচু গিরিশিরা এখন ভারতীয় সেনার দখলে। ফলে সুবিধাজনক অবস্থান থেকে সম্ভাব্য চিনা হামলার মোকাবিলা করা সম্ভব। আর সে কারণে চিন্তা বেড়েছে চিনের।
আলোচনার টেবিলেও এই প্যাংগংয়ের এই ‘অবস্থান’ ভারতকে বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে সেনা ও কূটনৈতিক স্তরের একাধিক আলোচনার পরেও ভারতীয় এলাকাগুলি থেকে পুরোপুরি সরেনি চিন। এই পরিস্থিতিতে দর কষাকষির ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে প্যাংগংয়ের ঘটনা।
আরও পড়ুন: বকেয়া মেটাতে টেলিকম সংস্থাগুলিকে ১০ বছর সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট
শুধু তাই নয়, প্যাংগংয়ের দক্ষিণে উঁচু এলাকায় অবস্থান নেওয়ার পরে চিনা ফৌজের ‘প্রস্তুতি’র উপরেও নজরদারিতে সুবিধা হয়েছে বলে একটি সূত্রের খবর। কালা টপের কাছে চিনা ট্যাঙ্ক এবং অদূরের স্পাংগুর লেক ঘেঁষা গিরিপথের কাছে লাল ফৌজের রাস্তা বানানোর তৎপরতাও নজরে এসেছে ইতিমধ্যেই। দ্রুত সাঁজোয়া গাড়ি ও সামরিক যানবাহন যাতায়াতের উদ্দেশ্যেই ওই রাস্তা বানানো হচ্ছে। মে মাসের গোড়ায় গলওয়ান, গোগরা, হট স্প্রিংয়ের পাশাপাশি প্যাংগং লেকের উত্তরে বেশ কিছু ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়েছিল চিনা সেনা। সীমানা নির্দেশক ফিঙ্গার এরিয়া-৮ থেকে কয়েক কিলোমিটার ঢুকে ফিঙ্গার এরিয়া-৪-এ চলে আসে তারা। পরে আলোচনার প্রেক্ষিতে ‘বাফার এরিয়া’ তৈরি করতে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও এখনও তারা এলএসি থেকে পুরোপুরি পিছু হটেনি বলে খবর।
আরও পড়ুন: কীর্ণাহার থেকে রাইসিনা: চাণক্যের চড়াই-উৎরাই যাত্রাপথ
’৬২-র যুদ্ধের পরে এই প্রথম ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে এলএসি অতিক্রম করে চিনা এলাকা দখলের অভিযোগ তুলেছে বেজিং। লাদাখের সাম্প্রতিক ঘটনাপর্বের আবহে এই ‘উলটপুরাণ’ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন। ’৬২-তে প্যাংগং লেকের দক্ষিণের এই এলাকায় হামলা চালিয়েছিল চিনা সেনা। পরিণামে হয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এ বার তাই বাড়তি সতর্ক ভারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy