রবিবার বেজিংয়ে মহাযজ্ঞ। আঠাশটি দেশকে নিয়ে চিনের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন— ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবিওআর) প্রকল্পের প্রথম মেগা সম্মেলন হতে চলেছে সেখানে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সড়ক ও জলপথে পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরেশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক ভাবে পৌঁছে যাবে ড্রাগন। এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত ভারতও। কিন্তু বেজিংয়ের এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করা উচিত হবে কি না, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে কালঘাম ছুটছে সাউথ ব্লকের। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল ওয়াগলে আজ বলেন, ‘‘এই নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’’ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, তা সব দিক থেকেই ভারতের কাছে তা বিপর্যয়ের সামিল।
আরও পড়ুন: আদালতের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর করতে চান মোদী
কী কারণে?
কারণ এক: এই প্রকল্পের অন্তর্গত প্রস্তাবিত চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দিয়ে। বিভিন্ন স্তরে এই নিয়ে প্রতিবাদ এবং ক্ষোভ জানিয়েছে ভারত। পাত্তা দেয়নি চিন। বরং পরামর্শ দিয়েছে, ভারতের যখন এতই আপত্তি, তবে প্রকল্পটির নাম বদলে চিন-দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক করিডর হোক! ভারত জানিয়েছে, সমস্যা নাম নিয়ে নয়। কাশ্মীরের ওই অংশ ভারতেরই অঙ্গ, যা জোর করে ধরে রেখেছে পাকিস্তান। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘ওই অংশ দিয়ে অর্থনৈতিক করিডর হলে কাশ্মীরে সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রকল্প শুরু করবে চিন। যা ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’
কারণ দুই: ওবিওআর প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, এক ধাক্কায় চিনের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে প্রতিবেশী বলয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়াস এতে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। ভারতের চোখের সামনে চিনের পুঁজি, প্রযুক্তির বাণিজ্যিক প্রভাব বাড়বে। চিনা সহযোগিতায় ভারতকে ঘিরে গড়ে উঠবে বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, নতুন বন্দর। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চিন ওবিওআর প্রকল্পকে ‘শুধুই সংযোগ বাড়ানো বিসেবে দেখাতে চাইলেও ভারতের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ভারতের রক্তচাপ বাড়িয়ে বালুচিস্তানের গ্বাদর বন্দরে সামরিক ঘাঁটি বানানোর প্রয়াস দীর্ঘ দিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে চিন।
আপাতত এই চিনা ঝড় ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছে ভারত। সূত্রের খবর, জাপানের মতো কিছু দেশকে সঙ্গে নিয়ে উপমহাদেশে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানো, চিন সীমান্তে পরিকাঠমো উন্নয়ন, উপকূলে ঘাঁটি পোক্ত করার মতো বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy