পাঁচ বছর পরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মায়ানমারে। ২০২০ সালে সেখানে শেষ বারের ভোটে জয়ী হয়েছিল গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউং সান সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। বছর ঘুরতেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় সে দেশের সেনাবাহিনী। ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন আয়োজিত হবে ভারতের পড়শি দেশে। তবে সু চি-র দল সেই নির্বাচনে যোগ দিতে পারবে না। জুন্টা সরকার এমন নিয়ম এনেছে যে, কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। তবে নিশ্চিত ভাবেই আগামী বছরের মধ্যে মায়ানমারে একটি রাজনৈতিক পালাবদল আসতে চলেছে। ভারত সরকার পড়়শি দেশের এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছে। সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে চিনও।
মায়ানমারে আধিপত্য বিস্তারের জন্য চিনের চেষ্টা দীর্ঘ দিনের। ২০২১ সালেই সু চি-কে বন্দি করে মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করেছিল সেনা। গত চার বছরে দেশটির নানা প্রান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা মাথা তুলেছেন। তাদের জোটের ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং গণতন্ত্রপন্থীদের চাপে নির্বাচন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে জুন্টা। প্রত্যাহার করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। সূত্রের খবর, উত্তর মায়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে চিনের। মূলত চিনের সমর্থনেই বিদ্রোহীদের ক্ষমতা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে চিনের প্রধান লক্ষ্য ‘চিন-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডর’।
আরও পড়ুন:
দক্ষিণ-পূর্ব চিন থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বেজিংয়ের। তাতে সহায় হতে পারে মায়ানমার। ‘চিন-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডর’ সফল ভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশটির মধ্যে বড় বড় সড়ক ও রেলপথ তৈরি হবে চিনের বিনিয়োগে। এই প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু আপাতত কাজ থমকে রয়েছে। অর্থনৈতিক করিডরের কাজ আবার চালু করতে চায় বেজিং। মায়ানমারের রাজনৈতিক পাল্লা কোন দিকে ঝোঁকে, তার উপর চিনের এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে।
মায়ানমারে সক্রিয় ভাবেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে চিন। বেজিংয়ের প্রতিনিধি মায়ানমারে গিয়েছেন। উত্তরের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে একত্রিত হওয়ার বার্তাও দিয়েছে তারা। মায়ানমারের যে কোনও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে পারে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। সে দেশে চিনের আধিপত্য কায়েম হলে ভারতের সমস্যা বাড়বে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। কারণ সে ক্ষেত্রে ভারতের পূর্ব সীমান্তেও ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পেয়ে যাবে বেজিং। পশ্চিমে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা কারও অজানা নয়। কেউ কেউ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিচ্ছেন। তাতে নয়াদিল্লির লাভ হতে পারে। ইতিমধ্যে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি থেকে নেতারা ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সরকারের তরফে আরও সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন।