Advertisement
E-Paper

চোরা পথে দেশে ঢুকে পড়ছে হাজার হাজার কোটি টাকার চিনে বাজি

সারা বছর ধরেই চিন থেকে চোরা পথে ভারতে ঢুকছে আতসবাজি। কোটি কোটি টাকার। কখনও তা ঢুকছে দিল্লির চাঁদনি চক মার্কেটে। কখনও ঢুকছে মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুতে। ভারতে ‘ড্রাগনের দেশ’ থেকে আসা নতুন ‘হানাদার’-এর নাম- চিনে বাজি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৬:৫৮
দিল্লির চাঁদনি চকে আতসবাজির বাজার। -নিজস্ব চিত্র।

দিল্লির চাঁদনি চকে আতসবাজির বাজার। -নিজস্ব চিত্র।

দীপাবলীতে রমরমিয়ে ফাটে। কিন্তু এখন ভোট, ক্রিকেট, ফুটবল এমনকী, বিয়েবাড়িতেও ফাটে, প্রায় হররোজই।

এত ঘন ঘন ফাটানোর জন্য লাগেও প্রচুর পরিমাণে। আর ফাটানোর সময় জবরদস্ত শব্দটারও খুব প্রয়োজন পিলে চমকে দেওয়ার জন্য! পিলে চমকে দেওয়ার ব্যাপারটা যতই অবৈধ হোক। সস্তায় তার জোগান দেওয়ার জন্য প্রায় সারা বছর ধরেই চিন থেকে চোরা পথে ভারতে ঢুকছে আতসবাজি। কোটি কোটি টাকার। কখনও তা ঢুকছে দিল্লির চাঁদনি চক মার্কেটে। কখনও ঢুকছে মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুতে। ভারতে ‘ড্রাগনের দেশ’ থেকে আসা নতুন ‘হানাদার’-এর নাম- চিনে বাজি। যা চিনে বা না চিনে বানের জলের মতো বিকিয়ে যাচ্ছে ভারতের বাজারে।

দামে সস্তা হলেও ‘ড্রাগনের দেশ’ থেকে আসা চিনে বাজির দৌরাত্ম্যে ত্রাহি ত্রাহি রব পড়ে গিয়েছে ভারতের আতসবাজির বাজারে। তামিলনাড়ুর ফায়ারওয়ার্কস অ্যান্ড অ্যামোর্সেস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (‘ট্যানফামা’) সাধারণ সম্পাদক কে মারিয়াপ্পান জানাচ্ছেন, ফি-বছর চিনে বাজির অন্তত হাজার দু’য়েক কন্টেনার ঢুকছে এ দেশে, চোরা পথে। যার দাম কম করে দেড় হাজার কোটি টাকার মতো।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ‘বিস্ফোরক আইন’ মোতাবেক বিদেশি আতসবাজি সঙ্গে রাখা আর তা বেচা-কেনা দণ্ডনীয় হলেও, চোরা পথে ভারতে বেনো জলের মতো হু হু করে ঢুকছে চিনে বাজি। দামে খুব সস্তা বলে তা ভারতের বাজি-বাজারে সহজেই বাজিমাত করে দিচ্ছে। তামিলনাড়ুর শিবকাশিতে ভারতের আতসবাজি নির্মাতারা বহু দিন ধরেই এ ব্যাপারে জোরালো প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। তাঁরা বহু বার সরকারের কাছে নালিশও জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, তাতেও কোনও হেলদোল নেই সরকারের। না তামিলনাড়ু সরকারের, না দিল্লির তখতের। যে যে পথে চিনে বাজি এ দেশে ঢুকছে, বা বিকল্প আর কোন কোন পথে তা ভারতে ঢুকতে পারে, তার ওপর সরকারি স্তরে নজরদারির কোনও ব্যবস্থা অন্তত ভারতীয় আতসবাজি নির্মাতাদের চোখে পড়েছে না বলেই অভিযোগ।

মোটামুটি কোন কোন রুটে চিনে বাজি সিঁদ কেটে ঢুকে পড়ছে ভারতের অন্দরে? স্থলপথে নাকি জলপথে?

‘ট্যানফামা’র সাধারণ সম্পাদক মারিয়াপ্পান জানাচ্ছেন, চোরা পথে চিনে বাজি ঢুকছে মুম্বইয়ের সমুদ্র বন্দর কান্ডলা, নব সেবা, চেন্নাইয়ের বন্দর তুতিকোরিন, আইসিডি তুঘলকাবাদ ও কলকাতা বন্দর দিয়ে। আর সে সব ঢুকছে খেলনাপাতি বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ‘ট্যাগ’ লাগিয়ে। যে সব কন্টেনারে সেগুলি ভারতের বন্দরে ঢুকছে, সেই সব কন্টেনারের ওপর ‘ট্যাগ’ লাগানো থাকে ‘অ্যাডহেসিভ’ (আঠা) বা ‘ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট’। চিনে আঠা বা ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেটেরও যে ব্যাপক চাহিদা ভারতের বাজারে, তারই সুযোগ নিচ্ছে চোরাকারবারিরা।

গত অগস্টে মুম্বইয়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার চিনে বাজি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন ডাইরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের (ডিআরআই) কর্তারা। গত বুধবার ডিআরআই কর্তারা ধারের আইসিডি থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার চিনে বাজি বাজেয়াপ্ত করেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, দীপাবলীর ঠিক আগেই চোরা পথে ভারতের বাজারে চিনে বাজি ঢোকার দামামা বেজে যায়। আর তার পর সারা বছর ধরেই সেটা চলে নানা রুটে। বাণিজ্য মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব শৈলেন্দ্র সিংহও স্বীকার করেছেন চোরা পথে ভারতে চিনে বাজির অনুপ্রবেশের কথা। তাঁর কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে যথাসম্ভব নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্যগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। চিনে বাজি আমদানির জন্য অবৈধ ভাবে লাইসেন্স পাওয়ার পথগুলিকেও দ্রুত বন্ধ করা হচ্ছে।’’ পরিবেশবিদরাও কোমর বেঁধে নেমে পড়ায় শব্দবাজির চাহিদা আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও দিল্লির চাঁদনি চক মার্কেট ঘুরলেই বোঝা যায়, চিনে বাজি এখনও সেখানে কী ভাবে কতটা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর তার ফলে কী ভাবে দিন কে দিন ‘কপাল মন্দা’ যাচ্ছে স্থানীয় আতসবাজি নির্মাতাদের।

ওই বেআইনি চিনে বাজি আমাদের শরীরের পক্ষেও অত্যন্ত ক্ষতিকর। যা অনেকেই জানেন না। দামে সস্তা বলে যারা হই হই করে ওই চিনে বাজি কিনছেন, তাঁরা আদতে ‘বিষ পান’ করছেন বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের।

‘ট্যানফামা’র সাধারণ সম্পাদক মারিয়াপ্পান বলছেন, ‘‘ওই চিনে বাজিগুলিতে মূলত ক্লোরেট ও পারক্লোরেটের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার হয় যথেচ্ছ। আমাদের দেশের জলবায়ুতে ওই রাসনিকগুলি অচল বলে বহু দিন আগেই তাদের ব্যবহার ভারতে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। শিবকাশির মতো (ভারতে আতসবাজির ধাত্রীভূমি) জায়গায় যেখানে অসম্ভব গরম থাকে প্রায় সারা বছরই, সেখানে আতসবাজিতে ক্লোরেট ও পারক্লোরেটের মতো রাসায়নিকের ব্যবহার প্রাণহানিও ঘটাতে পারে।’’

ভারতে সাধারণত, কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে বানানো হয় আতসবাজি?

মারিয়াপ্পানের কথায়, ‘‘ভারতে আতসবাজি বানানো হয় মূলত পটাশিয়াম নাইট্রেট ও অ্যালুমিনিয়াম পাউডার দিয়ে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক কম ক্ষতিকারক।’’

আর কী কী বেনিয়ম রয়েছে চিনে বাজিতে?

মারিয়াপ্পান জানাচ্ছেন, ২০০৮ সালের ‘বিস্ফোরক আইন’ এবং ১৯৮৬ সালের ‘এনভায়রনমেন্ট (প্রোটেকশন) রুল্‌স’-এ শব্দবাজির ক্ষেত্রে শব্দ-মাত্রার যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, চিনে বাজি তার কোনও পরোয়াই করছে না।

আরও পড়ুন- ১২ ঘণ্টারও কম সময়ে দিল্লি থেকে মুম্বই পৌঁছল ট্যালগো ট্রেন

China To Chandni Chwak Illegal Crackers' Trade Dangerous and illegal Chinese crackers flooding markets
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy