E-Paper

সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরানোর গরজ বেজিং-দিল্লির

দ্বিপাক্ষিক উষ্ণতার বহর বোঝাতে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত আজ আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধে সম্পূর্ণ ভাবে ভারতের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছেন।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৪৭
(বাঁ দিকে) ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এবং এস জয়শঙ্কর (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এবং এস জয়শঙ্কর (ডান দিকে)।

চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র দু’দিনের নয়াদিল্লি সফরের পরে দু’দেশের বিবৃতিতে চোখে পড়ছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে স্বাভাবিকতা আনার গরজ কারও কম নয়। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, যদিও এই ‘স্বাভাবিকত্ব’ নয়াদিল্লির কাছে এক রকম, বেজিংয়ের কাছে অন্য। সব মিলিয়ে কূটনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, আমেরিকা-বিরোধী এই ভারত-চিন অক্ষ কতটা টেকসই হবে? আজ বাদে কাল যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শি জিনপিং-এর শর্ত মেনে সরাসরি বেজিংকে ‘জি-২’ বাণিজ্য অক্ষের প্রস্তাব দেন, ভারতকে তখন আর কতটা প্রয়োজন থাকবেশি সরকারের?

তবে দ্বিপাক্ষিক উষ্ণতার বহর বোঝাতে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত আজ আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধে সম্পূর্ণ ভাবে ভারতের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছেন। অন্য দিকে গত কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে চিনা বাণিজ্যকর্তা এবং পেশাদারদের জন্য ভিসা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে নয়াদিল্লি। এর ফলে চিনের বহু সংস্থা এবং তার পেশাদার কর্মীরা ভারতে আসতে পারবেন। চিনের বহু প্রকল্পের যন্ত্রাংশ (পাহাড় খোঁড়ার মতো প্রকল্প-সহ) ভারতে এসে পড়ে রয়েছে, শুধু মাত্র সে দেশের প্রশিক্ষিতেরা আসতে না পারার জন্য।

আপাতত চিনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ‘স্বাভাবিকত্ব’ হল, যেনতেন প্রকারেণ টুকরো টুকরো করে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ‘ফসল কাটা’, অর্থাৎ নিজেদের সুবিধাজনক সেক্টরে সীমান্ত দাগিয়ে নেওয়া। আর তার পরেই ঝাঁপানো ভারতের বিরাট বাজারে। বৃহত্তর ভূকৌশলগত লড়াইয়ে ভারতকে সঙ্গে পাওয়াও চিনের লক্ষ্য। ভারতকে এই মুহূর্তে খুশি না রাখতে পারলে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির যে শুল্ক-ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, আমেরিকার বিরুদ্ধে বৃহৎ কৌশলে তাকে ঘুঁটি হিসাবে কাজে লাগাতে পারবে না বেজিং। অন্য দিকে, ভারতের ক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিকত্বে’র প্রথম এবং প্রধান শর্ত হল, ২০২০ সালের আগে পূর্ব লাদাখে যে স্থিতাবস্থা ছিল, তাকে ফিরে পাওয়া। অর্থাৎ, টহলদারির হৃত এলাকা পুনরুদ্ধার।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিশ্ব ব্যবস্থায় আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে শুধু ভারত নয়, রাশিয়া ও গ্লোবাল সাউথকেও পাশে চাইছে চিন। যদিও ভারত ও চিনের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাবের কথা আলাদা করে চিহ্নিত করছেন কূটনীতিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, চিন ভারতের বাজার ধরতে এবং বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হলেও প্রযুক্তি হস্তান্তরে অনুৎসাহী। ভারত সন্দেহের দৃষ্টিতেই দেখে চিনের ভৌগোলিক সম্প্রসারণবাদকে। আবার চিনও আশঙ্কায় থাকে নয়াদিল্লি কখনও না প্রযুক্তিতে বেজিংয়ের সমকক্ষ হয়ে ওঠে। যদিও চিনের অর্থনীতি ভারতের প্রায় দশগুণ বড়, তবুও এই ভরসার অভাব দু’দিকেই রয়েছে।

তবে আপাতত উভয় পক্ষই সম্পর্কে অগ্রগতির পথে জোর কদমে হাঁটছে আমেরিকার বিরোধিতা করে। এই আবহেই ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত শু ফিহং আজ জানিয়েছেন, “শুল্কমুক্ত বাণিজ্যে বহু কাল ধরে লাভবান হয়ে আসছে আমেরিকা। এখন তারাই আবার শুল্ককে হাতিয়ারে পরিণত করেছে। একাধিক দেশের কাছ থেকে অত্যধিক শুল্ক দাবি করছে। ভারতের উপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে আরও চাপানোর হুমকিও দিয়েছে। এতে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে চিন। এই ধরনের আচরণ দেখে চুপ থাকলে, গা জোয়রি করার সাহস আরও বেড়ে যাবে। বহুমুখী বাণিজ্য ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের পাশেই থাকবে চিন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India-China Diplomacy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy